চুয়াডাঙ্গায় আবাসিক হোটেলকক্ষ থেকে নারীর বিবস্ত্র লাশ উদ্ধার : পুরুষসঙ্গী পলাতক

ঢাকা গাজীপুরের ঠিকানা ব্যবহার করে স্বামী-স্ত্রীয় পরিচয়ে হোটেল তরুণ-তরুণীর কয়েকদিন ধরে অবস্থান

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ম্যানেজারসহ ৩ জনকে আটক : রহস্য উন্মোচনে মাঠে নেমেছে পুলিশ
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা শহরের একটি আবাসিক হোটেল থেকে এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে সদর থানা পুলিশ আবাসিক হোটেলের একটি কক্ষের তালা ভেঙে তার লাশ উদ্ধার করে। তার সাথে হোটেলে স্বামী পরিচয়ে থাকা পুরষসঙ্গী আনোয়ার হোসেন পলাতক রয়েছেন। এ ঘটনায় হোটেল মালিক রঞ্জু জোয়ার্দ্দার, ম্যানেজার আনিসুর রহমান ও শাহীন আলীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার এসআই নাজমুল হক বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পলাতক পুরুষসঙ্গীকে খুঁজছে পুলিশ। তাকে আটক করতে পারলেই প্রকৃত ঘটনা উদঘটন হবে।
পুলিশসূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের পৌরভবনের পার্শ্ববর্তী ‘চুয়াডাঙ্গা আবাসিক হোটেল’ নামক একটি আবাসিক হোটেলে ২১ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৯টায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ২০৪ নম্বর কক্ষে ওঠেন তরুণ-তরুণী। হোটেলের রেজিস্ট্রারের তথ্য দেন স্বামী আনোয়ার হোসেন ও স্ত্রী ফরিদা খাতুন (২২), গাজীপুর, ঢাকা। কয়েকদিন তারা ওই হোটেলেই ছিলেন। গত সোমবার রাত ৯টা পর্যন্ত হোটেলেই অবস্থান করেন স্বামী পরিচয়দানকারী আনোয়ার হোসেন। এরপর তাকে আর দেখা যায়নি। বাইরে থেকে তরুণীকে তালাবদ্ধ করে চলে যান আনোয়ার হোসেন। গতকাল সোমবার সকাল ৯টা পার হয়ে গেলেও আনোয়ার হোসেন না ফেরায় হোটেল কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেয়। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. দেলোয়ার হোসেন খাঁন জানান, হোটেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে খবর পেয়ে বেলা ১১টার দিকে পুলিশ হোটেলকক্ষ থেকে তরুণীর লাশ উদ্ধার করে। তিনি জানান, হোটেল রেজিস্ট্রারে আনোয়ার হোসেন ও ফরিদা খাতুন স্বামী-স্ত্রী পরিচয় লিপিবদ্ধ আছে। গত রোববার রাত ৯টা পর্যন্ত স্বামী আনোয়ার হোসেনকে হোটেলের সামনে দেখা গেছে। রাতে ফরিদা খাতুন তার রুমে একা ছিলেন। বাইরে থেকে রুম তালাবদ্ধ ছিলো। স্বামী পরিচয় দেয়া আনোয়ার হোসেন রুমে তালা লাগিয়ে চাবি নিয়ে চলে যান। পুলিশ জানায়, ‘তরুণীর লাশ উদ্ধারের সময় অনেকটা বিবস্ত্র অবস্থায় পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে বিষাক্ত দ্রব্য খাইয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। তবে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।’ আজ লাশের ময়নাতদন্ত করা হবে। পরিচয় না পাওয়া গেলে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের সদস্যদের মাধ্যমে দাফন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গা আবাসিক হোটেলের স্বত্বাধিকারী রঞ্জু জোয়ার্দ্দার জানান, গত ২১ ফেব্রুয়ারি আনোয়ার হোসেন ও ফরিদা খাতুন নিজেদের স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে আমার হোটেলের ২০৪ নম্বর রুম ভাড়া নেন। এ সময় আনোয়ার বলেন, সে চুয়াডাঙ্গার তালতলা-হাজরাহাটি এলাকায় চুক্তিতে ভবন নির্মাণ কাজ করছে। তার বাড়ি গাজীপুরে। রুম ভাড়া নেয়ার পর থেকে তারা ওই রুমেই রাত্রিযাপন করে আসছিলেন। আর মাঝে মধ্যে টাউন ফুটবলমাঠে অনুষ্ঠিত মেলাসহ শহরের বিভিন্নস্থানে ঘুরতেন। সর্বশেষ গত রোববার রাত ৯টার দিকে হোটেলের আশপাশের দোকানিরা হোটেলে খাওয়া-দাওয়া করতে দেখেছে, তারপর থেকে আর তাকে দেখা যায়নি। রঞ্জু আরও বলেন, আমার হোটেলের কর্মচারী রাত ১২টার দিকে হোটেলের রুমগুলোতে বর্ডার ঠিকমত আছে কি-না দেখার জন্য ২০৪ নম্বর রুমের সামনে গেলে দেখতে পায় রুমের বাইরে থেকে তালাবদ্ধ। ভেতরে ফরিদা নামে পরিচয় দেয়া তরুণী রয়েছে। এ সময় জানালা দিয়ে দেখা যায় তরুণীর শুয়ে থাকাটাও অস্বাভাবিক। এ সময় তাকে বাইরে থেকে ডাকাডাকি করলেও ভেতর থেকে কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে থানায় ফোন করা হয়। থানা থেকে বলা হয় রাত পার হোক সকালে দেখা যাবে। সকাল ৯টার দিকে ২০৪ নম্বর রুমের সামনে গেলে দেখা যায় তরুণীর মুখ দিয়ে লালা বের হচ্ছে। তখন তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশে খবর দেয়া হয়। হোটেল মালিক আরও জানান, আনোয়ার নামে পরিচয় দেয়া ওই ব্যক্তির সাথে কাজের সূত্র ধরে বড়বাজার নিচের বাজারের নৈশপ্রহরী তালতলা কুঠিপাড়ার জালালের পরিচয় আছে। জালালের সাথে কথা বললেই হয়তো আনোয়ারের সম্পর্কে তথ্য জানা যেতে পারে।