চুয়াডাঙ্গাসহ সারাদেশে রেলপথে ব্যাপক নাশকতা : বিপর্যস্ত ট্রেন চলাচল

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: ১৮ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিন দেশের বিভিন্নস্থানে রেলপথে ব্যাপক নাশকতা হয়েছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে সারাদেশে ট্রেন চলাচল। বিভিন্ন স্থানে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনে আগুন ও বগি লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপের মতো ঘটনা ঘটেছে। গতরাত ১২টার দিকে খুলনাগামী রকেট এক্সপ্রেসে চুয়াডাঙ্গার উথলী স্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ইঞ্জিনে আগুন ধরিয়ে দেয়া হলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় আগুন নেভানোর পর ট্রেনটি খুলনার উদ্দেশে রওনা হয়।

ফিশ প্লেট খুলে ফেলায় নেত্রকোনায় হাওর এক্সপ্রেসের ৫টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। চট্টগ্রামের সাথে দেশের অন্যান্য জেলার রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাজার হাজার ট্রেনযাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম হতে কোনো ট্রেন ছেড়ে যায়নি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেলে আগুন ও লাইন উপড়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। দক্ষিণ-পশ্চিমজোনের অধিকাংশ ট্রেন চলাচল করলেও কোনটিরই সময়সূচি ঠিক ছিলো না। ৪/৫ ঘণ্টা বিলম্বে চলেছে। চট্টগ্রাম রুটে ২৩টি ট্রেনের চলাচল বন্ধ ছিলো। ভোর সকালে দূর-দূরান্ত থেকে যাত্রীরা স্টেশনে এসে ট্রেন চলাচল বন্ধ দেখে হতাশ হয়ে যায়। নেত্রকোনায় দুর্বৃত্তরা শ্যামগঞ্জ আউটার সিগনালের কাছে রেলের ফিসপ্লেট ও ক্লিপ খুলে ফেললে ঢাকা থেকে মোহনগঞ্জগামী হাওর এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনসহ পাঁচটি বগি মঙ্গলবার ভোর পৌনে ৫টায় লাইনচ্যুত হয়। অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পায় কয়েকশ যাত্রী। তারপরও শতাধিক যাত্রী আহত হয়েছে। সোমবার রাতে ঢাকা-কুমিল্লা রেলপথে চলাচলকারী ডেমু ট্রেনে ককটেল ছুঁড়ে মারে দুর্বৃত্তরা। ট্রেনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে দাঁড়ানো অবস্থায় অন্তত তিনটি ককটেল ছুঁড়ে মারে দুর্বৃত্তরা। আতঙ্কে যাত্রীরা ট্রেন থেকে নেমে যে যেদিকে পারে দৌঁড়ে পালায়। সোমবার গভীররাতে কসবার সালদা নদী ও মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনের কাছে রেলওয়ে ব্রিজে আগুন ধরিয়ে দেয় অবরোধকারীরা। গতকাল ভোররাতে ইমামবাড়ি স্টেশনের কাছে রেলপাত উপড়ে ফেলা হয়। পরে মেরামত করে পুনরায় ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এর পর ভোরে আবারো কসবা ও ইমামবাড়ি স্টেশনের মাঝামাঝি স্থানে প্রায় দু কিলোমিটার এলাকায় রেলপাত উপড়ে ফেলা হয়। এর ফলে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। জামালপুরে ১৮ দলের নেতাকর্মীরা গতকাল জেলার বিভিন্ন স্থানে ট্রেন অবরোধ করে রাখে। কুড়িগ্রামে তিস্তা-চিলমারী রেলপথের টেক্সটাইল মোড় এলাকায় রেল লাইনের স্লিপারে আগুন ধরিয়ে দেয় পিকেটাররা। এর ফলে রংপুর-কুড়িগ্রাম রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল রেল স্টেশনের কাছে গতকাল দুপুরে দুটি স্থানে রেল ক্রসিংয়ে আগুন দিলে পুলিশ ও বিজিবি দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলে। গাজীপুরে সকালে ময়মনসিংহগামী মহুয়া এক্সপ্রেস ট্রেনের চালককে ইঞ্জিন থেকে নামিয়ে পিকেটাররা আটকে রাখে। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নেয়। বগুড়া দুপুরে কাহালু রেলওয়ে স্টেশনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। সকাল পৌনে ৭টার দিকে সান্তাহার থেকে বোনারপাড়া অভিমুখি পদ্মরাগ ট্রেনটি আদমদীঘি উপজেলার নসরত্পুর স্টেশনে পৌঁছলে ১৮ দলের নেতা-কর্মীরা ট্রেনের ইঞ্জিন থেকে বগি বিচ্ছিন্ন করতে লোহার দণ্ড খুলে নিয়ে যায়। ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ-ঢাকা রুটে চলাচলকারী আন্তঃনগর সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি পরিষ্কার করার জন্য ঈশ্বরদী জংশনের ওয়াস ফিট এলাকায় রাখা ছিলো। সোমবার রাত ১টা ৫৫ মিনিটের দিকে অবরোধকারীরা ট্রেনের বিভিন্ন বগির জানালার কাঁচ ভেঙে ও দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে দাহ্য পদার্থ দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে ট্রেনের সামনের দিকের একটি বগি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ও শালমারা রেল স্টেশনের মধ্যবর্তী এলাকার ঘুগা নামক স্থানে সোমবার রাত পৌনে তিনটার দিকে করতোয়া আন্তঃনগর ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়েছে। অবরোধকারীরা রেল লাইনের স্লিপার ও দু শতাধিক স্লিপারের পিন উপড়ে ফেলায় এ ঘটনা ঘটে। এতে ট্রেনের একটি বগির ব্যাপক ক্ষতি হয়। যশোরের রূপদিয়ায় রেললাইন অবরোধ করে আগুন দেয় ১৮ দলের নেতা-কর্মীরা। আগুন ও অবরোধের কারণে সেখানে আটকা পড়ে ঢাকাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেন। একইসাথে সিঙ্গিয়া স্টেশনটি বন্ধ করে দেয় অবরোধকারীরা। খুলনা থেকে ছেড়ে আসা এ ট্রেনটি ৯টা ৪০ মিনিটে ওই স্থানে এসে পৌঁছায়। পরে সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ ওই স্থানে গিয়ে অবরোধ তুলে দিলে ট্রেনটি ছেড়ে যায়। সকাল ৮টা ১০ মিনিটে সিঙ্গিয়ায় অবরোধে আটকা পড়ে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা বেনাপোলগামী কমিউটার ট্রেনটি। ২০ মিনিট আটকে থাকার পর সেটি ছেড়ে যেতে সাহায্য করে পুলিশ। পরে অবরোধকারীরা সকাল সোয়া ১০টার দিকে সিঙ্গিয়া স্টেশনে হানা দিয়ে স্টেশনটি বন্ধ করে দেয়। রাজশাহীর চারঘাটের সরদহ রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থানরত উত্তরা এক্সপ্রেসে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা। তবে দ্রুত তা নিভিয়ে ফেলায় কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। হাজীগঞ্জের বলাখালে রেল লাইনে আগুন দিয়েছে ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা।