চুয়াডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় শোকের ছায়া: সর্বজন শ্রদ্ধেয় ইসমাইল স্যারের ইন্তেকাল

 

জান্নাতুল মওলা কবরস্থানে আজ বাদ জুম্মা দাফন

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রবীণ শিক্ষক ইসমাইল হোসেন ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নাইল্লাহি……..রাজেউন)। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চুয়াডাঙ্গা রেজিস্ট্রি অফিস সংলগ্ন মুক্তিপাড়াস্থ নিজ বাড়িতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৮ বছর। আজ শুক্রবার বাদ জুম্মা নামাজে জানাজা শেষে জান্নাতুল মওলা কবরস্থানে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হবে।

মরহুম দিদার শেখের ছেলে ইসলমাইল হোসেন ১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৮ সালে গোকুলখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। ১৯৬০ সালে তিনি চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। দীর্ঘ ২৪ বছর ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সুনাম ও দক্ষতার সাথে শিক্ষকতা শেষে ১৯৮৪ সালের ১ জুলাই অবসর গ্রহণ করেন। এরপরও তিনি শিক্ষকতা ছাড়েননি। ১৯৮৫ সালে তিনি প্রদীপন বিদ্যাপীঠের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর স্বেচ্ছা অবসর নেন। বার্ধক্যজনিত নানা রোগেই ভুগছিলেন তিনি। কিডনিতেও সমস্যা ছিলো। পরিবারের সদস্যরা এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢুলে পড়েন।

ইসমাইল স্যার আর নেই। তিনি না ফেরার দেশে চলে গেছেন। এ খবর চুয়াডাঙ্গাসহ আশেপাশে ছড়িয়ে পড়লে শোকের ছায়া নেমে আসে। দূর-দূরান্ত থেকে এক সময়ের ছাত্ররা প্রিয় স্যারকে শেষবারের মতো দেখতে ছুটে আসেন মরহুমের বাড়িতে। অনেকেই শোক প্রকাশ করেন। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমিতি নেতৃবৃন্দও মরহুমকে দেখতে ছুটে যান।

শিক্ষক ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী আগেই গত হয়েছেন। তার দু মেয়ের মধ্যে ফেরদৌসী খাতুন মিনুও পরপারে। তিনি ছিলেন চুয়াডাঙ্গার বিশিষ্ট আইনজীবী ও সমাজসেবক হাজি অ্যাড. সেলিম উদ্দীন খানের স্ত্রী। স্ত্রী ও বড় মেয়েকে হারিয়ে শিক্ষক ইসমাইল হোসেন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। কয়েক বছরের মধ্যে তিনিও ইন্তেকাল করলেন। ইসমাইল হোসেনের বড় ছেলে অ্যাড. ইফতেখার হোসেন খোকন। তিনি আইনজীবী পেশায় আছেন। মেজ ছেলে ইমতিয়াজ হোসেন জিপু কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ডিজিএম পদে কর্মরত। তৃতীয় তথা সেজ জহুরুল ইসলাম কচি প্রকৌশলী। ছোট ছেলে শফিকুল ইসলাম লাল্টু চিকিৎসক। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে কর্মরত। ছোট মেয়ে রওশন আরা বেবীর স্বামী রেজাউল কবির কেসি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক।

ইসমাইল হোসেন শিক্ষক হিসেবে যেমন ছিলেন দক্ষ তেমনই জীবনের শেষ দিনগুলোতে ছিলেন ধার্মিক। তিনি বায়তুল মামুর জামে মসিজদ কমিটির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ইসমাইল হোসেনের রয়েছে অসংখ্য ভক্ত অনুরাগী। তিনি সকলকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন। রেখে গেলেন তার কীর্তিময় জীবন স্মৃতি।

শিক্ষাবিদ ইসমাইল হোসেনের আকস্মিক মৃত্যুতে চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, প্রেসক্লাব সভাপতি মাহতাব উদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক সরদার আল আমিন, সাংবাদিক সমিতি সভাপতি অ্যাড. শরিফ উদ্দীন হাসু ও সাধারণ সম্পাদক শাহার আলী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা তৌহিদ হোসেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এম.এম. শাহজাহান মুকুল ও সাধারণ সম্পাদক শামীম রেজা ডালিম, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সেক্রেটারি মো. ফজলুর রহমান, নবনির্বাচিত চুয়াডাঙ্গা জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার মো. আবু হোসেন ও সহকারী ইউনিট কমান্ডার (সাংগঠনিক) মো. আতিয়ার রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক,সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা শোক প্রকাশ করেছেন। মাথাভাঙ্গা পরিবার প্রবীণ শিক্ষক ইসমাইল হোসেনের মৃত্যুতে গভীরভাবে শোক প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি জানিয়েছে গভীর সমবেদনা। একই সাথে মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়েছে। শিক্ষক ইসলমাইল হোসেন ছিলেন দৈনিক মাথাভাঙ্গা সম্পাদক সরদার আল আমিনের অন্যতম শিক্ষক।