চুয়াডাঙ্গার শতবর্ষী স্কুলটির বেহাল দশা

 

স্টাফ রিপোর্টার: শত বছর হতে চললেও বেহাল দশা কাটেনি চুয়াডাঙ্গার প্রথম প্রাথমিক স্কুলের। একই রুমে এক সাথে চলছে একাধিক শ্রেণির ক্লাস। আর রাস্তার ওপর অ্যাসেমব্লির সময় শিক্ষার্থীদের ভেতর দিয়ে চলাচল করে সাইকেল-মোটরসাইকেলসহ লোকজন। বর্তমানে স্কুলটির নাম চুয়াডাঙ্গা ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হলেও এলাকায় কালিপদ স্কুল নামে পরিচিত।

১৯২১ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জনৈক কালিপদ। এটিই এ তল্লাটের প্রথম স্কুল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৭৩ সালে সরকারি হওয়া এ স্কুলে এখন শিক্ষার্থী ১৭০ জন, শ্রেণিকক্ষ তিনটি। একই রুমে প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রথম শ্রেণির ক্লাস হওয়ায় পড়ায় মন দিতে না পারার অভিযোগ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। সহকারী শিক্ষক রওশন আরা বলেন, যখন শিশুশ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন খেলনা দিয়ে পড়ানো হয় তখন প্রথম শ্রেণির শিশুরা এ দিকে খেয়াল করে। আবার যখন ওদের পড়ানো হয় তখন এরা ওইদিকে খেয়াল করে। এটাই বেশি সমস্যা। শিশুশ্রেণির পড়ুয়া কুয়াশা জানায়, একই সাথে দুটো ক্লাস হওয়ায় তারা শিক্ষকের কথা ঠিকমতো শুনতে পারে না এবং পড়া বুঝতেও পারে না। ঐতিহ্যবাহী এ স্কুল অবহেলিত থাকায় এলাকাবাসীর বেশ আক্ষেপ রয়েছে। এলাকাবাসী তাহের আলী বলেন, ১৯২১ সালে কালিপদ বাবু এ স্কুলটি নিজের উদ্যোগে তৈরি করেন। সে সময় এ জেলায় আর কোনো প্রাইমারি স্কুল ছিলো না। পুরোনো আমলের আরেক সাক্ষী জীবন দাশ বলেন, আমরা এ স্কুলে পড়েছি, আমার ছেলে-মেয়েও পড়েছে। সময় পার হয়েছে কিন্তু কালিপদ স্কুলের কোনো উন্নতি হয়নি। তারা জানান, স্কুলটি আগে কালিপদর বাড়িতে দুটি রুম নিয়ে চলতো। দেশভাগের পর তিনি ভারতে চলে গেলে জায়গাটি হাতছাড়া হয়ে যায়। ওই জায়গাটি কিনেছেন বলে দাবি করে এক ব্যক্তি তার দখল নেন। স্কুলের জায়গা কীভাবে বিক্রি হলো এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বর্তমান জায়গাটি স্কুলকে কিনে দেয়া হয়। স্কুলের বর্তমান জমির পরিমাণ দশমিক ০৪১৯ শতাংশ। সব শিশুই এখন সুন্দর বাড়ি থেকে আসে, তাই এ স্কুলে এসে তাদের ভাল লাগে না বলে মন্তব্য করেন সহকারী শিক্ষক শামসুন্নাহার। অনেকে ভর্তি হলেও পরে আর থাকে না বলে জানান তিনি। স্কুলটির উন্নতি হচ্ছে না কেন জানতে মুখোমুখি হই স্কুলের প্রধানশিক্ষক চাঁদ সুলতানার। তিনি জানান, ২০১০ সালে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা সরকার দেয়, যা দিয়ে কিছু মেরামত করা হয়েছে। এছাড়া টয়লেট সারানোর জন্য ১৫ হাজার টাকা পেয়েছিলেন।

তাদের কথায় বেরিয়ে আসে- স্বাধীনতার পরে স্কুলটি পাকা করা হলেও আর কোনো সংস্কার হয়নি। একটি রুমকে ভাগ করে বানানো হয়েছে অফিস রুম। সেখানে পাঁচটি চেয়ার রাখা যায়। তাই অফিসের আলমারি, গুরুত্বপূর্ণ ফাইলপত্র রাখা হয় ক্লাসরুমেই। স্কুলের ১৭৫ শিশুসহ সবার পানির চাহিদা মেটায় মাত্র একটি ট্যাপ (কল)। স্কুলটির উন্নয়নে সরকারের পরিকল্পনা আছে-কিনা জানতে চাইলে প্রাথমিক জেলা শিক্ষা অফিসার রমেন্দ্রনাথ পোদ্দার জানান, ভবনটা পুনর্নির্মাণের জন্য এলজিইডি অফিসে আবেদন করা হয়েছে।