চুয়াডাঙ্গার তিতুদহে কর্মসৃজন প্রকল্পে তিন সপ্তার কাজ করেও টাকা পাননি শ্রমিকরা : শ্রমিকদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ?

 

বেগমপুর প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের কর্মসৃজন প্রকল্পে (৪০ দিনের কর্মসূচি) তিন সপ্তার কাজ করেও টাকা পাননি শ্রমিকরা। কাজ করে টাকা না পাওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। উপজেলা প্রকল্পবাস্তবায়ন কর্মকর্তার অনিহার কারণেই না কী তাদের মজুরির টাকা পাননি এমনি অভিযোগ শ্রমিকদের? মজুরির টাকা না পেয়ে অনেক শ্রমিক মানবেতের জীবনযাপন করছেন।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে গত ৪ ফেব্রুয়ারি কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এ কর্মসূচির আওতায় উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নে ১২টি প্রকল্পে ২৬৫ জন শ্রমিক ২শ টাকা হাজিরায় কাজ করার সুযোগ পায়। আর এ কাজের টাকা স্ব-স্ব শ্রমিক নিজের একাউন্ট থেকে উত্তোলন করতে পারবে। সে মোতাবেক তিতুদহ ইউনিয়নের শ্রমিকরা ১০ টাকার অ্যাকাউন্ট খোলে সরোজগঞ্জের রূপালী ব্যাংক শাখায়। অনেক শ্রমিক অভিযোগ করে জানায়, গত তিন সপ্তাহ কাজ করলেও সদর উপজেলা প্রকল্পবাস্তবায়ন কর্মকর্তার সই না হওয়ার কারণে এখন পর্যন্ত কাজের মজুরি পায়নি। বুধবার বিলে সই করার কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তিনি সই করেনি। গতকাল বৃহস্পতিবার সই করলেও বিলের কাগজ বিকেল ৩টায় ব্যাংকে পৌছানোর কারণে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রতি অ্যাকাউন্টে টাকা পোস্টিং দিয়ে তা বিতরণ করার মতো সময় পায়নি। এ কর্মসূচির আওতায় তিতুদহ ইউনিয়নে চলতি বছরে বরাদ্দ এসেছে ২১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

উল্লেখ্য, অতি দরিদ্র মানুষকে সাহায্য করার জন্য সরকার এই কর্মসূচি তৈরি করেছেন। এই কর্মসূচির মাধ্যমে হতদরিদ্র মানুষ ৪০ দিনের কাজ করার সুযোগ পেয়ে থাকে। সাধারণত কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর এই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। এর ফলে দরিদ্র মানুষের অনেক উপকার হয়। কাজ করার ফলে এসব মানুষেরা আবার নতুন করে জীবন শুরু করতে পারে। এই কর্মসংস্থান তাদের আর্থিকভাবে কিছুটা স্বচ্ছল করে তোলে। তাই মন্ত্রণালয়/প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় থেকে উপজেলায় বরাদ্দ প্রাপ্তির পর ইউএনও কর্তৃক জনসংখ্যা ও আয়তনের ভিত্তিতে ইউনিয়নওয়ারী বরাদ্দ বিভাজনপূর্বক ইউনিয়ন পরিষদে প্রেরণ করা হয়। ইউপি কর্তৃক বরাদ্দ অনুযায়ী শ্রমিক এবং ওয়েজ ও নন-ওয়েজ কর্মের প্রকল্প তালিকা প্রস্তুত করে উপজেলা কমিটিতে প্রেরণ করা হয়। জেলা কর্ণধার কমিটির চূড়ান্ত অনুমোদনের পর শ্রমিকদের জব কার্ড এবং প্রকল্পের সাইনবোর্ড প্রস্তুত করা হয়। মন্ত্রণালয়/প্রকল্প পরিচালক কর্তৃক প্রদত্ত বরাদ্দের আলোকে বিল প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্টে (মাদার অ্যাকাউন্ট) অর্থ জমা করা হয়। শ্রমিক তালিকা অনুযায়ী ইউনিয়নওয়ারী শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধের জন্য ব্যাংকের শাখা নির্বাচন করে প্রত্যেক শ্রমিকের নামে ব্যাংক হিসাব খোলা হয় এবং মাদার অ্যাকাউন্ট থেকে নির্ধারিত ব্যাংকের শাখায় (চাইল্ড অ্যাকাউন্ট) টাকা স্থানান্তর করা হয়। প্রকল্প তদারকির জন্য উপজেলা কর্মকর্তাদের ইউনিয়নওয়ারী ট্যাগ অফিসার হিসেবে নিয়োগ করে প্রকল্পস্থলে সাইনবোর্ড স্থাপনপূর্বক প্রকল্পের কাজ আরম্ভ করা হয়। নন-ওয়েজ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট পিআইসি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। ওয়েজ কস্টের (টাকা) জন্য প্রতি সপ্তা ফিল্ড সুপারভাইজার ও ট্যাগ অফিসারের প্রত্যয়নের ভিত্তিতে অগ্রগতি অনুযায়ী শ্রমিক মজুরি ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। তিতুদহ ইউনিয়নের কাজ দেখভাল করার জন্য সুপারভাইজার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলী (ত্রাণ) আমিনুল ইসলামকে।

তিতুদহ ইউপি চেয়ারম্যান আকতার হোসেন বলেন, গত তিন সপ্তা কাজ করে তাদের শ্রমিকের টাকা পাননি শ্রমিকরা। বুধবারের দিন বিলে সই করার কথা ছিলো সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হাজি মিজানুর রহমানের। তিনি কী কারণে সই করেননি সেটা আমার জানা নেই। তবে গতকাল সই করলেও সে কাগজ ব্যাংকে আসতে আসতে বিকেল ৩টা বেজে গেছে। যার কারণে শ্রমিকরা টাকা তুলতে পারেনি। এটা শ্রমিকদের কষ্ট দেয়া ছাড়া কিছুই না। প্রকল্পবাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) হাজি মিজানুর রহমান উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সুপারভাইজারের গাফিলতির কারণে এমনটি হয়েছে।

সুপারভাইজার আমিনুল ইসলাম বলেন, আমার কোনো গাফিলতি নেই। সময়মতো কাগজপত্র দফতরে এসছে। স্যারের সইতে বিল হবে আমার সইতে না। তাহলে এখানে আমার কিইবা করার আছে। এদিকে গত তিন সপ্তার কাজের টাকা না পাওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। বিষয়টি তদন্তপূর্বক চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক অভিযুক্তর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এমনটাই দাবি তুলেছেন ভুক্তোভোগী শ্রমিকেরা।