চুয়াডাঙ্গার ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ীরা আন্দোলনে : মাছ কেনা-বেচা বন্ধ

আড়তদারদের কমিশন দিতে নারাজ হয়ে জেলা প্রশাসকের নিকট নালিশ : পাল্টা যুক্তি দেখিয়ে স্মারকলিপি পেশ

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা মাছের আড়তে সকল প্রকার মাছ কেনা-বেচা অনিদিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রয়েছে। গতকাল সকাল ৮টার দিকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা মাছ কেনা বন্ধ করে দেয়ার পর আড়তদারদের পক্ষেও জানিয়ে দেয়া হয়, নতুন করে নির্ধারণ করা কমিশন ব্যতিরেকে কোনো ফোঁড়ের কাছে আর এক ছটাক মাছও বিক্রি নয়। এর ঘণ্টাখানেকের মাথায় ৯টার দিকে ক্ষুদ্র মাছ বিক্রেতাদের তরফে মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, পরবর্তী নিদের্শনা না দেয়া পর্যন্ত কোনো আড়ত থেকে আর মাছ কেনা হবে না।

চুয়াডাঙ্গা মাছের আড়তে মাছ কেনা-বেচার ক্ষেত্রে আড়তদাররা গত ১৮ মার্চ থেকে নতুন হারে কমিশন নির্ধারণ করেছে। এ নিয়ে গত দু দিন আড়তদার ও ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ীদের মধ্যে উত্তেজনা দানা বাধে। তারই বহির্প্রকাশ ঘটে গতকাল মঙ্গলবার সকালে। আড়তদারদের তরফে জানানো হয়, মাছের কেজিপ্রতি বেপারী ও ক্ষেতেলদের নিকট থেকে যেভাবে ৩ টাকা হারে কমিশন নেয়া হয়, তেমনই এখন থেকে ক্রেতা ফোঁড়ে বা খুচরা মাছ বিক্রেতাদের নিকট থেকেও নির্ধারিত হারে কমিশন নেয়া হবে। এ ঘোষণা শোনার পর ক্ষোভ পূঞ্জিভুত হয়। গতকাল যখনই ফোঁড়ে বা ক্ষুদ্র মাছ বিক্রেতাদের নিকট থেকে কমিশন আদায় শুরু হয় তখনই ক্ষোভের বহির্প্রকাশ ঘটে। উত্তেজনা দানা বাধে। মাছ কেনা-বেচা বন্ধ হয়ে যায়। উভয়পক্ষই চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি পেশ করে। বিকেলে সমঝোতার চেষ্টা করা হলেও তা সফল হয়নি। ফলে আজ সকালেও মাছ কেনা-বেচা বন্ধই থাকছে বলে মন্তব্য আড়তদারদের। পক্ষান্তরে ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ীরাও জানিয়েছেন, অতো কমিশন দিয়ে আড়ত থেকে মাছ কেনা হবে না।

চুয়াডাঙ্গা স্টেশনের অদূরেই রয়েছে মাছের আড়তপট্টি। এ আড়তপট্টিতেই চুয়াডাঙ্গা জেলা মৎস্য আড়তদার মালিক সমিতির মূল কার্যক্রম। এ সমিতির সভাপতি স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, আমাদের আড়ত থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলার আশপাশের সকল বাজারের মাছ বিক্রেতাগণ মাছ ক্রয় করে বিক্রি করে। আড়ত থেকে নিলামের মাধ্যমে মাছ খরিদ করে ওরা। আড়তদারদের পুঁজির জোগান দিতে হয়। আড়তদার প্রতি ১০-১৫ লাখ টাকা পুঁজি খাটাতে হয়। অপরদিকে দাদনও দিতে হয় মাছচাষিদের। তাদের মাছ শতভাগ বাকিতে বিক্রি করলেও আড়তদারদের টাকা সাথে সাথেই পরিশোধ করতে হয়। এর মাঝে কিছু ফোঁড়ে আছে যারা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা বা নিকো করে মাছের ন্যায্য দাম না তুলে নিলামে কম দাম তোলে। এ কারণে মাছচাষি ও বেপারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব কারণেই ডিঙ্গেদহ ও সরোজগঞ্জে গড়ে উঠছে মোকাম। চুয়াডাঙ্গার আড়তদারদের ৫টি খাতে কর দিতে হয়। লোকবল খাটাতে হয়। এসব খরচের জন্যই বহুদিন ধরে ৩ টাকা কমিশন ও ওজনে এক হারে পেয়ে থাকে আড়তদার। ২০১২ সালে ফোঁড়েদের নিকট থেকে ২ টাকা হারে কমিশন নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলে তারা আপত্তি তোলেন। আলোচনার প্রেক্ষিতে এক টাকা করে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতেই কিছু ফোঁড়ে হুমকিধামকি দিয়ে মান-সম্মান হানি করেছে।

অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা মাছের আড়তদারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে জেলা প্রশাসকের নিকট নালিশ করেছে চুয়াডাঙ্গা বড় বাজার মৎস্য ব্যবস্যায়ী সমিতি। এ সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আমরা বড় বজার, রেলবাজার ও কেদারগঞ্জ বাজারসহ চুয়াডাঙ্গার প্রত্যন্ত গ্রামের খোলা জায়গায় রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে মাছ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করি। পূর্বঘোষিত কোনো নোটিশ বা কোনো অবগতকরণ ছাড়াই চুয়াডাঙ্গা মাছের আড়তদারগণ গত ১৮ মার্চ শনিবার থেকে হঠাত করে মাছের দাম কেজিপ্রতি ২ টাকা করে কশিন বেশি নেয়া শুরু করে। যা সম্পূর্ণ বেআইনি। আমরা কমিশন বেশি নেয়ার বিষয়ে আড়তদারদের জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন, ২ টাকা বেশি কশিনে মাছ নিলে নাও, না নিলে বেরিয়ে যাও। আমরা তাদের কথায় হতাশ হয়ে মাছ না কিনে ফিরে আসি। একই সাথে আমরা মাছ বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ২২ মার্চ (আজ বুধবার) থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

উভয়পক্ষের লিখিত এসব অভিযোগ নালিশ পেয়ে গতকালই সমঝোতার উদ্যোগ নেয়া হয়। তা ফলপ্রসু না হওয়ায় আজ খুচরা বাজারে মাছ বিক্রেতারা মাছ ক্রয়-বিক্রয় করছেন না।