চুল কেটে দেয়ায় লালনভক্ত বাউলরারাজপথে

 

মেহেরপুর গাংনীর চাঁদপুরে জোরপর্বক চুল কাটায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ

 

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের লালন অনুসারীদের ওপর হামলা ও জোরপূর্বক একজনের মাথার চুল কেটে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। দোষীদের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবিতে রাজপথে নেমেছেন লালনভক্তরা। তবে গ্রামের মানুষের দাবি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানায় বাউলরা প্রতিরোধের মুখে পড়েছেন।

গ্রাম ঘুরে জানা গেছে, চাঁদপুর গ্রামের আবু বক্করসহ ৭/৮টি পরিবার লালন অনুসারী। গত কয়েক বছর ধরে তারা লালনের আচার অনুষ্ঠান পালন করে আসছেন। সম্প্রতি গ্রামের মানুষের সাথে তাদের বিরোধ শুরু হয়। ইসলাম ধর্ম কটাক্ষ করার অভিযোগে গ্রামবাসীর প্রতিরোধের মুখে পড়েন তারা। এর জের ধরে আবু বক্করসহ কয়েকজনকে জোরপূর্বক তওবা পড়ায় গ্রামের লোকজন। এমন অভিযোগে ৭ আগস্ট মেহেরপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গ্রামের জামায়াত-শিবির সমর্থকদের ১৭ জনের নামে মামলা করেন আবু বক্কর। গ্রামের মানুষ একজোট হয়ে প্রতিবাদ করলেও শুধুমাত্র জামায়াত-শিবির সমর্থকদের নামে মামলা করায় গ্রামে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গ্রামের মানুষ ৮ আগস্ট আবু বক্করসহ তার অনুসারীদের মারধর করে। গ্রামের কিছু মানুষ তার মাথার চুল কেটে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন আবু বক্কর। বাউলদের আচার অনুষ্ঠান পালনে বাধা ও চুল কাটার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন লালনভক্তরা। প্রতিবাদে গতকাল রোববার সকালে মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছেন তারা। জেলার বিভিন্ন এলাকার বাউলভক্তরা মানববন্ধনে যোগ দেন। বাউলদের ওপর হামলা ও চুল কর্তানকারীদের গ্রেফতারপূর্বক শাস্তি না হলে কঠোর আন্দোলন করার ঘোষণা দেন তারা।লালন ভক্তের চুল কাটার ঘটনায় এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান, লালন গবেষকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।

তবে গ্রামের মানুষের দাবি, আবু বক্কর সম্পত্তি বিক্রি করে বাউলের পেছনে খরচ করার উদ্যোগ নিলে তার ছোট ছেলে রতন মিয়া প্রতিবাদ জানান। আবু বক্করের ছেলে রতন হোসেন জানান, তার বড় ভাইকে সাথে নিয়ে পিতা আবু বক্কর সব সম্পত্তি বিক্রির উদ্যোগ নেয়। এ নিয়ে বড় ভাইয়ের সাথে তার গণ্ডগোল বাধে। পিতা বিচার দেয় গ্রামবাসীর কাছে। গ্রামের মানুষ ভ্রুক্ষেপ না করায় তিনি কয়েকজনের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।

লালন অনুসারী আবু বক্কর ও মিনজাহ উদ্দীন জানান, সমাজের লোকজন তাদের জোরপূর্বক তওবা পড়িয়ে নামাজ পড়তে বাধ্য করে। প্রাণভয়ে কয়েকজন বাউল গ্রামের মানুষের নির্দেশনা অনুসরণ করছেন। আবু বক্কর ও মিনহাজ ফকির নির্দেশনা অমান্য করলে তাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতন। গ্রামে গান-বাজনাসহ ফকিরদের সকল কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়। এক পর্যায়ে তাদের দুজনকে গৃহবন্দি করে বেধড়ক মারপিট করা হয়। লালনভক্তরা কার্যত একঘরে হয়। এর মধ্যেই শুক্রবার রাতে আবু বক্কর মিনহাজের ওপর আক্রমণ করে গ্রামের লোকজন। মিনহাজ ফকির পালিয়ে যায়। আটকে রাখা হয় আবু বক্করকে। রাতেই তার চুল কেটে নেয় গ্রামের কতিপয় মানুষ। গভীররাতে পালিয়ে গিয়ে চুয়াডাঙ্গার একটি আশ্রমে আশ্রয় নেন আবু বক্কর।

গ্রামের সমাজপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রব জানিয়েছেন, ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করলে গ্রামের মানুষ একজোট হয়ে আবু বক্করসহ তার সঙ্গীদের প্রতিরোধ করেন। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে গ্রামের জামায়াত-শিবিরের কয়েকজনকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। এতে আরো ফুঁসে ওঠে গ্রামের মানুষ। কেননা জামায়াত-শিবিরের কেউ এককভাবে তাদের প্রতিরোধ করেনি। তিনি আরো বলেন, তাদের প্রতিটি অনুষ্ঠানে গ্রামের অনেকেই চাঁদা দিয়েছেন। সহযোগিতা করা হয়েছে বিভিন্নভাবে। কিন্তু তারা ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করায় গ্রামের মানুষের প্রতিবাদের মুখে পড়ে। তবে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখার জন্য তাদেরকে আলাদাভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে বলা হয়। কিন্তু তারা বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করেছে। চুল কাটার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজুল ইসলাম জানিয়েছেন, লালনের আচার অনুষ্ঠান পালন নিয়ে গণ্ডগোল হয়নি। জমি বিক্রি নিয়ে আবু বক্করের ছেলের সাথে তার বিরোধ বাধে। এক পর্যায়ে তা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে কিছু স্বার্থন্বেসী ব্যক্তি। ওই গ্রামে শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থানের বিষয়ে চেষ্টা চলছে।