চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন পৌর কাউন্সিলর নাজমুস সালেহীন লিটন : নামাজে জানাজায় মুসল্লির ঢল

চুয়াডাঙ্গা পৌর পরিষদ ও কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিএনপিসহ কৃষকদলের পৃথক পৃথক শ্রদ্ধাঞ্জলি
 
স্টাফ রিপোর্টার: সকলকে শোক সাগরে ভসিয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন নাজমুস সালেহীন লিটন। তিনি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে পর পর তিন তিনবার নির্বাচিত হয়ে জনপ্রিয়তার প্রমাণ রাখেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষকদল চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি দায়িত্ব পালন করে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যেও হয়ে ওঠেন দলের নিবেদিত প্রাণ। গতকাল বাদ জোহর চুয়াডাঙ্গার ভি.জে স্কুল খেলার মাঠ (চাঁদমারি মাঠে) নামাজে জানাজা শেষে জান্নাতুল মওলা কবরস্থানে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়। নামাজে জানাজায় দল মত নির্বিশেষে অসংখ্য মুসল্লি শরিক হন। আগামীকাল শুক্রবার কোর্ট জামে মসজিদে বাদ আছর দোয়া মাহফিলে সকলকে শরিক হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা কোটপাড়ার মরহুম আব্দুল হাফিজের ৪ ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন নাজমুম সালেহীন লিটন। দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে ভুগলেও গতপরশু মঙ্গলবার সকালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে প্রথমে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকার উদ্দেশে নেয়ার পথে ওইদিনই রাত ৯টার দিকে মানিকগঞ্জে মারা যান তিনি। রাত পৌনে ৩টার দিকে মৃতদেহ বহনকরা অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছায় নিজ বাড়ি। লাশ দেখে স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। ভোর হতে না হতেই মরহুমকে শেষবারের মতো একবার দেখার জন্য অসংখ্য মানুষ ভিড় জমায়। সকাল ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ শোকার্ত পরিবারের পাশে সশরীরে উপস্থিত হয়ে সমবেদনা জানিয়ে মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। বেলা সাড়ে ১২টায় লাশ নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায়। সেখানে তাকে পৌরসভার মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু পরিষদের পক্ষে কাউন্সিলদের সাথে নিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। এরপরই কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেয়া হয়। পৌরসভা থেকে মৃতদেহ নেয়া হয় ভি.জে স্কুল খেলার মাঠে। সেখানে উপচেপড়া মুসল্লির মাঝে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির পক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন নেতৃবৃন্দ। অগ্রভাগে ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা, ও মজিবুল হক মালিক মজু প্রমুখ। এরপর চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষকদলের পক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেয়া হয়। জেলা কৃষকদলের সভাপতি অ্যাড. আ.স.ম আব্দুর রউফের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন অ্যাড. মঈনুল হোসেন, শরিফুল আলম বিলাশ, আলমডাঙ্গা কৃষকদলের সেক্রেটারি বোরহান হেসেন প্রমুখ।
বাদ জোহর নামাজে জানাজা সম্পন্ন করা হয়। এর আগে বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সেখ শামসুল আবেদিন খোকন, বর্তমান পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু, সাবেক মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান অ্যাড. আশরাফ আলী, বাংলাদেশ পৌর কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম মধু, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক সিরাজউ ইসলাম মনি, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক রবিউল হক সুমন, বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, খন্দাকার আব্দুল জব্বার সোনা, চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি জেএসডির কেন্দ্রীয় নেতা জেলা সেক্রেটারি তৌহিদ হোসেন প্রমুখ।
অন্যদিকে নাজমুস সালেহীন লিটনের মৃত্যুতে গভীরভাবে শোক প্রকাশ করেছেন দর্শনা সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন। তিনি জানান লিটন সম্পর্কে আমার ভাগ্নে। আমি অসুস্থতার কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও জানাজ ও দাফন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারিনি। এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন্ এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।
নাজমুস সালেহীন লিটনের মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিলো ৫১ বছর। তিনি একমাত্র কন্যা তাসলিম সালেহীন রোজা, স্ত্রীসহ বহুগুণগ্রাহী রেখে গেছেন। নামাজে জানাজা শেষে জান্নাতুল মওলা কবরস্থানে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়। দাফন শেষে দোয়া পরিচালনা করেন হাফেজ মাওলানা হারুণ অর রশিদ।