চিকিৎসার পথে পদে পদে বিলম্ব : মারা গেলো স্কুলছাত্রী নাজমা

চুূয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে এন্টিস্নেক ভেনম না থাকায় দিশেহারা সাপে কাটা রোগীর লোকজন

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে এন্টিস্নেক ভেনম না থাকায় এক স্কুলছাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল ভোর রাতে ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় স্কুলছাত্রী নাজমা খাতুনের বাম পায়ের পাতায় সাপে দংশন করে। সকাল ৭টার দিকে হাসপাতালে নেয়া হলেও এন্টি¯েœক ভেনম বাইরে থেকে কিনে শরীরে পুশ করতে করতে বেজে যায় সাড়ে ৯টা। ১১টার দিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে চুয়াডাঙ্গা আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী নাজমা খাতুন। সে জেলা শহরের বুজরুকগড়গড়ি মাদরাসাপাড়ার হতদরিদ্র নাসির উদ্দীনের মেয়ে।
যে ডাক্তার শামীম কবীরই কয়েক বছর আগে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ওষুধ গুদামে পড়ে থাকা এন্টিস্নেক ভেনম বের করে সাপে কাটা রোগী সুস্থ করে অনন্য উদাহারণ সৃষ্টি করেছিলেন, সেই ডা. শামীম কবীর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের কয়েকদিনের মাথায় হাসপাতালেই মারা গেলো সাপে কাটা রোগী স্কুলছাত্রী। কেন? কারণ হাসপাতালে এন্টিস্নেক ভেনম নেই। চলতি বছরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপতালে নাকি এক অ্যাম্পুল এন্টিস্নেক ভেনমও বরাদ্দ দেয়ানি সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর। গতকাল ভোরে হাসপাতাল থেকে মাইলখানেক দূরে বুজরুকগড়গড়ি মাদরাসাপাড়ার নাজমা খাতুনের পায়ে সাপে কাটে। হাসপাতলে নেয়ার আগে নানা জনের নানা কথায় কান দিয়ে কিছুটা বিলম্ব হলেও দ্রুত এন্টিস্নেক ভেনম প্রয়োগ করতে পারলে হয়তো রোগীকে বাচানো সম্ভব হতো। এ মন্তব্য করেছেন স্বয়ং চিকিৎসা প্রদানকারী চিকিৎসক ডা. আবুল হোসেন। তিনি বলেছেন, রোগী হাসপাতালে নিতে একেতো দেরি, তার পর টাকা জোগাড় করে বাইরে থেকে এন্টিস্নেক ভেনম কিনে রোগীর শরীরে দিতে দিতে বেলা গড়িয়েছে অনেক। তার পরও ওর শরীরে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছিলো। সব কিছুতে বিলম্বের কারণেই হতাশা হতে হলো আমাদের।
জানা গেছে, নাসির উদ্দীন হতদরিদ্র একজন পিতা। তিনি স’মিলের শ্রমিক। দিন আনা দিন খাওয়া। গতপরশু নিজেদের ঘরেই ঘুমিয়ে ছিলেন সকলে। ভোরে মেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীর পায়ে কিছু একটা কামড়েছে, যন্ত্রণা করছে বলে জানায়। প্রতিবেশী নানা জনে নানা কথা বলতে শুরু করে। ঝাড়ফুঁকেরও ব্যবস্থা হয়। সকাল ৭টার দিকে তাকে নেয়া হয় হাসপাতালে। চিকিৎসক রোগী দেখে সাপে কেটেছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি এন্টিস্নেক ভেনম কিনে আনার জন্য জানান। ওই ভেকসিনের দাম অনেক। ৩ হাজার টাকা জোগাড় করে ৩টি কিনে চিকিৎসকের হাতে দেয়া হয়। তাও পুশ করতে করতে বেজে যায় প্রায় ৯টা। এরপর হাসপতালের সমাজ সেবা কর্মকর্তাদের দৃষ্টিগোচর করা হলে সেখান থেকে টাকা দিয়ে বাকি এন্টিস্নেক ভেনম কিনে রোগীর শরীরে দেয়া হলেও রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। বাইরে থেকে কেনা এন্টিস্নেক ভেনম নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুললেও হাসপাতালে তা না থাকায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের নবাগত আরএমও ডা. শামীম করিব ও নবাগত সিভিল সার্জন ডা. দিলিপ কুমার এদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেবেন বলে সচেতনমহল আশাবাদী।