চাঁদার টাকা নিয়ে রাব্বানী সাদ্দাম ফোনালাপ ফাঁস

স্টাফ রিপোর্টার: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের চাঁদাবাজির টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ছাত্রলীগের সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সাথে শাখা ছাত্রলীগের নেতা সাদ্দাম হোসাইনের ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। গতকাল রোববার ফোনালাপের সেই অডিও রেকর্ড সাংবাদিকদের হাতে আসে। গণমাধ্যমে গত ৯ আগস্ট উপাচার্যের সঙ্গে টাকা ভাগের বৈঠকে যে চার ছাত্রলীগ নেতা উপস্থিত ছিলেন বলে খবর প্রকাশ হয়েছে ফোনালাপকারী এই ছাত্রলীগ নেতা তাদের মধ্যে একজন।
ফোনালাপের রেকর্ডটি নিচে তুলে ধরা হলো:
গোলাম রাব্বানী : হ্যাঁ, অন্তর, কোথায় আছো, টাকা নেয়ার সময় ছিলো কে কে?
হামজা রহমান অন্তর : জুয়েল ভাই (সভাপতি), চঞ্চল ভাই (সাধারণ সম্পাদক) ও সাদ্দাম ভাই (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক) ছিলো আরকি।
রাব্বানী : টাকাটা দিছে কোথায়?
অন্তর : ম্যামের বাসায়, সাদ্দাম ভাইয়ের সাথে একটু কথা বলেন। আমার পাশেই আছে।
রাব্বানী : আচ্ছা দাও দাও!
সাদ্দাম হোসাইন : ভাই, স্লামুআলাইকুম।
রাব্বানী : ওয়ালাইকুম আস্সালাম, সাদ্দাম কি খবর ভাই?
সাদ্দাম : ভাই খবর তো আপনাকে জানাইছি ভাই, খবর তো ভালো না বেশি একটা। আমি, তাজ, জুয়েল, চঞ্চল এই চারজন ছিলাম ওই মিটিংয়ের সময়। আজকে কিছুক্ষণ আগে জাহাঙ্গীরনগর ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে প্রেস রিলিজ দিছে আপনাদের বিপক্ষে।
রাব্বানী : সেটা তো দেখলাম।
সাদ্দাম : বিষয়টা হচ্ছে ভাই, বামের সাথে সেটিংয়ে গেছে। বৈঠক হইছে বামের সাথে। তারপর বৈঠকে বিচার বিভাগীয় তদন্ত বাদে বাকিগুলা বামের সাথে মেনে নিছে। আর বিচার বিভাগীয় তদন্তের ব্যাপারে মানবে কি না আগামী বুধবার পর্যন্ত তিন দিন সময় দিছে।
রাব্বানী : আন্দোলন নিয়া?
সাদ্দাম : হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ।
রাব্বানী : ম্যাম তো বলছে যে আন্দোলনও নাকি আমরা করাচ্ছি। সামথিং লাইক ওরকম কিছু। আন্দোলন কারা করতেছে ওটাও তো আমরা জানি না।
সাদ্দাম : ভাই বিষয়টা হচ্ছে উনি ছাত্রলীগের উপর দিয়ে সবকিছু করে নিজের ফ্যামিলিকে সেইভ করতে চাচ্ছে আরকি। উনি বাঁচতে চাচ্ছেন। আর প্রধানমন্ত্রীর রেফারেন্স দিয়ে অনেকগুলা কথা বলছে আপনার বিপক্ষে, মানে সেন্ট্রাল ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে এবং যুগান্তরে ভাই, নিউজটা কি দেখছেন?
রাব্বানী : ওটা দেখছি, আচ্ছা টাকা যখন দিছিলো তখন তুই ছিলি না!
সাদ্দাম : ছিলাম ভাই, আমি আর তাজ ছিলাম। এখন আপনি বলেন কি করতে হবে। আমরা করতেছি।
রাব্বানী : তুই আর কে ?
সাদ্দাম : আমি আর তাজ, আমার বন্ধু ভাই।
রাব্বানী : অহ তাজ তাজ, সহ-সভাপতি! তুই হলি জয়েন্ট সেক্রেটারি। টাকাটা কিভাবে! ম্যাডাম দিছিলো নাকি অন্য কেউ ছিলো?
সাদ্দাম : ওইখানে আর কেউ ছিলো না। ব্যাপারটা হচ্ছে ম্যাডাম আমাদের সাথে ডিলিংটা করছে। টাকাটা আমাদের হলে পৌঁছায় দিছে।
রাব্বানী : ওহ হলে পৌছাই দিছে টাকা!
সাদ্দাম : হ্যাঁ হ্যাঁ। কথা তো হইছেই। আমি আর জুয়েলসহ তিন জনের সাথেই কথা হইছে।
রাব্বানী : কয় টাকা দিছে?
সাদ্দাম : আমাদেরকে বলছে এক কোটি। বাকিটা জানি না। জুয়েল-চঞ্চলের সাথে আলাদা লেনদেন হতে পারে। বাট আমাদের সাথে বসে মীমাংসা..
রাব্বানী : আমি শুনলাম যে ১ কোটি ৬০ লাখ…
সাদ্দাম : ব্যাপারটা হচ্ছে ভাই, ৬০ এর ব্যাপারটা আমরা জানি না। ওখানে বসে ভাগ করে দিছে। ৫০ হচ্ছে জুয়েলের, ২৫ আমাদের আর ২৫ চঞ্চলের।
রাব্বানী : ওহ ম্যাডাম ওভাবে ভাগ করে দিছে! জুয়েল ভালো ছেলে। ঐ জন্য ৫০ আর চঞ্চল ক্যাম্পাসের বাইরে থাকে ঐ জন্য ২৫..
সাদ্দাম : চঞ্চল তো ভাই ঐ ঝামেলায় আমাদের বাদ দিতে পারে নাই।
রাব্বানী : ও সেক্রেটারির টাকাই তোদেরকে দিছে।
সাদ্দাম : আমরা বলছি আমাদের ২৫ পার্সেন্ট দিতে হবে। আর চঞ্চলকে ২৫ পার্সেন্ট। আমাদের না জানাইয়া ওদের আলাদা ৬০ লাখ টাকা দিছে। এটাও হতে পারে। আমরা ওটা জানি না। আমরা ১ কোটির হিসাব জানি।
রাব্বানী : কিন্তু তোমার ম্যাডাম যে এখানে আমাদের নাম জড়াইলো, আমার তো কোনো আইডিয়াই নাই।
সাদ্দাম : ভাই উনি খুব নোংরামি করতেছে। আপনারা ভাই সিদ্ধান্ত নেন। আমাদের কী করা লাগবে আমরা করতেছি।
রাব্বানী : তোমাদের কিছু করা লাগবে না। তোমরা সাইলেন্ট থাকো। যেহেতু আপার কানে দিছে, আমিও বুঝতেছি সে নিজে সেফ হওয়ার জন্য নিজের ফ্যামিলিকে সেফ করার জন্য। আরেকটি জিনিস, এই ৬টা কাজ ডিল করছে কে বেসিক্যালি?
সাদ্দাম : মূলত তার ছেলে, তার পিএস সানোয়ার ভাই আর হচ্ছে পিডি, আর হচ্ছে তার হাজবেন্ড। এই চার জন।
রাব্বানী : স্বামী, ছেলে, পিএস সানোয়ার ও পিডি নাসির? আগে থেকে ৬টা কোম্পানি রেডি করে রাখছে না!
সাদ্দাম : শুরু থেকেই তারা সবকিছু করছে ভাই। ট্যাকনিক্যাল কমিটিতে ওরা ছিলো।
রাব্বানী : ট্যাকনিকাল কমিটিতে ওরা ছিলো! না না ওরা তো থাকতে পারে না। এটার নিয়ম নেই।
সাদ্দাম : উনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলো ওটা নাটক ছিলো। শিডিউল বিক্রির টাইমে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ইচ্ছে করে। যেন কেউ যোগাযোগ করতে না পারে।
রাব্বানী : ওহ আচ্ছা। শিডিউল বিক্রির টাইমে সে হাসপাতালে ভর্তি হইছে ইচ্ছা করে?
সাদ্দাম : হ্যাঁ ভাই।
রাব্বানী : তুই জানলি কেমনে এইটা?
সাদ্দাম : শিডিউল বিক্রির সময় উনি হাসপাতালে ছিলেন। শিডিউল বিক্রি শেষ উনি সুস্থ।
রাব্বানী : আমি তোর সাথে কথা বলবনি প্রয়োজন হলে। ম্যাম আমাদের সম্পর্কে যা মিথ্যাচার করলো!
এদিকে, ফোনালাপের ব্যাপারে জানতে চাইলে সাদ্দাম হোসাইন বলেন, ‘এই ফোন কলের আগে পরেও ফোন কল ছিলো। আমি আসলে কোনো কথার প্রেক্ষিতে এসব বলছি মনে নেই। মনে করে পরে জানাবো।’
এ বিষয়ে জানতে উপাচার্যকে ফোন করলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তিনি পৃথক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি টাকা দিয়েছি ঐ ফোনকলের মাধ্যমে এমন গল্প ফেঁদেছে। আমার সাথে টাকার কোনো দেখাই হয়নি। এই মিথ্যাটা সত্য করার দায়িত্ব আমার না। রাব্বানীর যেহেতু পদ নেই সে ষড়যন্ত্র থেকে এসব বলতে পারে। কিন্তু নিশ্চিত থাকেন আমার বাসায় টাকা পয়সার কোনো কথা হয়নি।’