চলন্ত সিএনজি পালানোর সময় আছড়ে পড়ে আহতকে গণধোলাই : হাসপাতালে নেয়ার পর মৃত্যু

দর্শনা দক্ষিচাঁদপুর থেকে সংঘবদ্ধ চোরচক্র লক্ষাধিক টাকা চুরি করে পালানোর সময় দামুড়হুদা ব্র্যাকমোড়ে প্রতিরোধ

 

চোরের পর বাটপারি করতে গিয়ে দামুড়হুদার দু যুবক গ্যাঁড়াকলে : ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার

 

বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদার দক্ষিণ চাঁদপুরস্থ মসজিদ মার্কেটের একটি আড়ত থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ৮শ টাকা চুরি করে পালানোর সময় দামুড়হুদা ব্র্যাকমোড়ে ধরা পড়ে একজন প্রাণ হারিয়েছে। তার দু সহযোগী পালালেও পরে একজন ধরা পরে। চোরের নিকট থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে সটকানোর সময় দু যুবকও ধরা পড়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল রোববার সন্ধ্যায়। স্থানীয়রা বলেছে, গণধোলাইয়ের আগে পালানোর সময় সড়কে আছড়ে পড়লে তাকে একটি আলমসাধু চাপা দেয়।

নিহত শাদ আলী ওরফে চাঁদ আলী রাজবাড়ি জেলার পাংশা উপজেলার ঝাউগ্রামের রহিম শাহের ছেলে। এ ঘটনার মিনিট পনের পরেই দামুড়হুদার কোষাঘাটাস্থ বকুল মিয়ার ইটভাটার অদূরে স্থানীয় জনতার হাতে পাকড়াও হয় পালিয়ে যাওয়া দু চোরের মধ্যে রুবেল (২২) নামের একজন। থানা পুলিশ তাকেও আটক করে থানায় নেয়। এদিকে চোরের ওপর বাটপারি করতে গিয়ে দামুড়হুদা বসুতিপাড়ার মালেক ও আজিবার পড়েছে গ্যাঁড়াকলে। কোষাঘাটায় আটক চোরের নিকট থেকে প্রায় লক্ষাধিক টাকা কেড়ে নিয়ে আজিবার সটকে পড়লেও পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে মালেক। ক্ষতিগ্রস্থ আড়ত ব্যবাসীয় তানজিল বাদী হয়ে মালেক, আজিবার, নিহত চাঁদ আলী, ও অপর দু চোর রুবেল ও পলাতক বাবলুর নামে দামুড়হুদা থানায় মামলা দায়ের করেছেন। আটক রুবেল দর্শনার এক ব্যক্তির নাম বলতে না পারলেও তার সহযোগিতায় এ চুরি করেছে বলে পুলিশকে জানিয়েছে। গতকাল রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুরস্থ মসজিদ মার্কেটের তানজিল এন্টার প্রাইজ নামক আড়তে এ চুরির ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুরের মুনতাজ আলীর ছেলে ভূষিমাল ব্যবসায়ী তানজিল হোসেন (২৪) গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার আড়তের ড্রয়ারে ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা রেখে ড্রয়ারে তালা মেরে পার্শ্ববর্তী হোটেলে যায় সিঙাড়া কিনতে। মিনিট দশেক পরে আড়তে ফিরেই দেখে ড্রয়ারের তালা ভাঙা এবং নিচে ২০ টাকার ১০ টাকার বেশ কিছু নোট ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। এ সময় তানজিলের চিৎকার চেঁচামেচিতে পার্শ্ববর্তী অপর হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী রহিম ছুটে আসেন এবং বলেন কিছুক্ষণ আগে অপরিচিত ৩ জনকে এখানে ঘোরাঘুরি করছিলো। এর কিছুক্ষণ পর এক ভ্যানওয়ালা ওই আড়তের সামনে আসে এবং লোকজনের জটলা দেখে বলে আমি এইমাত্র লুঙ্গি পরা অপরিচিত ৩ জনকে ভ্যানে করে সিএনজি স্ট্যান্ডে রেখে এলাম। তানজিল বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে তার প্রতিবেশী হবা জোয়ার্দ্দারের সাথে মোটরসাইকেলযোগে দর্শনা বাসস্ট্যান্ডস্থ সিএনজি স্ট্যান্ডে ছুটে যান। সিএনজি স্টাটার আ. মমিন ঘটনার বর্ননা শুনে মোবাইল করেন চুয়াডাঙ্গা অভিমুখে রওনা হওয়া ওই সিএনজিচালক মহিদুলের কাছে। ওই সময় সিএনজিটি দামুড়হুদাস্থ ব্র্যাকমোড় পার হচ্ছিলো। বিষয়টি সিএনজি চালককে মোবাইলে জানানোর সাথে সাথে চালক সিএনজি ঘুরিয়ে পুনরায় দর্শনা অভিমুখে রওনা হলে ওই ৩ চোরচক্র চলন্ত সিএনজি থেকে লাফ দেয়। চলন্ত জিএনজি থেকে লাফ দিয়ে দু চোর পালিয়ে গেলেও পিচরোডে আচড়ে পড়ে গুরুতর জখম হয় অপর চোর রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার ঝাউগ্রামের রহিম শাহ’র ছেলে শাদ আলী। এ সময় পেছন থেকে আসা দ্রুতগতির একটি আলমসাধু তাকে পিষ্ট করে রক্তাক্ত জখম করে। স্থানীয়রা পিটুনি শেষে তাকে পুলিশে দেয়। পুলিশ হাসপাতালে নেয়। সে মারা যায়।

স্থানীয়রা জানান, মোটরসাইকেল ও সিএনজিযোগে দর্শনা থেকে ঘটনাস্থলে ছুটে যান তানজিল ও তার লোকজন। শুরু হয় গণধোলাই। খবর পেয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার এসআই আবু জাহের ভূইয়া সঙ্গীয় ফোর্সসহ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তার কাছে থাকা ২৮ হাজার ৪শ টাকা উদ্ধার করেন এবং তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন। এ ঘটনার মিনিট পনেরো পর দামুড়হুদার কোষাঘাটাস্থ বকুল মিয়ার ইটভাটার অদূরে স্থানীয় জনতার হাতে পাকড়াও হয় পালিয়ে যাওয়া দু চোরের মধ্যে রুবেল (২২) নামের একজন। দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি কামরুজ্জামান ওই রুবেলকে গ্রেফতার করতে ছুটে যান কোষাঘাটায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই পাবনা জেলার আতাইকোলা উপজেলার লক্ষ্মীকোল গ্রামের আব্দুর রহিম শেখের ছেলে রুবেলের কাছে থাকা টাকার ব্যাগ কেড়ে নেয় দামুড়হুদা দশমীপাড়ার মৃত ফরমান আলী ওরফে ফরুর ছেলে মালেক (২৮)। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রুবেলকে আটক করে এবং তার কাছে থাকা টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে উপস্থিত লোকজন বলে ওই টাকার ব্যাগ মালেক কেড়ে নিয়েছে। পুলিশ মালেককে আটক করার আগেই ওই টাকার ব্যাগ তার অপর সহযোগী দামুড়হুদা বসুতিপাড়ার মোংলার ছেলে আজিবার নিয়ে সটকে পড়ে। পুলিশ চোর রুবেল ও মালেককে আটক করে থানায় নেয় এবং মালেকের কাছ থেকে ২২০০ টাকা উদ্ধার হয়। পুলিশ বাকি টাকার কথা জানতে চাইলে মালেক জানায় বাকি টাকা আজিবারের কাছে। কোষাঘাটায় আটক চোরের নিকট থেকে ৯৭ হাজার ২শ টাকা নিয়ে আজিবার সটকে পড়ে বলে পুলিশ জানালেও আজিবার অজ্ঞাতস্থান থেকে মোবাইলফোনে তার নিকটজনদের কাছে বলেছে তার কাছে ১৮ হাজার টাকা আছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ কয়েক দফা হন্যে হয়ে খুঁজেও আজিবারকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এদিকে আহত চোর শাদ আলী ওরফে চাঁদ আলী সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবু জাহের ভূইয়া লাশের ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল থেকে লাশ উদ্ধার করে রাত সাড়ে ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন। এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্থ্য আড়ত ব্যবাসীয় তানজিল বাদি হয়ে মালেক, আজিবার, নিহত চাঁদ আলী ও অপর দু চোর রুবেল ও পলাতক চোর গোয়ালন্দের বাবলুর নামে দামুড়হুদা থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি কামরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নিহতের লাশের ময়না তদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আজ সোমবার লাশের ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের নিকটজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে। এ ছাড়া চুরির ঘটনার সাথে জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। এ পর্যন্ত মালেকের কাছ থেকে ২ হাজার ২শ এবং নিহত শাদ আলী কাছ থেকে ২৮ হাজার ৪শ মোট ৩০ হাজার ৬শ টাকা উদ্ধার হয়েছে। বাকি টাকাও বুঝে দেয়া লাগবে। তিনি আরো বলেন, আটক রুবেল দর্শনার এক ব্যক্তির নাম বলতে না পারলেও তার সহযোগিতায় এ চুরি করেছে বলে জানিয়েছে। এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।