চলতি সপ্তায় ৩৫তম বিসিএসের প্রজ্ঞাপন

বিসিএস পরীক্ষায় সময় ও নম্বর বৃদ্ধি

 

স্টাফ রিপোর্টার: প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার জন্য যারা বিসিএস পরীক্ষা দিতে চান, তাদের প্রায় পৌনে দু বছরের অপেক্ষা শেষ হতে যাচ্ছে। নতুন বিধিমালা হয়ে গেছে। ফলে চলতি সপ্তায় ৩৫তম বিসিএসের প্রজ্ঞাপন জারি হতে যাচ্ছে। তবে এবার থেকে ১০০ নম্বরের বদলে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হবে ২০০ নম্বরের।

সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ গতকাল রোববার রাতে বলেন, নতুন বিধিমালার গেজেট ছাপা হচ্ছে বলে জানতে পেরেছি। তবে এখনো আমরা সেটি হাতে পাইনি। আশা করছি, কাল সোমবার পেয়ে যাবো। গেজেট হাতে পাওয়ার দু-এক দিনের মধ্যেই ৩৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮২ সালের বিধিমালা সংশোধন করে বিসিএসের প্রাথমিক বাছাই (প্রিলিমিনারি) বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা, ২০১৪ চূড়ান্ত করে সেটি ছাপানোর জন্য ইতোমধ্যেই বিজি প্রেসে পাঠানো হয়েছে। নতুন বিধিমালায় পরীক্ষার নম্বর ১০০ থেকে বাড়িয়ে ২০০ করা হয়েছে। আর পরীক্ষার সময় হবে দু ঘণ্টা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি ছাপাখানা বিজি প্রেসের সহকারী পরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন, গেজেট ছাপার কাজ চলছে। সোমবারের মধ্যেই সেটি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ৩৫তম বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে এক হাজার ৭৪৯ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে বলে গত ৯ ফেব্রুয়ারি সংসদে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক। পদসংখ্যা বাড়বে কি-না জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ বলেন, যেকোনো সময়েই পদ বাড়তে পারে। জনপ্রশাসনকে শক্তিশালী করতে সরকার যদি পদসংখ্যা বাড়াতে চায় তাহলে আমাদের সেটি সমন্বয় করতে কোনো সমস্যা নেই।

বাড়ছে ফরমের মূল্য: পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, সংশোধিত বিধিমালায় বিসিএসের আবেদন ফরমের দাম ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হয়েছে। তবে প্রতিবন্ধী ও সুবিধাবঞ্চিত তথা অনগ্রসর অধিবাসীদের জন্য দাম আড়াইশ টাকা থেকে কমিয়ে আবেদনপত্রের মূল্য ১০০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া বিধিমালায় মৌখিক পরীক্ষায় পাস নম্বর ৪০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। তবে লিখিত পরীক্ষায় পাস নম্বর আগের মতোই ৫০ শতাংশ রয়েছে। প্রিলিমিনারিতে আগের মতোই প্রতিটি প্রশ্নের জন্য এক নম্বর এবং ভুল উত্তরের জন্য আধা নম্বর কাটা যাবে।

প্রিলি ২০০ নম্বরের, লিখিত সিলেবাসেও রদবদল: বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ৩০০ নম্বরের করাসহ কয়েকটি বিষয়ে নিয়োগ বিধি সংশোধন চেয়ে এ বছরই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় পিএসসি। তবে প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটি ২০০ নম্বর করার সিদ্ধান্ত দেয়। এরপর আইন মন্ত্রণালয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার (ভেটিং) পর বিধিমালাটি যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে। সেখান থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর এখন সেটি গেজেট হতে যাচ্ছে।
২০১৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞাপন জারি করে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। প্রায় দু লাখ প্রার্থী ওই পরীক্ষা দেন। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন ৪৬ হাজার। তাদের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে কিছু দিন আগে। কিন্তু এই বিসিএসের পর আর কোনো বিজ্ঞাপন হয়নি।

পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, এর আগে আগে এমসিকিউ পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হতো। কিন্তু এমন পরীক্ষা পদ্ধতির কারণে দেখা যায়, ৪০-৫০ হাজার চাকরিপ্রার্থী বাছাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। সর্বশেষ ৩৪তম বিসিএসের বাছাই পরীক্ষায় ৪৬ হাজারের বেশি প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। এসব প্রার্থীর লিখিত পরীক্ষা নিতে পিএসসিকে অনেক দুর্ভোগ পোয়াতে হয়। এ কারণেই পিএসসি এবার প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষাকে আরও যুগোপযোগী করার সিদ্ধান্ত নেয়।

পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, কেবল প্রিলিমিনারি পরীক্ষাই নয়, ৩৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার সিলেবাসেও ব্যাপক রদবদল হচ্ছে। বাংলা, ইংরেজি, বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক, গাণিতিক যুক্ত, সাধারণ বিজ্ঞান বিষয়গুলো আগের মতো থাকলেও সেখানে নতুন বহু বিষয় যুক্ত করে এবার নতুন সিলেবাস করা হবে। তবে তাতে প্রার্থীদের সুবিধা হবে বলেই মনে করছে পিএসসি।

পিএসসির চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ বলেন, বিশেষজ্ঞ কমিটি কয়েক দফায় বৈঠক করে এসব বিষয় চূড়ান্ত করেছেন। নতুন সিলেবাস হয়ে গেলে পরীক্ষার্থীরা নিজেরাই বুঝতে পারবেন কী পড়তে হবে, কীভাবে পড়তে হবে, কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। এর ফলে কোচিং-নির্ভরতা কমে আসবে।