চতুর্থ ধাপে আলমডাঙ্গার চিৎলা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৭ মে

 

চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোটযুদ্ধে নেমেছেন কোমর বেঁধে

JILLU   Chairman Biplob FOKAভালাইপুর প্রতিনিধি: চতুর্থ ধাপে চুয়াডাঙ্গার ৭ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৭ মে। ইউনিয়নগুলো হলো- আলমডাঙ্গা উপজেলার চিৎলা, খাদিমপুর, গাংনী, ভাংবাড়িয়া, বাড়াদী, কুমারী ও হারদী। এসব ইউনিয়নে প্রার্থীরা পুরোদমে মাঠে নেমেছেন নির্বাচনী প্রচারণায়। পাড়া মহল্লায় এখন শুধু ভোটেরই আলোচনা। চিৎলা ইউনিয়ন ঘুরে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

আলমডাঙ্গা উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন চিৎলা। ভালাইপুর, গোকুলখালী, গোপিনগর, কয়রাডাঙ্গা, চিৎলা, রুইথনপুর, কুলপালা, হাঁপানিয়া ও নওদা হাঁপানিয়া গ্রাম নিয়ে এর অবস্থান। ভোটার সংখ্যা ১৬ হাজার ৪৫৫। এর মধ্যে পুরুষ ৮ হাজার ২২৭ ও মহিলা ৮ হাজার ২২৮ জন। পুরুষের চেয়ে মহিলা ভোটার একজন বেশি। এবারে এই ইউপি নির্বাচনে ৯টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। কেদ্রগুলো হলো- গোকুলখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কয়রাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুলপালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিএইচআর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সিএইচআর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রুইথনপুর আব্দুল খালেকের জমিতে অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র, আইন্দিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাঁপানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নওদা হাঁপানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আসন্ন নির্বাচনে এবার এ ইউনিয়নে ৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী লড়াই করছেন কোমর বেঁধে। দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাই এবারের নির্বাচনের আমেজ অন্যবারের চেয়ে ভিন্ন।

আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে মাঠে নেমেছেন জেলা যুবলীগ ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা কয়রাডাঙ্গা গ্রামের মৃত ইসমাইল হোসেন বিশ্বাসের ছেলে তৌহিদুল ইসলাম ফকা। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, যেহেতু দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছি। তাই আওয়ামী লীগ করতে হলে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবে। নির্বাচিত হলে ইউনিয়নবাসীর সার্বিক উন্নয়নের আশ্বাস দেন তিনি।

বিএনপির মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আলমডাঙ্গা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক কয়রাডাঙ্গা গ্রামের প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান মন্টুর বড় ছেলে আব্দুস ছালাম বিপ্লব। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন দিন-রাত। তিনি বলেন আমার পিতা, চাচা ও মা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ইউনিয়নবাসী একটা পরিবর্তন চায়। এ পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে ইউনিয়নবাসী আমাকে নির্বাচন করবেন বলে আমি আশা রাখি। আমি নির্বাচিত হয়ে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে চাই। আশা রাখি বিপুল ভোটের ব্যবধানে আমি নির্বাচিত হবো।

সাবেক খাদিমপুর ইউনিয়ন ও বর্তমান চিৎলা ইউনিয়নের পরপর দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান সাবেক জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কয়রাডাঙ্গা গ্রামের মৃত মুনছুর মণ্ডলের ছেলে জিল্লুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জোর প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন ২০০৩ সালে সাবেক খাদিমপুর ইউনিয়নের চেয়াম্যান নির্বাচিত হই। ২০১১ সালে নির্বাচনের আগে চেয়ারম্যান থাকাকালীন নিজের এলাকার উন্নয়নের কথা চিন্তা করে আমার সার্বিক সহযোগিতায় এই এলাকার সুধী মহলের সমন্বয়ে ২০১০ সালের শেষের দিকে চিৎলা নামক নতুন ইউনিয়নের মুখ দেখি। ২০১১ সালের জুলাই মাসের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হই। বিগত বছরগুলোয় এলাকার যথেষ্ট উন্নয়ন করেছি। মানুষের উন্নয়নে দিন নেই রাত নেই পরিশ্রম করেছি। তাই আমি আশাবাদী এবারও বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবো।

রুইথনপুর গ্রামের মৃত গোলাম রহমানের ছেলে জামায়াত ইসলামী সমর্থিত মিজানুর রহমান চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবং প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনিও আশাবাদী এলাকার মানুষ তাকে জয়ী করবেন।

এছাড়াও সাধারণ সদস্য পদে ১ নং ওয়ার্ডে ২ জন প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন শমসের আলী ও খোকন হোসেন। ২ নং ওয়ার্ডে ইন্তাদুল হক, সেলিম রেজা, আইনাল বিশ্বাস, আলম আলী ও বেল্টু রহমান। ৩ নং ওয়ার্ডে ৫ জন হলেন, অহিদুল ইসলাম, ইদ্রিস আলী ইদু, হোসেন আলী, আবদুস সাত্তার ও আবু বক্কর, ৪ নং ওয়ার্ডে ময়েন আলী, ইনসান, শহিদুল ও নিজাম উদ্দিন। ৫ নং ওয়ার্ডে লিয়াকত আলী, ইসমাইল হোসেন ও কাবা জোয়ার্দ্দার। ৬ নং ওয়ার্ডে ৩ মাসুদ রানা, আকরাম হোসেন ও ইদ্রিস আলী। ৭ নং ওয়ার্ডে রবিউল ইসলাম, আমিন ডাক্তার, আলম হোসেন ও জহুরুল ইসলাম। ৮ নং ওয়ার্ডে শুকুর আলী, আব্দুস সাত্তার, শফিউল ইসলাম। ৯ নং ওয়ার্ডে এমদাদুল হক টুকু, আব্দুল বাতেন শাহ, আব্দুস ছাত্তার, আব্দুর রশীদ মেম ও মোমিন হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সংরক্ষিত তিনটি আসনে ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডে জুলেখা খাতুন, ছাবিরন খাতুন ও রেহেনা খাতুন,  ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডে আরজিনা খাতুন, জাহানারা খাতুন ঝড়ি, শাহানারা খাতুন ও আনজিরা খাতুন এবং ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডে ফাতেমা খাতুন ও আফরোজা খাতুন ভোটযুদ্ধে নেমেছেন।

এদিকে ভোটাররা বলেছেন, সাধারণ মানুষের পাশে থেকে যারা এলাকার উন্নয়ন করবেন তাদেরকেই বেছে নিতে চাই। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নানা পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানালেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সামিউল আলম। মেম্বার, সংরক্ষিত প্রার্থী ও চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় সরগরম এখন পাড়া-মহল্লা। প্রার্থীরা নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন। ভোটাররা বলেছেন, দক্ষ এবং যোগ্য প্রার্থীকেই তারা নির্বাচিত করতে চান। সুষ্ঠু ও নিরপক্ষ নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তারাও। ইউনিয়নজুড়ে সর্বত্রই বইছে নির্বাচনী হাওয়া। নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। চেয়ারম্যান পদে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় প্রার্থী এবং ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এদিকে হাঁপানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নওদা হাঁপানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রুইথনপুর আব্দুল খালেকের জমিতে স্থাপিত অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র অনেকটা ঝুকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন সাধারণ ভোটাররা।