ঘুমের ইনজেকশনসহ দু যুবক গ্রেফতার

চুয়াডাঙ্গার দৌলাতদিয়াড় ব্রিজের নিকট পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান

 

নেশাখোরের স্বীকোরিক্ত- শুরুটা ছিলো নিখরচায় : এরপর শুরু তীব্র যন্ত্রণা

খাইরুজ্জামান সেতু: শুরুটা ছিলো কৌতুহলবশে নিখরচায়। প্রথমে তানজিল ইনজেকশন পুশ করে জানতে চাইলো, এখন কেমন লাগছে? সেই শুরু। ভালোটা না বুঝলেও পরে ওই ইনজেকশন না নিলে আর ভালো লাগতো না। তখন ওরা টাকা নিয়েই ইনজেকশন দিতো। পায়ে ইনজেকশন নেয়া শিরায় থকথকে ঘা দেখা দিলো। শুরু হলো তীব্র যন্ত্রণা। নেশার ওই ইনজেকশন এখন না নিলে তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকি। কেউ দেখে না।

গতরাত পৌনে ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা শহরতলী দৌলাতদিয়াড় ব্রিজের নিকট থেকে ধরা পড়ার পর থানায় নেয়া হলে পায়ের থকথকে ঘা দেখিয়ে মোমিন উপরোক্ত বর্ণনা দিয়ে পুনঃ পুনঃ অনুরোধ জানিয়ে বলে, আমার একটা ইনজেকশন দিলেই আমি বেঁচে যাবো।

বাড়ির লোকজন পায়ের এ ঘায়ের কথা জানে না? এ প্রশ্নের জবাবে দৌলাতদিয়াড় চুনুরিপাড়ার জুলফিকার আলী মল্লিকের ছেলে মোমিন অবলীলায় বলতে থাকে নেশার কবলে পড়া ও পরবর্তী কষ্টের কাহিনি। সে জানায়, প্রথমে পায়ের ঘা বাড়ির লোকজনকে আড়াল করলেও যখন তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াতে লাগলো তখন সকলেই জেনে গেলো। বাড়ি থেকে বের করে দিলো। চিকিৎসা নেয়ার টাকা কোথায় পাবো। ঘুমের ইনজেকশন বিক্রি করা তানজিল, মিন্টু বা গামার কাছেই ঘুরি। ওদের নিকট থেকে ঘুমের ইনজেকশন নিয়ে ব্রিজের ওপর ঘুরে ঘুরে বিক্রি করার পর ওরা একটা করে ইনজেকশন দেয়। ঘুমের ওই ইনজেকশনের জন্যই ওদের দেয়া ঘুমের ইনজেকশন বিক্রি করছিলাম।

পুলিশ বলেছে, দৌলাতদিয়াড় ব্রিজের নিকট মোমিন (৩২) ও দৌলাতদিয়াড় মাঝেরপাড়ার মৃত আয়ুব আলীর ছেলে টোকনকে (৩৪) গ্রেফতার করা হয়। এদের নিকট থেকে উদ্ধার করা হয় ৩২ অ্যাম্পুল ঘুমের (প্যাথেডিন) ইনজেকশন। এরা ঘুরে ঘুরে ঘুমের ইনজেকশন বিক্রি করছিলো। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর পায়ের তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে মোমিন। সে তার পায়ের থকথকে ঘা দেখিয়ে পুলিশের মন গলানোরও ব্যর্থ চেষ্টা করতে থাকে।

পায়ে কেন ঘা? এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ডা. মো. শাহেদ আরাফাত বলেন, ইনজেকশন যে সিরিঞ্জ দিয়ে নিয়েছে তা থেকেই সম্ভবত সংক্রমিত হয়েছে ইনফেকশন। নেশার জন্য নেশাখোরের দল যে সিরিঞ্জ দিয়ে ঘুমের ইনজেকশন শরীরে পুশ করে তা ভয়ঙ্কর।

দৌলাতদিয়াড়ের মাদকবিরোধী সচেতন যুবসমাজ বলেছে, দীর্ঘদিন ধরে চুনুরিপাড়ার একটি চক্র মাদকদ্রব্য বিক্রি করে। এদের সাথে পুলিশের কথিত ক্যাশিয়ারসহ কয়েকজন দারোগা যোগাযোগও রাখে। তাদেরই দুজন মোমিন ও টোকন ধরা পড়েছে। এদের সহযোগী তানজিল, মিন্টু ও গামার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া দরকার।