ঘাতক গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান শুরু : হত্যার নেপথ্য পুলিশের কাছেও স্পষ্ট

সাংবাদিক সদরুল নিপুল হত্যার প্রতিবাদ ও হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত : আজ প্রতিবাদ পদযাত্রা স্মারকলিপি পেশ

 

স্টাফ রিপোর্টার: সাংবাদিক সদরুল নিপুল হত্যামামলার আসামি ধরতে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশকে অনুরোধ জানিয়েছে জিআরপি পুলিশ। আইনগত এ অনুরোধপত্র হাতে পাওয়ার সাথে সাথে সদর থানা পুলিশ গ্রেফতার অভিযানও শুরু করেছে। একই সাথে সাংবাদিক নিপুল হত্যার নেপথ্য উন্মোচনে অধিকতর অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে।

এদিকে চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত সকল সাংবাদিক, সাধারণ জনতা, পেশাজীবী সংগঠন সাংবাদিক সদরুল নিপুল হত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব আয়োজিত সাংবাদিক-জনতার প্রতিবাদ সমাবেশ গতকাল প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়। নীলমণিগঞ্জের ব্যবসায়ীরাও তিনদিনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। গতকাল নীলমণিগঞ্জ বাজারব্যবসায়ী সমিতি কালোব্যাজ ধারণ ও কালো পতাকা উত্তোলনের পাশাপাশি আজ রোববার বিকেলে পিটিআই মোড় থেকে নীলমণিগঞ্জ বাজার পর্যন্ত মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের তিনদিনের ঘোষিত কর্মসূচির আজ তৃতীয় দিন। এ দিনের কর্মসূচি সফল করতে সকাল ১০টায় প্রেসক্লাবে সকল সাংবাদিককে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। সকাল ১০টায় প্রেসক্লাবে সমাবেত হয়ে সাংবাদিকেরা চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তথ্যমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করবে। হুইপ ও পুলিশ সুপারকেও প্রদান করা হবে অনুলিপি। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের তিনদিনের কর্মসূচির পর জেলার সকল প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিট স্ব স্ব উদ্যোগে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করবে।

সাংবাদিক সদরুল নিপুল হত্যার নেপথ্য পুলিশি তদন্তেও অনেকটা পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। গত ২০ মে সন্ধ্যার পর তাকে কে মোটরসাইকেলযোগে চুয়াডাঙ্গায় নেয়, চুয়াডাঙ্গা থেকে নীলমণিগঞ্জে ফেরার পর কে কোথায় তাকে আহ্বান করে তা এখন আর পুলিশের কাছে অজানা নয়। ইতোমধ্যে পুলিশি গ্রেফতার অভিযান শুরু হয়েছে। পুলিশ সাংবাদিক সদরুল নিপুল হত্যার বিষয়ে বিষদ তথ্য পেলেও মামলার স্বার্থে তা প্রকাশ করতে চাচ্ছে না। কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে ঘাতক ও তাদের গডফাদারকে ধরতে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন সদর থানার অফিসার ইনচার্জ আসাদুজ্জামান মুনসী।

গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা সাংবাদিক সমিতি আয়োজিত সাংবাদিক-জনতার প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা চেম্বার সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিক। অতিথি ছিলেন পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, বিএমএ সভাপতি ডা. মার্টিন হিরক চৌধুরী, প্রেসক্লাব সভাপতি মাহতাব উদ্দীন, সাংবাদিক সমিতির সভাপতি এসএম শরীফ উদ্দীন হাসু, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা, জেলা জাসদ সভাপতি কেন্দ্রীয় নেতা তৌহিদ হোসেন, চুয়াডাঙ্গা অভিভাবক ফোরামের নেতা প্রবীণ শিক্ষক আব্দুল মুত্তালিব, চুয়াডাঙ্গা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আসাদুল হোসনে জোয়ার্দ্দার লেমন, এনজিও প্রতিনিধি জহির রায়হান।

সাংবাদিক শাহ আলম সনির উপস্থাপিত সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সেক্রেটারি সরদার আল আমিন ও সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহার আলী। সমাবেশে চুয়াডাঙ্গার পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সকল কর্মসূচির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে বলেন, সাংবাদিক সদরুল নিপুলকে যারা হত্যা করেছে, হত্যার পর ঘটনা ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য রেললাইনের মধ্যে ফেলে রাখে তাদের হাত যতো বড়ই হোক, তারা যতোই ভয়ঙ্কর হোক, চুয়াডাঙ্গার মানুষ তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত শান্ত হবে না।

অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন বলেন, সদরুল নিপুল ছিলেন একজন মেধাবী ও বিনয়ী সাংবাদিক। তার অমায়িক ব্যবহারে আমরা মুগ্ধ হয়েছি। তার লেখনি যে জনপদকে সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত করতে সহায়তা হয়েছে সেই সাংবাদিককে কৌশলে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার মতো সদালাপী ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি অনিবার্য। ওই ঘাতকচক্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার মধ্যদিয়ে বোঝাতে হবে, এই জনপদে আমরা সন্ত্রাস রাখতে চাই না। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সব সময়ই বদ্ধ পরিকর।

ডা. মার্টিন হিরক চৌধুরী বক্তব্য দিতে গিয়ে সদরুল নিপুলের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে সাংবাদিকদের আন্দোলনে সব সময়ই বিএমএ পাশে থাকবে। কারণ বিএমএ কোনো প্রকারের অপরাধকে প্রশ্রয় দেয় না। অপরাধীমুক্ত সমাজ গঠনে বিএমএ কাজ করে যাচ্ছে। মুন্সি আলমগীর হান্নান বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, শান্ত চুয়াডাঙ্গাকে অশান্ত করার জন্য একটি চক্র নানাভাবে উষ্কে দিচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় সাংবাদিক সদরুল নিপুল হত্যা বলে আমরা মনে করি। আমরা সাংবাদিক নিপুল হত্যার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। চাই হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক ওয়াহেদুজ্জামান বুলা বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, বিএনপি সব সময়ই স্বাধীন সাংবাদিকতায় বিশ্বাস করে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে আসছে। সাংবাদিক সদরুল নিপুলকে হত্যা করা হয়েছে। তাকে যারা হত্যা করেছে তাদের ধরে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে এ জনপদের কোনো সাংবাদিকই নিরাপদ নয়। ফলে সদরুল নিপুল হত্যার সাথে জড়িত সকলকে ধরে আইনের আওতায় নিতে হবে। পুলিশকে নিষ্ঠার সাথে কাজ করেতে হবে। ব্যর্থতার দায় বর্তমান সরকারের ওপরই পড়বে।

সমাবেশ শেষে মানববন্ধন গড়ে তোলা হয়। সাংবাদিক সদরুল আলম নিপুল হত্যার প্রতিবাদে আজকের প্রতিবাদ পদযাত্রা ও স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার জন্য প্রেসক্লাবের পক্ষে সকলকে অনুরোধ জানানো হয়। সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রেসক্লাব সেক্রেটারি সরদার আল আমিন বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের নীলমণিগঞ্জের মরহুম নূরু মোহাম্মদের ছেলে সদরুল নিপুল ছিলেন দৈনিক মাথাভাঙ্গার মোমিনপুর প্রতিনিধি। তাকে গত ২০ মে রাতে কৌশলে ডেকে নেয়া হয়। স্টেশনের প্লাটফর্মের একটি চক্র হত্যা করে ঘটনা ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য নিথর দেহ রেললাইনের মধ্যে ফেলে রাখে। এরপরও হত্যার আলামত ঘাতকেরা মুছতে পারেনি। রেললাইন থেকে তিন ফুট উঁচু প্লাটফর্মের যেখানে সাংবাদিক সদরুল নিপুলের মাথায় আঘাত করা হয় সেখানে রক্ত ছিলো। রক্ত মাখা ইটও জিআরপি উদ্ধার করেছে। ঘাতকচক্র স্থানীয়দের মাঝে ইতোমধ্যেই পরিচিত হয়ে উঠেছে। এদের গ্রেফতার করে আইনে সোপর্দ করতে না পারলে চুয়াডাঙ্গার সাংবাদিকদের কেউই নিরাপদে কলম ধরতে পারবে না। যে সংবাদিকেরা পেশাজীবী, রাজনৈতিকসহ সমাজের খুটিনাটি সংবাদ পরিবেশন করে সুন্দর সমাজ গঠনে সহায়ক, সেই সাংবাদিকদের কলম থেমে গেলে গোটা সমাজের কী দশা হবে তা ভেবেই সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের মধ্য থেকে সাংবাদিক সদরুল নিপুল হত্যার বিচারের দাবি ওঠা জরুরি।

           অপরদিকেদৈনিক মাথাভাঙ্গার সাংবাদিক সদরুল নিপুল হত্যার প্রতিবাদে নীলমণিগঞ্জ বাজারের দোকান মালিক সমিতি কালোব্যাজ ধারণ ও দোকান ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কালো পাতাকা উত্তোলন কর্মসূচি ৩ দিনের কর্মসূচি পালন করছে। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, দৈনিক মাথাভাঙ্গার মোমিনপুর প্রতিনিধি সাংবাদিক সদরুল নিপুল হত্যার প্রতিবাদে নীলমণিগঞ্জ বাজার কমিটি ৩ দিনের কর্মসূচি পালন করছে। গতকাল সকালে নীলমণিগঞ্জ বাজার কমিটির উদ্যোগে সকল ব্যবসায়ী বুকে কালোব্যাজ ধারণ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে প্রতিবাদ করেছে। অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা না হলে এলাকার জনগণকে সাথে নিয়ে আরো কঠিন আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে জানায় বাজার কমিটি। সাংবাদিক সদরুল নিপুল হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে ফাঁসির দাবি জানিয়েছে নীলমণিগঞ্জ বাজার কমিটি।

উল্লেখ্য, গত ২০ মে রাতে মোমিনপুর স্টেশনে মাথায় আঘাত করে সাংবাদিক সদরুল নিপুলের নিথর দেহ রেলাইনের মাঝে ফেলে রাখা হয়। পরদিন খণ্ড-বিখণ্ড মৃতদেহ উদ্ধার করে জিআরপি।