গড়াইটুপির গৃহবধূ রূপসীর রহস্যজনক মৃত্যু

চুয়াডাঙ্গার বদরগঞ্জে পরিচয় : নিজেদের পছন্দের বিয়ের দু মাসের মাথায় নির্যাতন

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের জীবনার বধূ রূপসী খাতুনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। নিজের পছন্দে শরিফুল তাকে প্রেমের ছলনায় ভুলিয়ে বিয়ে করলেও যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের এক পর্যায়ে গতপরশু মঙ্গলবার রাতে রূপসী খাতুনের (১৮) রহস্যজনক মৃত্যু হয়। মৃত্যু রহস্য উন্মোচনে পুলিশি তদন্ত শুরু হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ উদ্ধার করে পুলিশ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে নিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হবে।

স্বামী পক্ষ বলেছে, রূপসী খাতুন তার চাচাশ্বশুর বাড়ির সিঁড়িঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। রূপসীর খালুসহ তার পিতা পক্ষ বলেছে, নির্যাতন সহ্য করতে না পরার এক পর্যায়ে রূপসী তার পিতার বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের গড়াইটুপি মাঠপাড়ায় ফিরতে চাইলেও ফিরতে দেয়নি। ওর যৌতুকলোভী স্বামী শরিফুল রাস্তায় রূপসীর পরনের জামা-কাপড় ছিঁড়ে বিবস্ত্র করে ছাড়ে। ছেঁড়া পোশাকে পিতার বাড়ি ফিরতে না পেরে চাচা শ্বশুর বাড়ি ফেরে। সেখানেই তার রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। আত্মহত্যায় প্ররোচণা না কি হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে তা পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসবে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র অবশ্য বলেছে, রূপসী খাতুনের রহস্যজনক মৃত্যুর পর আপস-মীমংসার জন্য দর কষাকষি শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। পুলিশও মোটা অঙ্কের উৎকোচ দাবি করে। তাতে সাড়া না পেয়ে শেষ পর্যন্ত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের কুতুবপুর ইউনিয়নের জীবনা গ্রামের মুনছুর আলীর মেয়ে রূপসী খাতুন ছিলো আলিয়ারপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। গড়াইটুপি মাঠপাড়ার মনিরুল ইসলামের ছেলে শরিফুল ইসলাম বদরগঞ্জ বাজারের দর্জির দোকানি। এদের মধ্যে পরিচয় হয়। মন দেয়া নেয়া হয়। এক পর্যায়ে মাত্র দু মাস আগে পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিনের মাথায় স্বামী শরিফুলের মুখোশ খোলে। সে যৌতুকের দাবিতে রূপসীকে নির্যাতন করতে থাকে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে রূপসী তার পিতার বাড়ি ফিরতে চায়। রাস্তায় পেয়ে স্বামী রূপসীর পরনের জামা কাপড় ছিঁড়ে দেয়। লজ্জায় সে রাস্তা থেকে স্বামীর চাচার বাড়িতে ফেরে। সেখানেই গতপরশু মঙ্গলবার রাত আনুমানিক ৯টার দিকে রহস্যজনক মৃত্যু হয় রূপসীর। ঘটনার পর স্বামী শরিফুল ইসলাম ও তার মা আত্মগোপন করলেও তাদের পক্ষের লোকজন বলে, রূপসী তার চাচাশ্বশুরের বাড়ির সিঁড়ি ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

অপরদিকে রূপসীর পিতা পক্ষ দাবি করেছে, হত্যা করে ঘটনা ধামাচাপা দিতে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে। এ অভিযোগ উত্থাপন করলেও উভয়পক্ষের মধ্যে আপস-মীমাংসার প্রক্রিয়া শুরু হয়। স্বামী শরিফুলের লোকজন আড়াই লাখ টাকায় রফার প্রস্তাব দেয়। এতে দোনোমনো চলতে থাকে। এক পর্যায়ে খবর পায় পুলিশ। পুলিশও বিষয়টিকে আত্মহত্যা বলেই চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে অর্ধ লাখ টাকার উৎকোচ দাবি করে। ৩০ হাজার টাকা দিতে রাজি হলেও পুলিশ তাতে রাজি হয়নি। শেষ পর্যন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার দীর্ঘ সময় পর পুলিশ লাশ উদ্ধার করে গতকাল বিকেলে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়। আজ বৃহস্পতিবার রূপসী খাতুনের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হতে পারে।

সদর থানা পুলিশ বলেছে, নানামুখি বক্তব্যের প্রেক্ষিতে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। থানায় হত্যামামলার প্রক্রিয়া চলছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে প্রকৃত মৃত্যু রহস্য। তাছাড়া আত্মহত্যায় প্ররোচণারও প্রমাণ রয়েছে। ফলে গ্রেফতারের জন্য শরিফুলসহ তার সহযোগীদের শনাক্ত করে গ্রেফতারেরও চেষ্টা করা হয়েছে। শরিফুল ও তার মা আত্মগোপন করায় গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে চেষ্টা চলছে।