গ্রেফতার আতঙ্কে দামুড়হুদার চাকুলিয়া প্রায় পুরুষশূন্য : সুনসান নীরবতা

ফলোআপ: বিজিবির লাঠির আঘাতে বৃদ্ধ নারীসহ কমপক্ষে ৮ জন আহত : ৭টি বাড়িঘর ভাচুর

 

চাকুলিয়া থেকে ফিরে বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদার সীমান্তবর্তী চাকুলিয়া গ্রামে বিজিবির লাঠির আঘাতে বৃদ্ধ নারীসহ কমপক্ষে ৮ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। ক্ষুব্ধগ্রামবাসী এ তথ্য জানিয়ে অভিযোগ তুলে বলেছে, বিজিবি সদস্যরা গ্রামের ৭টি বাড়িঘর ভাঙচুর করেছেন। অপরদিকে বিজিবি এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, চিহ্নিত কয়েকজন চোরাকারবীকে ধরতে অভিযান চালানো হয়। নেপালের বাড়ি থেকে ৯ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হলে তাদের মিথ্যা প্ররোচনায় গ্রামের কিছু মহিলা বিজিবি দলকে ঘিরে ফেলে। দুজনকে আটকে রাখে। পরে তিন গাড়ি বিজিবি তাদেরকে উদ্ধার করে।

গতকাল চাকুলিয়া গ্রামে সরেজমিন গেলে দেখা যায়, গ্রেফতার এড়াতে গ্রাম ছেড়ে পালানো পুরুষের অনেকেই বাড়ি ফেরেনি। গুরুতর আহত গরুব্যবসায়ী নেপালকে গোপনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গ্রামজুড়ে যেন চলছে অঘোষিত কার্ফ্যু। বিজিবির পক্ষ থেকে গুলিবর্ষণের কথা অস্বীকার করে ওই নেপালের বাড়ি থেকে ৯ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে। পক্ষান্তরে নেপালের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ফেনসিডিল না পেলেও বিজিবি ফেনসিডিল উদ্ধারের দাবি করছে বলে অভিযোগ তুলে গ্রামবাসী বলেছে, পরশু রাতে মোট ১৩ রাউন্ড গুলির শব্দ পাওয়া গেছে। গত শুক্রবার রাতে চাকুলিয়া গ্রামে গুলিবর্ষণের শব্দে পার্শ্ববর্তী ভারতের হুদাপাড়া ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা ছুটে আসেন জিরো পয়েন্টে। সীমান্ত দাঁড়িয়ে উঁকিঝুঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করে তারা।

গতপরশু শুক্রবার পুরোগ্রাম জুড়েই ছিলো শুনশান নিরবতা। মুখ খুলতে ভয় পচ্ছেন অনেকেই। প্রায় দু শতাধিক গ্রামবাসী গতকাল সকালেই ছুটে যান চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগার টগরের কাছে। তিনি তাদেরকে আশ্বস্ত করেন এবং দোষী বিজিবি সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া কথা তিনি জানান বলে গ্রামবাসীরা জানায়। বিজিবির লাঠির আঘাতে আহতরা হলেন- প্রতিবেশী মৃত রমজানের স্ত্রী বৃদ্ধ ছিবরা বেগম (৬০), মৃত আব্দুল কাদেরের স্ত্রী মাহিরণ নেছা (৫৫). আব্দুল কুদ্দুসের স্ত্রী ফজিলা খাতুন (৪০), ইসলাম ঘটকের ছেলে বাবলু (২৫), আরাফাতের ছেলে শহিদ (৩০), সাদেক আলীর ছেলে সেলিম (১৫), সালাউদ্দিনের ছেলে আমিন ওরফে বাঘা ( ৩০) ও আব্দুল মজিদের শিশু ছেলে আকরাম ( ১২)। খালেক ড্রইভারের ছেলে মতিয়ার রহমান মতি, অপর ছেলে আরাফাত, রমজান মাতব্বরের বিধবা স্ত্রী ছিবরা খাতুন, মুনছুরের ছেলে হেলাল, বদর উদ্দিনের ছেলে ইজা, নোয়াজেসের ছেলে চেন্টুর এ ৭ জনের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়।

জানা গেছে, গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে দামুড়হুদার ঠাকুরপুর বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার শহিদ সরোওয়ার্দী সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে চাকুলিয়া গ্রামের ছালাদ্দিনের ছেলে নেপালের বাড়িতে অভিযান চালান। ফেনসিডিল উদ্ধারের কথা বলে বাড়িতে প্রবেশ করে তল্লাশি চালান বিজিবি সদস্যরা। গ্রামের সাধারণ মানুষের অভিযোগ, ফেনসিডিল না পেয়ে বাড়িমালিক নেপালকে বেধড়ক পেটাচ্ছে দেখে গ্রামের সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করে। বিজিবির ৫ সদস্যকে ঘিরে ফেলে। দু রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। বিজিবির ৩ সদস্য সেখান থেকে সরে যেতে সক্ষম হলেও কমান্ডার শহিদ ও হাবিলদার ওয়াজেলকে উত্তেজিত গ্রামবাসী ধরে রাখে। ক্যাম্পে ফেরত আসা ৩ বিজিবি সদস্য তাদের দু অফিসারকে গ্রামবাসী আটকে রেখেছে বলে ম্যাসেজ পাঠান পার্শ্ববর্তী ফুলবাড়ি, বড়বলদিয়া ও বাড়াদি বিজিবি ক্যাম্পে। ম্যাসেজ পেয়ে ঠাকুরপুর, ফুলবাড়ি, বড়বলদিয়া ও বাড়াদি বিজিবি ক্যাম্পের প্রায় ৫০/৬০ জন বিজিবি সদস্য রাত আনুমানিক ৯টার দিকে চাকুলিয়া গ্রামে প্রবেশ করে শুরু করে গণহারে লাঠিচার্জ। এ সময় কমপক্ষে ১২ রাউন্ড গুলির শব্দ পায় গ্রামবাসী। এ গুলি বিজিবি সদস্যরাই করেছেন বলে জানান নেপালের পিতা সালাউদ্দিন। লাঠির আঘাতে আহত হন নেপালের প্রতিবেশী মৃত রমজানের স্ত্রী বৃদ্ধ ছিবরা বেগম, মৃত আব্দুল কাদেরের স্ত্রী মাহিরন নেছা. আব্দুল কুদ্দুসের স্ত্রী ফজিলা খাতুন, ইসলাম ঘটকের ছেলে বাবলু, আরাফাতের ছেলে শহিদ, সাদেক আলীর ছেলে সেলিম, সালাউদ্দিনের ছেলে আমিন ওরফে বাঘা ও আব্দুল মজিদের শিশু ছেলে আকরাম। এছাড়া গ্রামের খালেক ড্রাইভারের ছেলে মতিয়ার রহমান মতি, খালেকের আরেক ছেলে আরাফাত, রমজান মাতব্বরের বিধবা স্ত্রী ছিবরা খাতুন, মুনছুরের ছেলে হেলাল, বদর উদ্দিনের ছেলে ইজা, নোয়াজেসের ছেলে চেন্টুর বাড়ি ঘর ভাংচুর করা হয়েছে বরে অভিযোগ। এরপর ঘরের দরজার তালা ভেঙে বিজিবির দু সদস্যকে উদ্ধার করে ক্যাম্পে ফেরেন বিজিবি সদস্যরা।

গরুব্যবসায়ী নেপালের স্ত্রী লালবানু বলেন, বিজিবি সদস্যরা যখন তার স্বামীকে মারধর করছিলো তখন প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে বিজিবি সদস্যরা আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য ১ রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করেন। নেপালের বোন শাকিলা জানান, রাত ১২টার দিকে বিজিবি সদস্যরা তাকে ও প্রতিবেশী বাবুর স্ত্রী ঝর্ণাকে শাদা কাগেজে জোর করে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে গেছে।

অপর দিকে বিজিবি এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়ে, গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৬ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের ঠাকুরপুর বিওপির সুবেদার শহীদ সরোয়ার্দীদের নেতৃত্বে ৫ সদস্যদের টহলদল চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য দামুড়হুদা উপজেলার চাকুলিয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে সালাহউদ্দিনের ছেলে মোমিন ওরফে নেপালের বাড়ি থেকে ৯ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে। গোপন সংবোদের ভিত্তিতে চোরাকারবারী আব্দুল জলিলের দু ছেলে হাবিবুর রহমান (৩৫) ও জাহাঙ্গীর হোসেন, মনসুর আলীর সমসের উদ্দিন (৪০), আব্দুল খালেকের ছেলে মতি (৩৫), ফকির চাঁদের ছেলে মাহাতাব (৪৭), হাবুলর দু ছেলে আব্দুল আলীম (৩৫) ও আব্দুল হাকিমকে (৪০) ধরার জন্য অভিযান এলে চোরাকারবারী এলাকায় মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে যে, বিজিবি একটি ছেলেকে মেরে ফেলেছে এবং ঘরবাড়িতে আগুন দিয়েছে। তখন চোরাকারবারীদের মিথ্যা সংবাদের ভিত্তিতে এলাকাবাসী চোরাকারবারীসহ উত্তেজিত হয়ে গ্রামের মহিলাদেরকে সামনে দিয়ে টহলদলকে ঘিরে ফেলে। পরবর্তীতে তাদেরকে উদ্ধারের জন্য অন্য তিনটি বিওপি হতে টহল দল গমন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। চোরাকারবারী এবং মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে দামড়রহুদা থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। ওই ঘটনায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহত ঘটনা ঘটেনি।