গ্রিড বিপর্যয় : চুয়াডাঙ্গাসহ সারাদেশে বিদ্যুত সরবরাহ ব্যাহত 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ দেশের অধিকাংশ জেলায় বিদ্যুত সরবরাহে ব্যহত হওয়ায় গ্রাহক সাধারণ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। জাতীয় বিদ্যুত গ্রিডের দুটি প্রধান সঞ্চালন লাইনে বিপর্যয়ের কারণে গতকাল মঙ্গলবার এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যুত অফিস বলেছে, দেশের অন্তত ৩২টি জেলা প্রায় ৫ ঘন্টা বিদ্যুতবিহীন ছিলো। সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ না থাকায় খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী এবং রংপুর বিভাগের শিল্প উৎপাদন ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। এছাড়া হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে রোগীদের অসহনীয় কষ্ট ভোগ করতে হয়।

বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এবং স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে দেশের পূর্বাঞ্চল থেকে পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুত সরবরাহের জন্য ২৩০ কেভির দুটি লাইন রয়েছে। একটি আশুগঞ্জ থেকে সিরাজগঞ্জে, আরেকটি ঘোড়াশাল থেকে ঈশ্বরদীতে। সোমবার রাতে কালবোশেখি ঝড়ের আঘাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার কালীপুরে একটি বিদ্যুতিক টাউয়ার ভেঙে পড়ে ২৩০ কেভি ক্ষমতার আশুগঞ্জ-সিরাজগঞ্জ সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ রাতেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ওই চারটি বিভাগের ৩২টি জেলা অন্ধকারে ডুবে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিকল্প লাইন হিসেবে ঘোড়াশাল-ঈশ্বরদী লাইন ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ওভারলোডের কারণে মঙ্গলবার সকাল ১১টা ২০ মিনিটে এই লাইনেও বিপর্যয় নেমে আসে। ফলে বরিশাল, রাজশাহী, খুলনা ও রংপুর অঞ্চলের  জেলাগুলো পুরোপুরি বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। এরপর বিকাল ৪টা থেকে জেলাগুলোতে সীমিতভাবে বিদ্যুত সঞ্চালন ফের শুরু হয়। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত জেলাগুলোর অধিকাংশ এলাকা ছিলো বিদ্যুহীন। চুয়াডাঙ্গায় চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎও সরবরাহ করা যায়নি। ফলে টানা লোডশেডিং দূর হলেও বিদ্যুতের আসা-যাওয়া গতরাতে লেগেই ছিলো। চুয়াডাঙ্গা বিদ্যুত বিতরণ কেন্দ্রের উপ সহকারী আব্দুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গায় বর্তমানে ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা। এর বিপরীতে গতকাল পাওয়া গেছে ৯ মেগাওয়াট। ফলে ৫টি ফিডারে পর্যায়ক্রমে লোডশেডিঙের মাধ্যমে বিদ্যুত বিতরণ করতে হচ্ছে।

বিদ্যুত বিপর্যয়ের ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পিজিসিবি। আজ বুধবার থেকে ৫ কর্মদিবসের মধ্যে এ কমিটিকে রিপোর্ট জমা দেয়ার সময়সীমা বেধে দেয়া হয়েছে। পিজিসিবির প্রধান প্রকৌশলী (ট্রান্সমিশন ২) কামরুল হাসানকে কমিটির প্রধান মনোনীত করা হয়েছে। জানা গেছে, সারাদেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের দায়িত্ব পালন করে পিজিসিবি। বিতরণ সংস্থাগুলো সরকারি এই কোম্পানির মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। বিদ্যুৎ বিপর্যয় সম্পর্কে গতকাল পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম আল বেরুনী বলেন, দুপুর সোয়া ২টা নাগাদ ক্ষতিগ্রস্থ সঞ্চালন ব্যবস্থা পুনরূদ্ধার করা গেছে। পুরো উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরন ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে চালু হতে আরো কিছুটা সময় লাগবে। মঙ্গলবার রাতের মধ্যে এটি ঠিক হয়ে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

প্রসঙ্গত: সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১ নভেম্বর সারাদেশে একযোগে বিদ্যুত বিপর্যয় ঘটে। এর আগে ১৯৯৮ সালে পুরোপুরি, ২০০৩ সালে আংশিক এবং ২০০৭ সালের নভেম্বরে সিডরের কারণে ও ডিসেম্বরে একই ধরনের বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটে।