গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ইস্যুতে সবার বক্তব্য নেবে নির্বাচন কমিশন

 

স্টাফ রিপোর্টার: আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে এবার সকল মহলের মতামত গ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিশেষ করে নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সিনিয়র সাংবাদিক, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সাবেক অভিজ্ঞ কর্মকর্তা ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সাথে পর্যায়ক্রমে সংলাপে বসবে বর্তমান কমিশন। খসড়া রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী জুলাই থেকে সংসদ নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ শুরু হচ্ছে। একইসাথে রোডম্যাপে পর্যাপ্ত দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগের ওপর তাগিদ দেয়া হয়েছে। রোডম্যাপটি চূড়ান্ত হওয়ার পর তা ছোট বই আকারে সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে সরবরাহ করা হবে।

রোডম্যাপের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) খান মো. নূরুল হুদা জানিয়েছেন, খসড়া রোডম্যাপে সাতটি বিষয় প্রাধান্য দেয়া হলেও আমাদের মূল লক্ষ্য অর্থ ও পেশী শক্তির অবৈধ ব্যবহার মুক্ত এবং সকল রাজনৈতিক দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা।  সংবিধান অনুযায়ী আগামী  ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কেননা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। সংসদ গঠিত হয় ২৯ জানুয়ারি। বিদ্যমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন পূর্বে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

ইসি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ না করলেও আগামী নির্বাচনে সকল দলকে আনার সব ধরনের চেষ্টা করা হবে। রাজনৈতিক দলগুলো যাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তার জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। বর্তমান কমিশনের লক্ষ্য আগামীতে ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’। খসড়া রোডম্যাপে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোকে প্রচারে সমান সুযোগ রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। প্রণীত রোডম্যাপে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থার সংকট সৃষ্টি হয় এমন বিধানও বাদ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিষয়টি আগের প্রস্তাবিত রোডম্যাপে থাকলেও বর্তমান খসড়া রোডম্যাপ থেকে বাদ পড়েছে। আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করবে না ইসি। কমিশন আশা করছে, রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করা হলে সব দলকে নিয়ে আগামীতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। এছাড়া নির্বাচনকে আরো গ্রহণযোগ্য করতে বিদেশিদেরও মতামত নেবে কমিশন। ইতোমধ্যে তিনজন রাষ্ট্রদূত সিইসির সঙ্গে বৈঠক করে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে তাদের মতামত তুলে ধরেন।

ইসি গত মঙ্গলবার খসড়া যে রোডম্যাপ করেছে তার সঙ্গে ইসি সচিবালয়ের প্রস্তাবিত রোডম্যাপের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। পুরনো এবং নতুন রোডম্যাপ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ইসি সচিবালয়ের প্রস্তাবিত রোডম্যাপে ২৩ কর্মপরিকল্পনা সংবলিত প্রস্তাবনা থাকলেও এবার তা কমিয়ে ৭টিতে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। বাদ দেয়া হয়েছে ইসির খরচে ভোটার স্লিপ বিতরণ, ডিজিটাল মনিটর স্থাপন ও নির্বাচনী ব্যয় মনিটরিং। আগের রোডম্যাপ ১৭ পাতার হলেও নতুন প্রণীত কর্মপরিকল্পনা মাত্র ৪ পাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।

সংসদ নির্বাচনকে অর্থ ও পেশীশক্তির ব্যবহার মুক্ত এবং সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরির জন্য আইনি কাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের মতামত নেয়ার ওপর তাগিদ দেয়া হয়েছে। আগামী জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে এ সংক্রান্ত বিধান চূড়ান্ত করার ওপর জোর দেয়া হয়েছে।

তিনশ সংসদীয় নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্বিন্যাসের জন্য আগস্ট থেকে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় রাখা হয়েছে। ভোটারদের তালিকাভুক্ত, মৃত ভোটারদের কর্তন ও ভোটার এলাকা স্থানান্তর কার্যক্রম শেষ করতে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে আগামী বছরের ১৮ জুনের মধ্যে এ কাজ সম্পন্নের সময়সীমা রাখা হয়েছে। আর ভোটারদের সুবিধার্থে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের জন্য আগামী বছরের জুন থেকে আগস্টের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশ করা হয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন থেকে নিবন্ধন দেয়া পর্যন্ত সময় রাখা হয়েছে আগামী অক্টোবর থেকে পরের বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে আগামী বছরের জুলাই থেকে সময়সূচি ঘোষণার পূর্বে এমনকি ভোট গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত।

নির্বাচনী ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সময়ক্ষেপণ সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে রোডম্যাপে। এর মধ্যে ডিজিটাল পদ্ধতিতে অভিযোগ প্রাপ্তি, মনোনয়ন দাখিল, ভোটকেন্দ্র ও ভোটার নম্বর প্রদান ও ফলাফল প্রকাশের ব্যবস্থা করা। নির্বাচনী প্রচারে সব সময় ক্ষমতাসীনরা বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো নির্বাচনী প্রচারে যাতে সমান সুযোগ পায় সে জন্য প্রেস ও টিভি চ্যানেলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনকালীন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ইসি নিজে উদ্যোগ নেবে। নির্বাচনে কারচুপি ও অবৈধ ক্ষমতার প্রভাবমুক্ত রাখতে আইনানুগভাবে দক্ষতা ও প্রশিক্ষিত কর্মকর্তাদের নির্বাচনী কাজে যুক্ত করা হবে। ভোটাররা যাতে ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ, ভোটকেন্দ্রে গমন এবং শান্তিপূর্ণভাবে ভোট প্রদান করে বাড়ি ফিরতে পারেন তার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করে কার্যকরী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হবে। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের বেশিরভাগ প্রস্তুতি আগামী মার্চের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। বাকি কাজ তফসিল ঘোষণার আগে বা পরে করলে তেমন সমস্যা হবে না।