গোলাম আযমের স্ত্রী ও ভাতিজা বিমানবন্দর থেকে ফেরত

স্টাফ রিপোর্র্টার: জামায়াতের সাবেক আমির, যুদ্ধাপরাধের মামলায় ৯০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মরহুম গোলাম আযমের স্ত্রী সৈয়দা আফিফা আযম ও তার ভাতিজা লুৎফুল কবির সৌদি আরব যাওয়ার সময় আটকে দেয়া হয়। গতকাল বুধবার বিকেলে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিআইপি দিয়ে ইমিগ্রেশন করানোর সময় তাদের আটক করা হয়। পরে তাদের মুচলেকা রেখে বিমানবন্দর থেকে বের করে দেয়া হয়। বিষয়টি গোয়েন্দারা যখন নিশ্চিত হন, শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হাসান তাদের পরিচয় গোপন রেখে ভিআইপি মর্যাদার ব্যবস্থা করেন, তখন এ নিয়ে তোলপাড় চলে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিষয়টি আমার নোটিসে এখনও আসেনি। তবে যদি এ অভিযোগ সত্য হয়, তাহলে ওই পরিচালকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কারণ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে যুদ্ধাপরাধের কোনো আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব থাকাটা রাষ্ট্রের জন্য নিরাপদ নয়।

জানতে চাইলে রাশেদ খান মেনন বলেন, এ ঘটনায় যারা দোষী হবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আগে দেখা যাক কে কতোটুকু দায়ী। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব সিভিল এভিয়েশনের। বিমানবন্দর সূত্র জানায়, সৌদি আরব যাওয়ার জন্য গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে চারটায় বিমানবন্দরের ভিআইপি দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন সৈয়দা আফিফা আযম ও তার ভাতিজা লুৎফুল কবির। সাথে গোলাম আযমের ছেলে সেনাবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমান আযমীর স্ত্রী তাসনীম আঞ্জুম ও অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব দেলেনা বেগম। তারা দ্রুত হেঁটে চলে যান ভিআইপি ইমিগ্রেশন কাউন্টারে। এ সময় তাদের সর্বোচ্চ মর্যাদায় দ্রুততম সময়ে প্রটোকল সম্পন্ন করার কাজে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ইফতেখারকে ইমিগ্রেশনে পাঠান পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হাসান। ততোক্ষণে লুৎফুল কবিরের ইমিগ্রেশন সিল মারার কাজ শেষ। এরপর যখন আফিফা আযমের পাসপোর্ট হাতে নেন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা, তখন সেখানে ছুটে যায় একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তাতে এ পাসপোর্ট নিয়ে আর অগ্রসর হয়নি ইমিগ্রেশন। পরে দেখা যায়, আফিফা আযমসহ সব যুদ্ধাপরাধীদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যা ও নিকটাত্মীয়দের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

বিমানবন্দরে কর্মরত একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, যেখানে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এ ধরনের যাত্রীদের ওপর, সেখানে কিভাবে তাদের ভিআইপি মর্যাদার সুযোগ দেয়া হলো। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, পরে দুজনকেই ইমিগ্রেশন থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর সেখানে উপস্থিত হয় আমর্ড পুলিশ সব গোয়েন্দাদের প্রতিনিধিরা। তাৎক্ষণিক অনুসন্ধান চালিয়ে তারা নিশ্চিত হন, দেলেনা বেগম নামের আত্মীয়ের নামে একটা পাসের বিপরীতে গোলাম আযমের স্বজনদের পরিচয় গোপন রেখে ভিআইপি দিয়ে ভেতরে ঢুকানো হয়। তখন আর্মড পুলিশের উপস্থিত কর্মকর্তারা পরিচালক জাকির হোসেনের কাছে জানতে চান, দেলেনা বেগমের নামে ইস্যু পাসে বড় জোর একজন সঙ্গী ভেতরে ঢুকতে পারেন। সেখানে কিভাবে চারজনকে ভিআইপি মর্যাদা দেয়া হলো এমন প্রশ্নের জবাবে জাকির হোসেন জবাব দেন, আইনত পায় না। কিন্তু এখানকার ট্র্যাডিশনে তো অনেকেই ভিআইপি ইউজ করে।

জানা যায়, তাদের আটকের পর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের সাথে থাকা লাগেজ ও কাগজপত্র ব্যাপক তল্লাশি চালানো হয়। এভাবে ঘণ্টাখানেক আটকের পর সাড়ে পাঁচটায় তাদের দুজনের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। একটি গাড়িতে করে মুহূর্তেই তারা বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।

এদিকে খবর পেয়ে বিপুলসংখ্যক সাংবাদিক শাহজালালে হাজির হলে পরিচালক জাকির হোসেন তাদের ভেতরে ঢুকতে দেননি। এ সময় একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাংবাদিকদের পক্ষ নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন রাখেন, যুদ্ধাপরাধীদের আত্মীয়স্বজনদের গোপনে ভিআইপি মর্যাদায় পালানোর সুযোগ করে দেন আর সাংবাদিকদের ভেতরে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়। এটা কার স্বার্থে? কারা বিমানবন্দরের প্রতি হুমকিস্বরূপ সাংবাদিক না যুদ্ধাপরাধীরা।

এ ঘটনায় বিমানবন্দরে তোলপাড় চলে ঘণ্টাখানেক। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ এ ঘটনায় একটি জিডি রেকর্ড করে। এ বিষয়ে নিরাপত্তা শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে কোনো যুদ্ধাপরাধীদের এমন শুভাকাঙ্ক্ষীর আসীন থাকাটা জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।