গোয়েন্দা জালে মারজান!

স্টাফ রিপোর্টার: বিস্তারিত পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। তবে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিলো এবং এই হামলার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বেও ছিলেন সদ্য ছবি প্রকাশ করা মারজানের প্রকৃত পরিচয় সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। তবে গুলশান হামলায় সন্দেহভাজন এই জঙ্গিনেতা এখন ‘গোয়েন্দা জালে’ বলে আভাস দিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন পদস্থ কর্মকর্তা। গতকাল রাত পর্যন্ত অবশ্য এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কিছু জানায়নি কোনো কর্তৃপক্ষ। মারজানের বিষয়ে তথ্য চেয়ে গত শুক্রবার পুলিশের তথ্য পাওয়ার বিশেষ অ্যাপ ‘হ্যালো সিটি’তে তার ছবি প্রকাশ করা হয়। সেখানে তাঁকে গুলশান হামলার ‘অপারেশন কমান্ডার’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তার বয়স ২২ বা ২৩ বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। গতকাল শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মারজানের বিস্তারিত পরিচয় এখনো জানা যায়নি। তবে মনে হয়েছে, ঢাকায় বা দেশের বড় কোনো শহরে বেড়ে উঠেছে। এ কারণে ছবি প্রকাশ করে তাঁর সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হয়েছে। আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার সঙ্গে জড়িত এবং হামলাকারী জঙ্গিদের সঙ্গে মারজানের যোগাযোগ ছিলো বলে তথ্য পাওয়া গেছে। হলি আর্টিজানে হামলার পর রাত একটায় ইন্টারনেট-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত ভেতর থেকে জঙ্গিরা হত্যাযজ্ঞের ছবি তুলে তা মারজানসহ কয়েকজনকে পাঠিয়েছিল। ওই রাতে এসব ছবি আইএসের কথিত বার্তা সংস্থা আমাক-এ প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া আরও কিছু তথ্য পাওয়া গেছে, যাতে মনে হয়েছে, মারজান গুলশান হামলার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন।

এখন পর্যন্ত গুলশানের হামলায় নিহত জঙ্গিরা ছাড়া পরিকল্পনাকারী বা সমন্বয়কারী হিসেবে দুজনের নাম প্রকাশ করেছে পুলিশ। তারা হলেন মারজান ও তামিম চৌধুরী। যাঁদেরকে ‘নব্য জেএমবির’ নেতা বলছে পুলিশ। জানতে চাইলে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম (সিটি) বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম গতকাল বলেন, মারজান সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো যাচাই করা হচ্ছে। তবে তাঁর পরিচয় শনাক্ত করার মতো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। এর আগে গত শুক্রবার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মারজান হচ্ছে সাংগঠনিক নাম। তার ছবি পাওয়া গেলেও প্রকৃত নাম-ঠিকানা এখনো পাওয়া যায়নি। তিনি বাংলাদেশি, সম্ভবত ঢাকা শহরেই কোথাও তিনি থাকতে পারেন এবং তাকে ঢাকা শহরেরই কেউ বলে মনে হচ্ছে।

কাউন্টার টেররিজম বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা গতকাল বলেন, মারজান নামের একজনকে আরেকটি গোয়েন্দা সংস্থা ধরেছে বলে তাদের কাছে তথ্য আছে। ওই মারজান গুলশান হামলার সঙ্গে যুক্ত মারজান নন। গুলশান হামলার সঙ্গে যুক্ত মারজানের একটি ফেসবুক আইডি পাওয়া গেছে। সেখান থেকে তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। সব তথ্য বিশ্লেষণ করে মনে হয়েছে, মারজান গুলশান হামলার অন্যতম সমন্বয়ক তামিম চৌধুরীর খুব ঘনিষ্ঠ। যে কারণে বয়স অপেক্ষাকৃত কম হলেও তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, মারজান কথাবার্তা ও আচরণে খুব আধুনিক। একসময় কল্যাণপুর এলাকার আশপাশে থাকতেন। তার সম্পর্কে তথ্য বের করতে পারলে পুরো চক্রটি সম্পর্কে জানা যাবে।

পুলিশের দেয়া এসব তথ্যে কতটা আস্থা রাখা যায় এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমডোর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘আমার মনে হয়, যারা তদন্ত করছে, তাদের ওপর আমাদের বিশ্বাস রাখা উচিত। যদি পারি সহায়তা করব। এসব বিষয়ে গণমাধ্যমের অনুমানভিত্তিক কিছু বলা ঠিক না।’