গুজবে তটস্থ চুয়াডাঙ্গা ॥ শহরতলিসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে রাত জেগে পাহারা

গাইদঘাটে মানসিক প্রতিবন্ধীকে মেরে পুলিশে সোপর্দ ॥ আলুকদিয়ার মনিরামপুরে চিৎকারের খবর দিয়ে পুলিশি জেরার মুখে এক যুবক
স্টাফ রিপোর্টার: গুজব আর গুজব। গুজবের জেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন চুয়াডাঙ্গা। ‘এখানে শিশু অপহরণের চেষ্টা, ওখানে অপহৃত হয়েছে নারী।’ এরকম ভুয়া খবর ছড়িয়ে কে বা কারা তটস্থ করে তুলেছে চুয়াডাঙ্গার পুলিশ-সাংবাদিকসহ সাধারণ জনগণকে। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের শহরতলি গ্রামগুলোতে স্থানীয়ভাবে রাত জেগে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জানা গেছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশি তৎপরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান জানিয়েও স্বস্তি মিলছে না। গুজবে কান দিয়ে হুঁচুকে মেতে কোনো কোনো গ্রামের সাধারণ মানুষ দলবদ্ধ হয়ে তল্লাশি শুরু করে শেষ পর্যন্ত ছাড়ছে দীর্ঘশ্বাস। কেউ কেউ লজ্জায় লুকোচ্ছেন মুখ। গতকাল গাইদঘাটের এক যুবককে ধরে মেরে বেঁধে রেখে পুলিশে দেয়ার পর যখন জানা যায় বহিরাগত যুবক মানসিক প্রতিবন্ধী, তখন গ্রামের দায়িত্বশীলদের অনেকেই ছি! ছি! বলতে শুরু করে। অপরদিকে আলুকদিয়া মনিরামপুরে বৃদ্ধা নিহারনের আজগুবি আতঙ্কিত হয়ে চিৎকার শুনে স্থানীয়দের মধ্যে হইচই শুরু হয়। পুলিশে খবর দিয়ে বেকায়দায় পড়েছে আকাশ। সে শফির ছেলে। তাকে গতরাত ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় নিয়ে শুরু হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদ। নিহারন নেছা রাতে কেন অপহরণ আতঙ্কে চিৎকার করলেন? এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বলেছেন, দেখলাম দু হাত তুলে ওরা আমাকে ডাকছিলো। তাই দেখেই তো চিৎকার করলাম। নিহারন নেছা এ কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে সেখানে তেমন কাউকেই দেখা মেলেনি। অপরিদকে গতরাত সাড়ে ১০টার দিকে জেলা শহরের পৌর কলেজপাড়ায় বোরকাপরা কয়েকজন বহিরাগত অবস্থান নিয়েছে বলে খবর রটে। এ খবরে কান দিয়ে স্থানীয়রা তল্লাশি শুরু করে। শেষ পর্যন্ত জানা যায়, সাকিব নামের ১৫-১৬ বছরের এক কিশোরের মোবাইলফোনের আলোতে বিভ্রান্ত হয়ে ছড়ানো খবরের ভিত্তিতেই গোটা তল্লাট তটস্থ হয়ে পড়ে। দুপুরে তালতলা হাজরাহাটির দু যুবতীকে অপহরণ করা হয়েছে বলে চুয়াডাঙ্গা শহরের কলেজ এলাকায় খবর রটে। সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে তেমন কোনো তথ্যই মেলেনি। পরে জানা এটাও ছিলো গুজব। একের পর এক গুজব নিয়ে চুয়াডাঙ্গায় কয়েকদিন ধরে মাঝে মাঝেই অস্থিরতা ফুটে উঠছে।
শিশু-কিশোর-নারী অপহরণের গুজব প্রধানত মোবাইলফোনেই বেশি ছড়ানো হচ্ছে। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে এরকম হয়েছে বলে গুজব ছড়াতেই তা সেলফোনে সেই কালো ছেলে কাক হওয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। এসব গুজবে কান দিয়ে পুলিশ ও সাংবাদিকদেরও ছুটতে হচ্ছে দিগি¦দিক। গতকাল সকাল হতে না হতেই চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের বিভিন্ন হাটবাজারে খবর রটে কয়েকটি গ্রামে নাকি গণডাকাতি হয়েছে। এ খবরের সত্যতা জানতে গেলে সাংবাদিকদেরই পড়তে হয়ে হাস্যরসের মধ্যে। বেলা গড়ানোর সাথে সাথে যুবতী-নারী অপহরণের রকমারি গুজব ছড়াতে থাকে এ মহল্লা থেকে ওই মহল্লায়। গুজবে কান দিয়ে অনেক অভিভাবকই তাদের স্কুল-কলেজপড়–য়া মেয়েদের বাইরে বের হতে দেননি। গুজবে কান দিয়ে গতপরশু বেলগাছি গ্রামের একজনকে মারপিট করা হয়। গতকালও বিকেলে মারধর করা হয়েছে গাইদঘাটে উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘোরাফেরা করা যুবক সেলিমকে (২১)। সে জামালপুরের ঘোড়ারকান্দিগ্রামের দানেম আলীর ছেলে। মারপিটের পর পুলিশে দেয়া হয়। সদর থানা পুলিশ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছে সেলিম মানসিক প্রতিবন্ধী। এছাড়াও গতকাল নূরনগর, সাতগাড়ি, বেলগাছিসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিভিন্ন সময়ে অপহরণ নিয়ে গুজব রটে। জেলা সদরের পাঁচমাইল থেকে এক মহিলাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে গুজব ছড়ানো হয়। তাছাড়া চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার কুড়–লগাছিসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় শিশু অপহরণের বিষয়টি ভুয়া বলে প্রমাণিত হওয়ার পরও বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। তবে গতকাল জীবননগর এলাকায় গুজব তুলনামূলক কম।
চুয়াডাঙ্গা শহরতলিসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে সন্ধ্যার পর থেকেই স্থানীয়রা পালাক্রমে পাহরা শুরু করেছে। যারা পাহারা দিচ্ছেন তাদের মধ্যে বেলগাছির কয়েযকজনের সাথে যোগাযোগ করা হলে বলেছেন, আমরাও বুঝতে পারছি গুজব। তবে গুজবের সুযোগে কোনো চক্র ক্ষতি করতে পারে ওই শঙ্কায় পাহারা দিতেই হচ্ছে। অবশ্য কেউ কেউ বলেছেন, নারীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে বলে ছড়ানো খবরের সত্য মিথ্যা নিয়ে ভাবার চেয়ে নিজেরা সাবধান হয়েছি। পুলিশ অবশ্য বলেছে, কোনো কারণ ছাড়াই গুজবে কান দিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এরপরও পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। গুজব রটানোর সাথে জড়িতদের সে যেই হোক তাদেরও ধরে আইনে সোপর্দ করার প্রক্রিয়া করা হচ্ছে।