গাড়িচালক পদে নিয়োগে গাফিলতি : আলমডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান সাময়িক বরখাস্ত

পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ কে আর্থিক লেনদেনের ক্ষমতা প্রদান : ৭ দিনের মধ্যে গাড়িচালক পদে নিয়োগের নির্দেশ

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান ডা. মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে এ বরখাস্তের কথা জানিয়েছে। পৃথক আদেশপত্রে পরিষদের প্যানেল-১ এর ভাইস চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনকে পরিষদের আর্থিক ক্ষমতা দেয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। অপর এক আদেশপত্রে ৭ দিনের মধ্যে গাড়ি চালক পদে নিয়োগেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের গাড়িচালক পদে নিয়োগ কমিটির সুপারিশ মোতাবেক এক বছরের অধিক সময় অতিবাহিত হলেও গাড়িচালক পদে নিয়োগ না দেয়ার অভিযোগ উত্থাপিত হয়। এরই প্রেক্ষিতে তদন্তও হয়। এরই এক পর্যায়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. সবুর হোসেন রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বরখাস্তের আদেশ সংবলিত ফ্যাক্সবার্তা চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ও আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর প্রেরণ করেছেন। এ বিষয়ে ডা. মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীরের সাথে যোযোগ করা হলে তিনি বলেন, অভিযোগ উত্থাপনের পর তদন্তের কমিটির সামনে বলেছিলাম- আমি বিধি-বিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। একই সাথে বলেছিলাম, নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে যা করা হয়েছে তা পরিষদের সিদ্ধান্তেই করা হয়েছে, একক সিদ্ধান্তে নয়। এরপরও শুনছি সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

ফ্যাক্সবার্তার প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, যেহেতু ডা. মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর চেয়ারম্যান, আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ, চুয়াডাঙ্গা কর্তৃক উপজেলা পরিষদের গাড়িচালক পদে নিয়োগের লক্ষ্যে বাছাই কমিটির সুপারিশ যথাসময়ে পরিষদ সভায় উপস্থাপন না করে ১ বছর ১ মাস ১৮ দিন যাবত নিয়োগ প্রদান করেননি। যেহেতু, কি পারিপার্শ্বিকতার কারণে তিনি উক্ত পদে চুড়ান্ত নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেননি তা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেননি। যেহেতু, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, আলমডাঙ্গার চরম গাফিলতির কারণে দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও উল্লেখিত পদে নিয়োগদানের বিষয়টি পরিষদ সভায় উপস্থাপন না করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ অনুযায়ী কার্যভার হস্তান্তর করা হয়েছে এবং তার দ্বারা অত্র পরিষদের কার্যক্রম জনস্বার্থের পরিপন্থি মর্মে সরকার মনে করে। সেহেতু আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

পৃথক আর একটি ফ্যাক্স বার্তায় খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও প্যানেল চেয়ারম্যান-১ কে ওই পত্র প্রাপ্তির ৭ দিনের মধ্যে আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের কর্মচারী যাচাই-বাছাই কমিটি কর্তৃক সুপারিশকৃত গাড়িচালক পদে প্রথম স্থান অধিকারী মো. হামিদুল ইসলাম, পিতা মো. জালাল উদ্দিন, সাং গোবিন্দপুর, উপজেলা আলমডাঙ্গাকে নিয়োগ করে স্থানীয় সরকার বিভাগকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। অপর ফ্যাক্সবার্তায় আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করায় এ উপজেলা পরিষদের দাপ্তরিক কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে পরিচালনার স্বার্থে উপজেলা পরিষদের (কার্যক্রম বাস্তবায়ন) বিধিমালা, ২০১০ এর বিধি ১৫ অনুযায়ী প্যানেল চেয়ারম্যান-১ (ভাইস চেয়ারম্যান) কে আর্থিক ক্ষমতা নির্দেশক্রমে প্রদান করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এক বছরের অধিককাল পূর্বে আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের গাড়িচালক পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক দরখাস্তকারীদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। পরীক্ষায় প্রথম হওয়ায় ওই নিয়োগ কমিটি আলমডাঙ্গা গোবিন্দপুর গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে হামিদুল ইসলামকে নিয়োগদানের জন্য সুপারিশ করে। কিন্তু নানা অজুহাতে উপজেলা চেয়ারম্যান তাকে নিয়োগ না দিয়ে নিজ গ্রামের রূপস নামের এক ব্যক্তিকে গাড়িচালক নিযুক্ত করেন। ওই ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয়ে হামিদুল ইসলাম চুয়াডাঙ্গা জজকোর্টে অভিযোগ দাখিল করেন। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত করে।