গাজীপুর কালিয়াকৈরে পোশাক কারখানায় আগুন ভাঙচুর

স্টাফ রিপোর্টার: ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা করার দাবিতে গাজীপুর ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে পোশাক শ্রমিকরা। রোববার সকাল থেকে গাজীপুরের বেশ কিছু পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করে। দফায় দফায় মহাসড়ক অবরোধ করে যানবাহনে ব্যাপক ভাংচুর চালানো হয়। এক পর্যায়ে তারা গার্মেন্ট কারখানায় হামলা শুরু করে। যমুনা ডেনিমসসহ অসংখ্য গার্মেন্ট কারখানা ব্যাপক ভাংচুরের পাশাপাশি আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের কাজে যোগদানের ব্যাপারে অনুরোধ জানালে উল্টো পুলিশের ওপর চড়াও হয় তারা। এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করলে শ্রমিকরা তাদের ওপর পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এ সময় পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। শুরু হয় উভয়ের মাঝে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। গাজীপুর, কালিয়াকৈরসহ আশপাশের এলাকায় আতংক বিরাজ করছে। সহিংসতার আশংকায় বন্ধ করে দেয়া হয় গাজীপুর, কোনাবাড়ী, টঙ্গী ও চন্দ্রাসহ আশপাশের বহু গার্মেন্ট। আবারও হামলার আশংকায় আতংকিত হয়ে পড়েছেন পোশাক শিল্প মালিকরা।
নৌপরিবহনমন্ত্রী মোঃ শাজাহান খানের উসকানিতেই ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকার দাবিতে শ্রমিকরা এই তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরিবহন শ্রমিক নেতা হিসেবে পরিচিত শাজাহান খান হঠাৎ করেই গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা হিসেবে আবির্ভাব হন। শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গার্মেন্ট শ্রমিকদের নিয়ে এক সমাবেশের মাধ্যমে নিজেকে গার্মেন্ট শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ন্যূনতম মজুরির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে শ্রমিকদের আশ্বাস দেন। তার এই উসকানিমূলক বক্তব্যের জের ধরেই অশান্ত হয়ে ওঠে তৈরি পোশাক খাত। অভিযোগ রয়েছে, রোববারের সহিংসতায় বহিরাগত ও পরিবহন শ্রমিক নামধারী কিছু সন্ত্রাসী অংশ নেয়। মহাসড়ক অবরোধের এক পর্যায়ে হঠাৎ করেই শ্রমিকরা গার্মেন্ট কারখানা লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে। দুপুরে গাজীপুর সদর উপজেলার কোনাবাড়ী এলাকায় কোনাবাড়ী কমপ্লেক্সে যমুনা ডেনিমস লিমিটেড কারখানায় বহিরাগত শ্রমিকরা আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় তারা ব্যাপক ভাংচুর চালায়। উত্তেজিত শ্রমিকরা কারখানার তিনজনকে পিটিয়ে আহত করে।

কারখানা ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওইদিন সকালে ২/৩ হাজার বহিরাগত শ্রমিক লাঠিসোটা নিয়ে মিছিল সহকারে কোনাবাড়ী-কাশিমপুর সড়কের পাশে কোনাবাড়ী কমপ্লেক্সে যমুনা ডেনিমস কারখানায় হামলা চালায়। শ্রমিকরা কারখানার পূর্ব পাশের সীমানা প্রাচীর ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। উত্তেজিত শ্রমিকরা কারখানার ফেব্রিক্স স্টোরে আগুন ধরিয়ে দিলে গুদামের বিপুল পরিমাণ কাপড় পুড়ে যায়। এ সময় শ্রমিকরা ওই বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় অফিসের আবাসিক কক্ষে ও তার পাশের কক্ষে জানালার গ্লাস ভাংচুর করে ও ওই অফিসকক্ষে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং কারখানার ভেতরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে কারখানার নিজস্ব প্রশিক্ষিত অগ্নিনির্বাপক ও নিজস্ব কর্মী বাহিনী দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে এসে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ ঢাকা ও গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসকে অবহিত করলে তারা আগুন নিয়ন্ত্রণের খবর শুনে রাস্তা থেকে ফিরে যায়। এ সময় শ্রমিকরা ওই কারখানার ভেতরে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। পরে তারা নিট সেকশনের আয়রন সেকশনম্যান আবদুর রাজ্জাক, টাইমকিপার তরিকুল ইসলাম ও সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট কর্মকর্তাদের পিটিয়ে আহত করে। আহতদের উদ্ধার করে কারখানার ভেতরে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা কারখানার মূল ভবনে প্রবেশ করে নিটিং সেকশন, অপটিমড জিমন্স, সেমপন সেকশনসহ বিভিন্ন ভবনে জানালার গ্লাস ভাংচুর করে। এ সময় ওই কারখানার শ্রমিকরা ছোটাছুটি করে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়। খবর পেয়ে গাজীপুর শিল্প পুলিশ ও জয়দেবপুর থানা পুলিশ ও কোনাবাড়ী ফাঁড়ি পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে শ্রমিক-পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও জলকামান দিয়ে বহিরাগত শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার অপূর্ব বল জানান, যমুনা ডেনিমস লি. কারখানায় আগুন লাগার পর তাদের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপক দল আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে কারখানার ৮০-৯০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। গাজীপুর শিল্প পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত কবীর জানান, বহিরাগত কিছু বখাটে শ্রমিক ওই কারখানার গেট ভাংচুর করে। একপর্যায়ে কারখানায় আগুন ধরিয়ে দিলে পুলিশ জলকামান ও টিয়ার শেল ব্যবহার করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। কারখানার জিএম অ্যাডমিন আমির আলী জানান, বহিরাগত শ্রমিক এসে কারখানায় আক্রমণ করে। শ্রমিকরা কারখানায় প্রচুর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। শ্রমিকরা আগুন দেয়ার ফলে ফেব্রিক্স স্টোরের কাপড় আগুনে পুড়ে যায়। কারখানার পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, কারখানায় আগুন দেয়ার ফলে ৫০ লাখ টাকার কাপড় পুড়ে নষ্ট হয়েছে। কারখানায় ভাংচুর করার ফলে ৩০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বহিরাগত শ্রমিকরা সিনিয়র ম্যানেজম্যানকে আহত করেছে বলে তিনি জানান। পরিচালক আরও বলেন, আগুন দেয়ার ফলে কাপড়ের কোয়ালিটি নষ্ট হয়ে ১৯ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ন্যূনতম বেতন ৮ হাজার টাকার দাবিতে রোববার সকাল ৯টার দিকে গাজীপুর মহানগরের ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট সংলগ্ন তিন সড়ক এলাকায় ইন্টারমেক্স গ্র“প, স্প্যারো এ্যাপারেল, এএসটি নীট ওয়্যার লি., বাইপেড সোয়েটার, ইন্টার্ন ক্র্যাফট সোয়েটার কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি শুরু করে। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানার কাচ ভাংচুর এবং নিরাপত্তা কর্মীদের মারধর করে। তারা ঢাকা- গাজীপুর সড়কে অবস্থান নেয় এবং যানবাহন চলাচলে বাধা প্রদানসহ সেখানে বেশ কিছু যানবাহন ভাংচুর করে। পরে পুলিশ এসে লাঠিচার্জ করে শ্রমিকদের ওই সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

অপরদিকে কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় নায়েগ্রা টেক্সটাইল কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। পরে তারা সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কারখানার সামনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বেশকিছু যানবাহনের কাচ ভাংচুর করে অবরোধের সৃষ্টি করে। এ সময় পুলিশ তাদের মহাসড়ক থেকে সরাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে শ্রমিকরা সেখান থেকে বিক্ষোভ করতে করতে পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার গোমতী টেক্সটাইল, ইকোটেক্স লিমিটেড, এপেক্স গার্মেন্টসহ বেশ কয়েকটি কারখানায় ইটপাটকেল ছুড়ে কাচ ভাংচুর করলে শ্রমিকরা কারখানা থেকে বেরিয়ে আসে। পরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেয় এবং সেখানেও মহাসড়ক অবরোধ করে। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ ও গাজীপুর শিল্প পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে তাদের লক্ষ্য করে শ্রমিকরা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এ সময় শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ তাদের লাঠিচার্জ করে ধাওয়া দিয়ে কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করলে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং মহাসড়ক অবরোধমুক্ত হয়। পরে ১১টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক জানান, শ্রমিকদের লাঠিচার্জ করে ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করলে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এর আগে শনিবার ঢাকায় নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের শ্রমিক মহাসমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য জোরপূর্বক গাজীপুরের বিভিন্ন পোশাক কারখানা বন্ধ রেখে শ্রমিকদের মহাসমাবেশে যোগ দিতে বাধ্য করেছে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকটি কারখানা মালিক। তারা জানান, শনিবার সকালে শ্রমিকরা যথারীতি কাজে যোগ দিলেও কিছুক্ষণের মধ্যে আশপাশের কিছু পোশাক কারখানার শ্রমিক ও কিছু বহিরাগত লোকজন একত্রিত হয়ে বিভিন্ন কারখানার সামনে গিয়ে কারখানায় ইটপাটকেল ছুড়ে কারখানায় ভাংচুর করে। তারা জোরপূর্বক শ্রমিকদের বের করে আনে এবং তাদের মহাসমাবেশে যোগ দিতে বাধ্য করে। পরে বিভিন্ন কারখানার কর্তৃপক্ষ তাদের কারখানা ওই দিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করে। রোববার মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গাজীপুর মহানগরের, কোনাবাড়ী, নাওজোরে দিগন্ত সোয়েটার, সোয়ান, এমএম নীট ওয়্যারসহ আশপাশের অন্তত অর্ধশতাধিক পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি করে। তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বেশ কিছু যানবাহন ভাংচুর করে। পরে পুলিশ এসে টিয়ার শেল ও জলকামান ব্যবহার করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। কারখানায় ভাংচুর করার অভিযোগে কয়েকটি পোশাক কারখানার কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা ও সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন কারখানায় আবার শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। রোববার কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় শ্রমিক-পুলিশ ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি সামাল দিতে উপজেলার সব কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
কারখানা, শ্রমিক ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই দিন সকালে শ্রমিকরা কারখানায় কাজ করতে গিয়ে কাজে যোগদান না করে কর্মবিরতি পালন করে। শ্রমিকরা তাদের ঢাকার সমাবেশে ঘোষণা অনুযায়ী বেতন বৃদ্ধির দাবিতে কারখানা থেকে বের হয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে জড়ো হয়। এ সময় এক কারখানার শ্রমিক অন্য কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের কারখানা থেকে বের করার চেষ্টা চালায়। কোনো কোনো স্থানে শ্রমিকদের সঙ্গে শ্রমিকদের হামলা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একযোগে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা সড়কে বের হয়ে আসে। শ্রমিকদের মিছিল ও বিক্ষোভ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা,পল্লী বিদ্যুৎ, জিরানী, সফিপুর, মৌচাক, কোনাবাড়ী এলাকায় সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ থাকে। ফলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় এক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে অন্য কারখানার শ্রমিকদের সংঘর্ষ বাধে। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ ও গাজীপুর শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। পরে উত্তেজিত শ্রমিকরা উপজেলার নিটপ্লাস, ঝালু নিটিং ব্ল–ওসন, স্টারলিং, ইন্টারস্টফ, ডিভাইন, ফেরারটেড, লিজ ফ্যাশন, মোয়াজুদ্দিনসহ ১০-২০টি কারখানা ভাংচুর করে। অপরদিকে উপজেলার তেলিরচালা এলাকায় পূর্বাণী গার্মেন্ট কারখানাসহ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে যানবাহন ভাংচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশ, পথচারী ও শ্রমিকসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে।
এ ব্যাপারে কালিয়াকৈর থানার ওসি ওমর ফারুক বলেন, বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ, যানবাহন ও কয়েকটি কারখানা ভাংচুর করে। পরে টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও লাঠিচার্জ করে শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
টঙ্গীতে শ্রমিক বিক্ষোভ ভাংচুর আহত ২০ : টঙ্গী প্রতিনিধি আহমেদ সুবীর জানান, গাজীপুরের টঙ্গী পাগাড় এলাকায় কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিক ন্যূনতম বেতন ৮ হাজার টাকা করার দাবিতে রোববার দুপুরে বিক্ষোভ ও ভাংচুর করেছে। অপরদিকে একই দাবিতে শ্রমিকরা বেলা ১২টায় ও বিকালে টঙ্গী বাজার এলাকার সেনাকল্যাণ ভবনে অবস্থিত এ্যবা গ্র“প পোশাক কারখানায় দফায় দফায় ভাংচুর করে। ভাংচুর চলাকালে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে শ্রমিক-পুলিশ মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশের লাঠিচার্জে অন্তত ২০ শ্রমিক আহত হয়েছে। আহতদের উদ্ধার করে টঙ্গী হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
পুলিশ ও আহত শ্রমিকরা জানায়, রোববার দুপুর ২টায় পাগাড় ও বিসিক এলাকার জাবের জোবায়ের, শিশির, অনন্ত, কিরন, হামিদ টেক্সটাইল কারখানার সহস াধিক শ্রমিক বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। তারা কারখানার সামনের রাস্তায় অবস্থান করে যান চলাচল বন্ধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় একই এলাকার বেশ কয়েকটি কারখানার হাজার হাজার শ্রমিক কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভে অংশ নেয়। খবর পেয়ে গাজীপুর শিল্প পুলিশ ও টঙ্গী মডেল থানার পুলিশ শ্রমিকদের বিক্ষোভ থামানোর চেষ্টা করে। এ সময় শ্রমিক ও পুলিশ সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পুলিশ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে বেধড়ক লাঠিপেটা করে। কারখানার প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক নিয়ন্ত্রণে এ সময় পুলিশ দিগি¦দিক হয়ে পড়ে। শ্রমিকদের হামলায় টঙ্গী থানার ওসি আবুল কালাম আজাদসহ ২০ জন পুলিশ আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শতাধিক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে। একপর্যায়ে শ্রমিকরা আশপাশের কারখানাগুলোর প্রায় ১০টি ভবন ও বেশ কয়েকটি গাড়িতে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। বিকাল চারটায় পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অপরদিকে একই দাবিতে শ্রমিকরা বেলা ১২টায় ও বিকালে টঙ্গী বাজার এলাকার সেনাকল্যাণ ভবনে অবস্থিত এ্যবা গ্র“প কারখানায় বিক্ষোভ ও ভাংচুর করে। পরে কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়।
হামিদ টেক্সটাইলের মহাব্যবস্থাপক মোঃ জসিমউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
টঙ্গী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, হাজার হাজার শ্রমিক একসঙ্গে রাস্তায় বের হওয়ায় এমনিতেই এলাকা অবরুদ্ধ ছিল। এর মধ্যে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করলে সংঘর্ষ বাঁধে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
উত্তরায় শ্রমিক বিক্ষোভে পুলিশের লাঠিচার্জ, আহত ১৫ : বেতন বৃদ্ধির দাবিতে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দীর্ঘ চার ঘণ্টা বিক্ষোভ করেছে কয়েক হাজার শ্রমিক। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ১৫ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। তবে পুলিশ দাবি করেছে, শ্রমিকদের ওপর কোনো হামলা করা হয়নি, তাদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এদিকে সরকারি চাকরিতে মর্যাদা বৃদ্ধির দাবিতে রোববার দুপুরে তেজগাঁও সাতরাস্তা এলাকায় সড়ক অবরোধ করে ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এতে ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি খন্দকার রেজাউল হাসান জানান, বেতন বাড়ানোর দাবিতে রোববার সকাল ৮টার দিকে কয়েকটি পোশাক কারখানার সহস াধিক শ্রমিক উত্তরা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে তারা রাস্তা অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ বুঝিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়। তবে পুলিশ কোনো অ্যাকশনে যায়নি। এতে যানচলাচল বিঘœ হয়নি বলে তিনি জানান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথমে উত্তরা এলাকায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে। এ সময় পুলিশ তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করলে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে লাঠিচার্জ করলে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশের লাঠিচার্জে অন্তত ১৫ জন শ্রমিক আহত হন। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মিছিল নিয়ে দক্ষিণখানের দিকে যায়। সেখানে শ্রমিকরা দুপুর পর্যন্ত বিক্ষোভ করে।
ডিএমপি’র উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) নিসারুল আরিফ জানান, শনিবার পোশাক শ্রমিকদের সমাবেশের পর গতকাল উত্তরখান ও দক্ষিণখানের ১৫-২০টি পোশাক কারখানার শ্রমিক ন্যূনতম মজুরির দাবিতে বিক্ষোভ করে। পুলিশ তাদের বুঝিয়ে শান্ত করে একাধিকবার কারখানার ভেতর পাঠিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে বেলা ১২টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
৮টি যানবাহনে আগুন : রোববার সন্ধ্যায় গাজীপুর মহানগরের সাইন বোর্ড এলাকায় এলিট গার্মেন্টে বহিরাগত শ্রমিকরা ব্যাপক ভাংচুর ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সন্ধ্যার দিকে একদল বহিরাগত শ্রমিক কারখানার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে হামলা ও ব্যাপক ভাংচুর শুরু করে। এ সময় এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
একপর্যায়ে বহিরাগত শ্রমিকরা কারখানার অভ্যন্তরে নিরাপত্তা অফিস কক্ষে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তারা কারখানার পার্কিং করা একটি পিকআপ ভ্যান, একটি মাইক্রোবাস, একটি প্রাইভেটকার, ৫টি মোটরসাইকেল ও ১৫টি বাইসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই ওই যানবাহনগুলো পুড়ে যায়। খবর পেয়ে র‌্যাব-পুলিশ ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে র‌্যাব-পুলিশ ও এলাকাবাসী কারখানাটি ঘিরে ফেললে বহিরাগতরা দেয়াল টপকে পালিয়ে যায়। এ সময় জনতা ও কারখানার লোকজন ১১ জনকে আটক করতে সক্ষম হয়। এদিকে সন্ধ্যায় গাজীপুর ভোগড়া বাইপাস এলাকায় স্কয়ার ফ্যাশন লিমিটেডে বহিরাগত কিছুসংখ্যক লোক এসে হামলা চালায়। কারখানার প্রধান গেইটের সামনে আগুন ধরিয়ে দিলে স্থানীয় লোকজন তা নিভিয়ে ফেলে। ওই বহিরাগতরা কারখানার অভ্যন্তরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভবনের কাচ ভাঙচুরসহ ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে।