গাজীপুরে বাবা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা

 

স্টাফ রিপোর্টার: গাজীপুরে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে বাবা ও তার স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে। নিহতের নাম সাইফুল ইসলাম (৫০) ও তার মেয়ে আঁখি আক্তার (১৪)। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে গাজীপুর মহানগরের পোড়াবাড়ী উত্তর সালনা এলাকায় তাদের নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ নান্দুয়াইন এলাকা থেকে নূরুল ইসলাম (৫৫) নামে একজনকে আটক করেছে। সাইফুল ইসলামের স্ত্রী হাসিনা বেগম জানান, এক সপ্তা আগে স্থানীয় নান্দুয়াইন এলাকার নূরুল ইসলামের ছেলে মনির হোসেন তার মেয়ে আঁখিকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় এবং ছেলে আগে একটি বিয়ে করেছে ও মাদক সেবন করার কথা জানতে পেরে তারা বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয় মনির ও তার পরিবার। হাসিনা বেগম আরও জানান, দুই দিন আগেও ছেলের বাবা-মা আঁখির বিয়ের জন্য তাদের বাড়িতে আসেন। সেদিনও তারা বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। তিনি জানান, তাদের কোনো শত্র“ ছিল না। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য তিনি মনির ও তার পরিবারকে দায়ী করেন।

নিহতের বড় ছেলে মো. নজরুল ইসলাম জানান, তার বোন আঁখি আক্তার সালনা শাহ সুফি ফসিউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। দুর্বৃত্তরা রাতের কোনো এক সময় সাইফুল ইসলামের বাড়িতে প্রবেশ করে আঁখি ও তার বাবা সাইফুল ইসলামকে উপর্যুপরি কুপিয়ে জখম করে। এক পর্যায়ে বাবা সাইফুল ইসলামের মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে দুর্বৃত্তরা আঁখিকে টেনেহিঁচড়ে ঘরের পূর্বপাশে ফেলে রাখে।

ভোরে আঁখির চাচি রোকেয়া বেগম আঁখিকে বিবস্ত্র ও রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরের বাইরে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় পরিবারের অন্য সদস্যরা ছুটে আসেন। পরে পরিবারের লোকজন আঁখিকে উদ্ধার করে। তারা ঘরে গিয়ে দেখতে পান আঁখির বাবা সাইফুল ইসলাম রক্তাক্ত অবস্থায় অচেতন হয়ে পড়ে আছেন। স্বজনরা এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তাদের উদ্ধার করে গাজীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার আঁখিকে মৃত ঘোষণা করেন এবং তার বাবা সাইফুল ইসলামকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পিতা সাইফুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে মারা যান।

এদিকে সহপাঠী খুন হওয়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে পোড়াবাড়ী শাহ সুফি ফসিউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। তারা আঁখির খুনিদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে। পুলিশ জানায়, আঁখির মাথায় ধারালো অস্ত্রের ৫টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার বাবার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশেও ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

জয়দেবপুর থানার ওসি খন্দকার রেজাউল হাসান রেজা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, খুনের ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করতে পুলিশ তদন্ত করছে এবং ঘাতকদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মনিরের পিতা নূরুল ইসলামকে বৃহস্পতিবার দুপুরে তার বাড়ি থেকে আটক করা হয়। মনির পলাতক রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। আঁখির লাশ গাজীপুর সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত ও তার পিতা সাইফুল ইসলামের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর রাতে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।