গাজায় ইসরাইলের স্থল অভিযান:আরো তিন শিশুসহ নিহত ২৮

 

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: ব্যাপকগোলাবর্ষণ, ট্যাংক ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে ফিলিস্তিনের হামাস নিয়ন্ত্রিতগাজা ভূখণ্ডে এবার স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরাইল। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরুহওয়া এ অভিযানে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেল, বাংলাদেশে রাত) ২৮ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২৭ জনই ফিলিস্তিনি, যাদেরঅধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক এবং তিন শিশুও রয়েছে।
এছাড়া ইসরাইলের বিমানহামলা তো অব্যাহত ছিলোই, বৃহস্পতিবার থেকে নতুন করে যোগ হয়েছে নৌ হামলাও।গাজার উপকূলে ভূমধ্যসাগরে অবস্থানরত ইসরাইলি নৌ বাহিনীর গানবোটগুলো থেকেগোলা নিক্ষেপ করা হচ্ছে।

সব মিলিয়ে শুক্রবার পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায়গাজায় নিহতের সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে ২৬৫ তে। আহতের ক্ষেত্রে তা ১ হাজার ৯৭০জন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ওপারের ডাকে সারা দেয়া আরহাসপাতালের বিছানায় কাতরানো এসব মানুষের ৮০ শতাংশই বেসামরিক নাগরিক, যাদেরঅর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। জাতিসংঘ বলছে, নিহতদের মধ্যে শিশুই রয়েছে অন্তত৫৯ জন।১১ দিনে ধুলোয় মিশে গেছে গাজার দেড় সহস্র ঘরবাড়ি ও স্থাপনা। সবহারিয়ে ১৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি ছেড়েছেন গাজা। ৩০ হাজার ফিলিস্তিনিউদ্বাস্তু হয়ে পড়েছেন। গাজা ছাড়ার অপেক্ষায় রয়েছেন তারাও।

জাতিসংঘ ওমানবাধিকার সংগঠনগুলো হামলা বন্ধের জন্য শুরু থেকেই আহ্বান জানিয়ে এলেওদিনকে দিন তা বাড়াচ্ছে ইসরাইল। শুক্রবার অভিযান আরও বিস্তৃত ও জোরালো করারঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, শুধু বিমান হামলাই নয়, স্থল হামলাও আরও বিস্তৃত করা হবে। হামাসের সুড়ঙ্গনেটওয়ার্কসহ সব আস্তানা গুঁড়িয়ে দেয়া হবে।বিপরীতে হামাস মুখপাত্র সামিআবু জুহরি বলেন, এর জন্য ইসরাইলকে উচ্চমূল্য দিতে হবে।আর ফিলিস্তিনেরপ্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, ইসরাইলকে অবশ্যই গাজায় স্থল অভিযান বন্ধকরতে হবে। অন্যথায় আরও রক্ত ঝরবে। জটিল হয়ে উঠবে সহিংসতা বন্ধের চেষ্টা।

স্থলঅভিযান: বৃহস্পতিবার রাত থেকে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী।দেশটির কর্মকর্তাদের মতে, ৬৫ হাজার সেনা স্থল অভিযানের জন্য প্রস্তুতরয়েছে। এর একটি অংশ এদিন মাঠে নামে। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ছাড়া একটি ভিডিওক্লিপে ছয়টি ইসরায়েলি ট্যাংককে গাজার বালিয়ারি পার হয়ে এগিয়ে যেতে দেখাযায়। দেশটির পদাতিক বাহিনীর দুটি দীর্ঘ লাইনকেও ১৮ লাখ ফিলিস্তিনি অধ্যুষিতগাজার দিকে এগিয়ে যেতে দেখা গেছে ভিডিওচিত্রে।অভিযানে ইসরাইলি পদাতিকবাহিনী তাদের লক্ষ্যস্থলগুলো, বিশেষ করে হামাসের বিভিন্ন স্থাপনা ও সুড়ঙ্গদখল করে নিচ্ছে বলে দাবি করেছেন ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ারজেনারেল মোত্তি আলমজ।

তিনি বলেন, আমরা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গোলা ও কামানব্যবহার করছি। প্রচুর সংখ্যক সৈন্য অভিযান চালাচ্ছে। তার মতে, তাদেরবন্দুকধারীদের খোঁড়া সুড়ঙ্গগুলোর দখল নিয়েই অভিযান শেষ করা হবে। আলমজজানিয়েছেন, হামাসের যোদ্ধাদের সাথে লড়াইয়ে তাদের পক্ষের এক সেনা নিহত ওকয়েকজন আহত হয়েছেন। গাজার উত্তর ও দক্ষিণের কয়েকটি এলাকায় দুপক্ষের লড়াইচলছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর আরেক মুখপাত্র লে. ক. পিটার লার্নার বলেন, কিব্বুজ এলাকায় সুড়ঙ্গ পথে ইসরাইলে ঢোকার চেষ্টারত ১৩ হামাস জঙ্গিকে হত্যাকরেছে তাদের বাহিনী।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, শুক্রবার পর্যন্ত১৭ হামাস জঙ্গিকে হত্যা করেছে তারা। এছাড়া আরও ১৩ জঙ্গিকে বন্দি করেছে।১৫০টি স্থানে অভিযান চালায় তারা। ধ্বংস করেছে হামাসের ছোড়া ২১টি রকেট।

ফিলিস্তিনিস্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, ইসরাইলি স্থল অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে ২৭নাগরিক নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বাইত লাহিয়ায় ইসরাইলের ট্যাংকের গোলায় মারাগেছেন দুই মেয়ে ও এক ছেলে শিশু। ঘরের ভেতরেই ছিলো তারা। ওই অভিযানে হত্যাকরা হয় ৭০ বছর বয়েসী এক মহিলাকেও।শুক্রবার মন্ত্রিসভার বিশেষ অধিবেশনেইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, গত রাতে আমাদের সেনাবাহিনী স্থলঅভিযান শুরু করেছে। সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ইসরাইলে ঢোকার চেষ্টার মুখে শত্র“দের একটিঅংশকে দমন করেছে তারা। নেতানিয়াহু আরও বলেন, হামাসের সাথে যেমনযুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্ভব নয়, তেমনি শুধু বিমান হামলা চালিয়ে তাদেরসুড়ঙ্গগুলোও দখলে নেয়া সম্ভব না। তাই সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছেঅভিযান আরও বিস্তৃত করার।অধিবেশনটি সরাসরি সম্প্রচার করে বিভিন্ন টিভিচ্যানেল। আর অধিবেশনর শুরু আগে নেতানিয়াহু সাংবাদিকদের বলেন, (ফিলিস্তিনে)আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠাই আমাদের লক্ষ্য।

হামাস মুখপাত্র সামি আবুজুহারি বলেন, নেতানিয়াহু আমাদের শিশুদের হত্যা করছে, এর জন্য তাকেউচ্চমূল্য দিতে হবে। স্থল হামলায় আমরা আতঙ্কিত নয়, উল্টো শত্র“সেনাদের আমরাগাজার মাটিতে পুঁতে ফেলবো।

নৌ অভিযান: গাজার উপকূলে ভূমধ্যসাগর থেকেইসরাইলি নৌবাহিনী হামলা চালায়। শুক্রবার গভীর রাতে গানবোটগুলো থেকেনিক্ষিপ্ত ট্রেসার বুলেটে ফিলিস্তিনের পূর্বাঞ্চলীয় ভূখণ্ড গাজা কমলা আলোতেছেয়ে যায়। সীমান্ত অতিক্রম করে হেলিকপ্টার থেকেও গুলিবর্ষণ করা হয়।এসবহামলার বিপরীতে ইসরাইলের আশদদ ও আশকেলন শহরে রকেট নিক্ষেপ করে হামাসেরযোদ্ধারা। টেলিভিশনের সরাসরি সম্প্রচারে দেখা গেছে, ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসীইসরাইলের আয়রন ড্রোম গাজা থেকে ছোড়া রকেট ধ্বংস করছে। এ সময় কোনো হতাহতেরকথা জানানো হয়নি।

স্থল অভিযান বন্ধ করতেই হবে- আব্বাস : ফিলিস্তিনেরপ্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস স্থল অভিযান বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। ইসরাইলকেউদ্দেশ করে তিনি বলেন, অবশ্যই গাজায় স্থল অভিযান বন্ধ করতে হবে।আব্বাস বৃহস্পতিবার মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির সঙ্গে দেখা করেন।ইসরাইলও ফিলিস্তিনের জঙ্গি দল হামাসের মধ্যে সহিংসতা নিরসনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টারঅংশ হিসেবে আব্বাস ওই সফর করেন। শুক্রবার আব্বাস তুরস্কে যান। এরপর তিনিবাহরাইন ও কাতারে যাবেন।