গাংনী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ শিক্ষকদের অভিযোগ – প্রতিষ্ঠানের আয়ের এতো টাকা যায় কোথায়?

 

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের বার্ষিক আয়-ব্যয়ে বড় ধরনের অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে। সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন নিজেই আয়-ব্যয়ের কার্য সম্পাদন করে পকেটস্থ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রায় অর্ধকোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় বইছে শিক্ষক-কর্মচারীদের মাঝে।

বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানের ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম, ভোকেশনাল নবম ও দশম, বিএম শাখার একাদশ ও দ্বাদশ, জেনারেল কলেজ শাখার একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে আড়াই হাজারের ওপরে ছাত্রছাত্রী রয়েছে। বেতন, পরীক্ষা ফিস, সেশন ফিস, ভর্তি ফিস, লাইব্রেরি, উন্নয়ন ফিসসহ বিভিন্ন খাত থেকে যা আয় হয় তা বছরে এক কোটি টাকার ওপরে দাঁড়ায়। পক্ষান্তরে শিক্ষকদের ভাতা, রেজিস্ট্রেশন ও ফরম পূরণসহ প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য খাতে খরচ হয় প্রায় ৬০ লাখ টাকা। আয়-ব্যয়ের মাঝে এই বড় ধরনের ফারাক হলেও বাড়তি অর্থ কোথায় যাচ্ছে তা সাধারণ শিক্ষকদের জানার সুযোগ নেই।

ভুক্তভোগী কয়েকজন শিক্ষক জানান, বিদ্যালয়টি চলে প্রধান শিক্ষকের নিজস্ব আইনে। এসব বিষয় কেউ জানতে চাইলে তার ভাগ্যে জোটে প্রধান শিক্ষকের হুমকি-ধামকি। তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় তার স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির প্রতিবাদ প্রকাশ্যে করতে সাহস পাচ্ছেন না শিক্ষক-কর্মচারীরা। গাংনী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের আয়-ব্যয় ব্যবস্থাপনায় সরকারি নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখানো হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেনের আর্শিবাদপুষ্ট কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারীর মাধ্যমে যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা হয়। এর মধ্যদিয়ে ভুয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ পকেটস্থ করেন প্রধান শিক্ষক ও তার অনুগত কয়েকজন। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের আয় ও ব্যয় ব্যবস্থাপনার জন্য একটি অর্থ কমিটি থাকার কথা। আয়ের অর্থ ব্যাংক হিসেবে জমা দেয়া ও খরচের অর্থ ব্যাংক থেকে উত্তোলনের সুস্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে। ওই ব্যাংক হিসাব পরিচালিত হবে পরিচালনা পর্যদ সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের যৌথ স্বাক্ষরে। কিন্তু বিদ্যালয়ে নেই কোনো অর্থকমিটি এবং ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন হয় না বলে অভিযোগ করছেন শিক্ষকরা। আয় ও ব্যয়ের হিসেবে মোটা অংকের অর্থ বিদ্যালয় তহবিলে থাকার কথা থাকলেও তা নেই। সম্প্রতি বিষয়টি টের পেয়ে ক্ষোভ সঞ্চার হয় শিক্ষক-কর্মচারীদের মাঝে। সরাসরি প্রতিবাদে ব্যর্থ হয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।

শিক্ষক-কর্মচারীদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রতিটি শিক্ষক ও কর্মচারীর ঘাম ঝরানো আয় বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য ছাড় দিলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে পকেটস্থ করা অর্থ দিয়ে প্রধান শিক্ষক ব্যক্তিগত সম্পদ তৈরি করছেন। যা বিদ্যালটির সুনাম নষ্টসহ শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে বলে মন্তব্য তাদের। এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃত্বদানকারী এই প্রতিষ্ঠানটি রক্ষায় প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা। এ বিষয়ে গতরাতে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন জানান, প্রতিষ্ঠানের ৫টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। সেখানে লেনদেন হয়। আয় ও ব্যয়ের বিষয়টি ক্যাশিয়ার ভালো বলতে পারবেন।