গাংনী পৌর মেয়রের উদ্যোগ ॥ হাসপাতালের রোগীরা পেলেন সরকার নির্ধারিত খাবার

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তথা গাংনী হাসপাতালের চিকিৎসায় মাঠে নেমেছেন গাংনী পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম। নানা সমস্যায় জর্জরিত হাসপাতালটি রোগীতে পরিণত হয়েছে। ভর্তি রোগীদের খাবার, পরিবেশ ও সেবার মান উন্নয়নে ইতোমধ্যে মেয়র সফলও হয়েছেন। মঙ্গলবার থেকে রোগীরা পাচ্ছেন সরকার নির্ধারিত সঠিক পরিমাণ খাবার। নোংরা পরিবেশও এখন চকচকে। এই উদ্যোগ যেন অশুভ শক্তির ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন না হয় সে দাবি সকলের। হাসপাতাল নিয়ে মেয়রের উদ্যোগের বিষয়ে এমনই মন্তব্য করছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গাংনী হাসপাতালের ভর্তি রোগীদের খাদ্য সরবরাহের টেন্ডার বিষয়ে আদালতে একটি মামলা চলছে। যার ফলে বেশ কয়েক বছর পূর্বের টেন্ডারের নির্ধারিত দর অনুযায়ী খাদ্য সরবরাহ করা হয়। অন্যান্য হাসপাতালে প্রতিবছর খাদ্য সরবরাহ টেন্ডার হওয়ায় দর বাড়ে। যা থেকে বঞ্চিত গাংনী হাসপাতাল। এছাড়াও হাসপাতালের খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। হাসপাতালের একটি চক্রের সদস্যদের ম্যানেজ করেই ঠিকাদার এই অনিয়ম করে যাচ্ছেন। গাংনী পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম গেল সোমবার থেকেই হাসপাতালে অবস্থান করছেন। ওইদিন সকালে রোগীদের নাস্তা ও দুপুরের খাবার পর্যবেক্ষণ করেন তিনি।
মেয়র বলেন, প্রতিদিন রোগী প্রতি ২৪৫ গ্রাম পাউরুটি (৫ টাকা দরের রুটি ৭টি), ১টি ডিম, ১টি কলা ও চিনি বরাদ্দ। কিন্তু ঠিকাদার মাত্র ৬০ গ্রাম রুটি, কম দামের কলা ও রুটি সরবরাহ করেন। বিগত ১০ বছরে কখনো চিনি দেয়া হয়নি। অপরদিকে দুপুর ও রাতের খাবারে ২৮২ গ্রাম ফার্মের মুরগি মাংস (লেয়ার অথবা সোনালি) বরাদ্দ। মাছও বরাদ্দ একই পরিমাণ। অথচ মাছ ও মাংস যা দেয়া হচ্ছিলো তা বরাদ্দের অর্ধেকও নয়। লেয়ার ও সোনালি মুরগির বদলে ব্রয়লার মাংস দিয়েও রোগীদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। মেয়র আশরাফুল ইসলাম তাৎক্ষণিকভাবে খাবার সরবরাহের দায়িত্বে থাকা চৌগাছার রফিকুলকে তলব করেন। সরকারী বরাদ্দ অনুযায়ী খাবার বুঝে নেন। গত দু’দিন একই কায়দায় খাবার বুঝে নিচ্ছেন পৌর কর্মচারীরা।
এদিকে খাবারের পরিমাণ বুঝে নেয়ার জন্য পৌরসভার কর্মচারী সাফিরুল, মিলন ও খোকনকে প্রথম দিন থেকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তাদের সাথে গতকাল থেকে আজিজুল হক ও মামুনুর রশিদকে যুক্ত করা হয়েছে। ভোরে নাস্তা এবং দুপুর ও রাতের খাবার বুঝে নিচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। এদের কাজ পর্যবেক্ষণ করছেন ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন কাউন্সিলর। হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মী অভাব ও কর্তৃপক্ষের গাফলতিতে নতুন ভবন ধুলোয় ভরে যায়। পৌরসভার কাজে নিযুক্ত কয়েকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীদেরকে হাসপাতালের কাজে নিয়োজিত করেছেন মেয়র। ফলে এখন হাসপাতাল ভবনের মেঝে ঝকঝকে। এছাড়াও চারতলায় রোগী বহনের জন্য ট্রলি তৈরি করছেন তিনি। ট্রলি ছাড়াও নতুন ভবন চালু হওয়ায় রোগী বহনে চরম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। গর্ভবতী মায়েদেরও পায়ে হেঁটে চারতলায় লেবার ওয়ার্ডে যেতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন পরে হাসপাতাল থেকে সরকার নির্ধারিত খাবার পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রোগীরা। এ কার্যক্রম চলমান রাখারও দাবি করেছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
এ প্রসঙ্গে গাংনী পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম বলেন, খাবারের বিষয়টি হচ্ছে শস্যের ভেতরে ভুত। সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী খাবার সরবরাহ না করতে পারলে ঠিকাদারকে কাজ ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। হাসপাতালে রোগী বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে যা যা করণীয় তাই করা হবে বলে জানান তিনি।