গাংনী পৌর নির্বাচনে কাউন্সিরল পদে আওয়ামী লীগের ঘরের শত্রু আওয়ামী লীগ

মাজেদুল হক মানিক: মেহেরপুর গাংনী পৌর নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের ঘরের শত্রু আওয়ামী লীগ। বেশিরভাগ ওয়ার্ডে দলীয় একাধিক প্রার্থী থাকায় অনেকটাই ফাঁকা মাঠে গোল দেবে বিএনপি-জামায়াত সমর্থীত প্রার্থীরা। দল ক্ষমতায় না থাকায় বিএনপির বর্তমান কয়েকজন কাউন্সিলরসহ বিএনপি-জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী অনেকেই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। এতে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দী এখন আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে ভোটারদের সাথে কথা বলে এমই চিত্র ধরা পড়েছে।
বাঁশবাড়িয়া গ্রাম নিয়ে গঠিত ১নং ওয়ার্ডে জাহিদুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম ও বর্তমান কাউন্সিলর সামসুদ্দীন শেখ আওয়ামী লীগ সমর্থীত। এতে স্বাভাবিক ভাবেই সুবিধায় রয়েছেন বিএনপি সমর্থীত একমাত্র প্রার্থী রবিউল ইসলাম। আওয়ামী লীগের ভোট তিন প্রার্থীর মধ্যে ভাগ হলেও বিএনপি-জামায়াতের ভোটের বেশিরভাগ রবিউল ইসলাম পাবেন বলে জানিয়েছেন ভোটাররা। এতে বর্তমান কাউন্সিলর সামসুদ্দীন শেখ ও বিএনপি সমর্থীত রবিউল ইসলামের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দীতার আভাস দিলেন ভোটাররা।
শিশিরপাড়া গ্রাম নিয়ে গঠিত ২নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ। বর্তমান কাউন্সিলর আলেহীম ও তার তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দী মিজানুর রহমান দুজনই আওয়ামী লীগের দুগ্রুপের প্রার্থী। বিএনপি-জামায়াতের কোনো প্রার্থী না থাকায় তাদের ভোট ভাগ হচ্ছে। ফলে আওয়া লীগের দুপ্রার্থীদের মধ্যে লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
চৌগাছা মোল্লাপাড়া ও পশ্চিমপাড়া নিয়ে গঠিত ৩নং ওয়ার্ডের প্রার্থী ৩ জন। তবে বর্তমান কাউন্সিলর জামায়াত সমর্থীত আসাদুজ্জামান ও আওয়ামী লীগ সমর্থীত সামিউল ইসলামের মধ্যে প্রতিদ্বন্দীতার আশা করছেন এলাকাবাসী। অপর কাউন্সিলর লোকমান হোসেন সম্প্রতি পরিসংখ্যক অফিসের অফিস সহকারী পদ থকে অবসর নিয়েছেন। তার রাজনৈতিক পরিচও তেমনভাবে সনাক্ত করেন না ওয়ার্ডবাসী।
৪নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সির কামরুজ্জামান ডাবু এবার নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। ফুল ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান, বিএনপি সমর্থীত জামাল উদ্দীন ও আওয়ামী লীগ সমর্থীত আছেল উদ্দীন রয়েছেন প্রতিদ্বন্দীতায়। এর মধ্যে আছেল উদ্দীন ও জামাল উদ্দীনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দীতার আভাস দিলেন ওয়ার্ডের ভোটাররা।
৫নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর বিএনপি নেতা আতিয়ার রহমান এবার প্রতিদ্বন্দীতা করছেন না। তবে এ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দী আওয়ামী লীগ। একজন বাবুল আক্তার অপরজন আব্দুল জলিল।
৬নং ওয়ার্ডে গত পৌর নির্বাচনের মতই বিএনপি প্রার্থী নাসির উদ্দীন ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর নবীর উদ্দীন প্রতিদ্বন্দীতা করছেন।
পূর্ব মালসাদহ, গাংনী ঈদগাহপাড়ার একাংশ ও ভিটাপাড়া নিয়ে গঠিত ৭নং ওয়ার্ডে চারজন প্রার্থী ভোটের মাঠ চষের বেড়াচ্ছেন। এরা সকলেই আওয়ামী লীগ সমর্থীত। বর্তমান কাউন্সিলর পৌর যুবদলের সভাপতি আব্দুল্লাহ হীল মারুফ পলাশ এবার ভোটে অংশ নেননি। এ ওয়ার্ডের চার প্রার্থীর মধ্যে আয়ুব আলী, মিজানুর রহমান হাসু, বদরুল আলম বুদু ও মীর হাসানুজ্জামান। বিএনপির প্রার্থী না থাকায় বিএনপি-জামায়াতের ভোটাররা যাকে ভোট দিবেন সেই প্রার্থী সুবিধায় থাকবেন। ফলে এ ওয়ার্ডটিতে ত্রিমুখি না দ্বিমুখি লড়াই হবে তা দেখার অপেক্ষোয় ওয়ার্ডবাসী।
৭নং ওয়ার্ডের মতই চার প্রার্থী রয়েছেন ৮নং ওয়ার্ডে। এ ওয়ার্ডটিতে বর্তমান কাউন্সিলর বিএনপি নেতা সাহিদুল ইসলামের প্রতিদ্বন্দী আওয়ামী লীগের বাবর আলী, হাফিজুল ইসলাম, আসাদুল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম। এতে স্বাভাবিক ভাবেই জয়ের সুবিধায় রয়েছেন সাহিদুল ইসলাম। সাহিদুল ইসলাম ও বাবর আলীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দিতা নাকি আরো এক প্রার্থীর সাথে ত্রিমুখি লড়াই হবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ভোটের দিন পর্যন্ত।
৯নং ওয়ার্ডে বিএনপির এনামুল হক এবং আওয়ামী লীগের রাশিদুল ইসলাম ও মজনু হক প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। এ ওয়ার্ডটিতে কার সাথে কার লড়াই হবে তা বুঝে উঠতে পারছেন না ভোট সংশ্লিষ্টরা।
১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত সংরক্ষিত ১নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের ফিরোজা খাতুন ও মিনা খাতুনের প্রতিদ্বন্দী বর্তমান কাউন্সিলর জামায়াত সমর্থীত সুনা ভানু। সংরক্ষিত ২নং ওয়ার্ডে ঝর্না বেগম ও মলিদা খাতুন আওয়ামী লীগ সমর্থীত। এ দুজনের প্রতিদ্বন্দী বিএনপি সমর্থীত ঝর্না আক্তার। সংরক্ষিত ৩নং ওয়ার্ডে চার প্রার্থীই আওয়ামী লীগ সমর্থীত। এরা হচ্ছেন- বর্তমান কাউন্সিলর রওশন আরা, পারভীনা খাতুন, সাজেদা খাতুন ও কদভানু।
নির্বাচনে অনিহা প্রকাশকারী বর্তমান কাউন্সিলরা জানান, কাউন্সিলর থেকে মানুষের জন্য কোনো কিছু করার তেমন সুযোগ নেই। তাছাড়া রাজনৈতিকভাবে অনেকেই নাশকতার ঘটনার মামলার আসামি। এসব বিষয় বিবেচনায় নির্বাচনে অনিহা সৃষ্টি হয়েছে। তাছড়া রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা না থাকলে কাউন্সিলর থেকে লাভ নেই বলে মন্ত্রব্য করলেন তারা।
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দল ক্ষমতায় থাকলে প্রার্থীর অভাব হয় না। একারণে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। তাছাড়া একক কাউন্সিলর প্রার্থী নির্ধারণ করতে গেলে যারা বাদ পড়বেন তারা বিদ্রোহ করতে পারেন। এতে পৌরসভা নির্বাচনে মূল আসন অর্থাৎ মেয়র পদের ভোটের বিরূপ প্রভাব পড়ে। তাই মেয়র পদ নিশ্চিত করার জন্য কাউন্সিলর নিয়ে তেমন ভাবছে না আওয়ামী লীগ।