গাংনীর রামনগরে কৃষি জমিতে ভাটা নির্মাণের প্রক্রিয়া

অনুমোদন  ও নির্মাণ বন্ধের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন  কৃষকেরা

গাংনী প্রতিনিধি: আইন লঙ্ঘণ করে মেহেরপুর গাংনী উপজেলার রামনগর গ্রামের মাঠে ইটভাটা নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। ইটভাটা নির্মাণ হলে কৃষি জমি ধ্বংস ও আবাসিক এলাকার ক্ষতি সাধনের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। প্রতিবাদে এলাকার মানুষের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ। ইটভাটার অনুমোদন না দেয়া ও নির্মাণ বন্ধের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এলাকার ২২জন কৃষক। অভিযোগে জানা গেছে, রামনগর গ্রামের মাঠে চরগোয়াল গ্রামের মৃত করিম সরদারের ছেলে বানাত আলীসহ তার পরিবারের সদস্যদের ৭-৮ বিঘা জমি রয়েছে। ওই জমিতে বানাত আলী, মন্টু মিয়া ও সোহাগ সরদার ইটভাটা নির্মাণের চেষ্টা করছে। অনুমোদনের জন্য বিভিন্ন দফতরে ঘোরাঘুরি করছে। আগামী শুক্রবার ইটভাটায় মাটি তোলার কাজ শুরু হবে। এ লক্ষে এলাকার শ্রমিকদের সাথে কথাবার্তা হয়েছে।
অভিযোগকারীরা বলেন, ওই মাঠে প্রায় ২শ’ বিঘা আবাদি জমি রয়েছে। বছরে ৩ ফসলি জমি হওয়ায় রামনগর, চরগোয়াল ও নওদা মটমুড়া গ্রামের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস হচ্ছে রামনগর মাঠ। এখানে ইটভাটা হলে ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
রামনগর গ্রামের কৃষক মোফাজ্জেল হোসেন ও আব্দুল কুদ্দুস বলেন, বর্তমানে ওই মাঠে ধান, গম ও মসুর রয়েছে। মরিচের চারা লাগানোর সময় হয়ে আসছে। এমতাবস্থায় ইটভাটা স্থাপিত হলে চাষাবাদ হবে না। ফলে চাষিরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। একই গ্রামের কৃষক আজমত আলী বলেন, যেখানে ইটভাটা স্থাপিত হতে যাচ্ছে তার আড়াইশ’ মিটারের মধ্যে রামনগর আরবিজিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ৩শ’ মিটারের মধ্যে রামনগর বাজার ও গ্রাম এবং ১৫-২০ মিটারের মধ্যে নওদা মটমুড়া গ্রাম। এমন স্থানে ইটভাটা চালু হলে এলাকার মানুষের মাঝে ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়বে।
জানা গেছে, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এর ধারা ৮(১) বলা হয়েছে- আবাসিক এলাকা ও কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। কৃষি জমি, আবাসিক এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে পরিবেশ অধিদফতর বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ ইটভাটা স্থাপনের ছাড়পত্র বা সনদ দিতে পারবে না।
জানা গেছে, বামন্দী-কাজিপুর সড়ক ভায়া রামনগর-বেতবাড়িয়া সড়কের কোল ঘেষে ইটভাটা স্থাপিত হতে যাচ্ছে। বামন্দীসহ জেলা উপজেলায় যাতায়াতের জন্য সড়কটি এলাকার হাজার হাজার মানুষের একমাত্র অবলম্বন। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী এমন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে ইটভাটা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাছাড়া প্রস্তাবিত ইটভাটাটির আশপাশে রয়েছে বাগান ও সড়কের পাশের ব্যাপক গাছগাছালি। এদিকে এলাকার কৃষি জমি রক্ষা ও মানুষের জীবন রক্ষায় ইটভাটা স্থাপিত না করার দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন এলাকাবাসী। ওই মাঠে আবাদি জমি রয়েছে এমন ২২ জন কৃষক আবেদনে স্বাক্ষর করছেন। জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপের আশায় রয়েছেন এলাকাবাসী। তবে ইটভাটা স্থাপনের বিষয়ে জানতে চেয়ে বানাত আলীর মোবাইলে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।