গাংনীর মোহাম্মদপুরে মাছচাষ নিয়ে বিরোধ : প্রতিবাদী মৎস্যজীবীদের দমাতে ৪টি মামলা

 

স্টাফ রিপোর্টার: প্রতিপক্ষের ভাড়াটে গুন্ডাদের অব্যাহত হামলা আর পুলিশি গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে গাংনীর মোহাম্মদপুর পশ্চিমপাড়ায়। মাছচাষের পাওনা টাকার ভাগ চাওয়ায় মৎস্যজীবী সমিতির কোষাধ্যক্ষ আবুল হোসেন ওরফে আবুল মেলেটারি সিংহভাগ সদস্যদের বিরুদ্ধে ৪টি মামলা দায়ের করেছেন। এর মধ্যে আদালতে দায়ের করা ৩টি মামলাই বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে। তবে আবুল হোসেন বলেছেন, প্রতিপক্ষদের হামলা ও ভাঙচুরের কারণে তিনি এ মামলা করেছেন।

মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলা শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে এক নিভৃত পল্লির নাম মোহাম্মদপুর। এ গ্রামের পশ্চিমপাড়ার সিংহভাগ লোকই মৎস্যজীবী। প্রায় তিন পুরুষ ধরে এখানকার লোকজন সমিতি গঠন করে মরা নদী লিজ নিয়ে মৎস্যচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। সম্প্রতি মাছ বিক্রির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সমবায় সমিতির আবুল হোসেনের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন সমিতির সিংহভাগ সদস্য। শেয়ারের লাভের অংশ ও হিসাব চাইলে আবুল হোসেন ক্ষিপ্ত হন। প্রতিবাদী সদস্যদের দমাতেই তিনি বেছে নেন ভিন্ন প্রতিশোধের পথ। এমনই অভিযোগ ভুক্তভোগী সদস্যদের। এক পর্যায়ে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে আবুল হোসেন ওই নিরীহ সদস্যদের নামে পর পর ৪টি মামলা করে। এতে ভয়ে ও আতঙ্কে পুরুষেরা সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নেন অন্যত্র। পাড়ার বৌ-ঝিরা পালাক্রমে রাত জেগে বাড়ি পাহারা দেন। কোনো অজানা অচেনা লোক দেখলেই তারা ভয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যান পার্শ্ববর্তী মাঠে।

গ্রামের আব্দুল ওহাবের মেয়ে খুরশীদা খাতুন জানান, জলমহালের বড় মাছ বিক্রির টাকা ভাগাভাগি করা নিয়ম থাকলেও ছোট মাছ বিক্রির টাকা সমিতির তহবিলে রাখতে হয়। বড় মাছ বিক্রির টাকা তো কাউকে দেন না বরং ছোটমাছ বিক্রির ১৮ লাখ টাকা দিয়ে নিজের নামে জমি কিনেছেন আবুল মেলেটারি। অভাব অনটনের কারণে কোনো সদস্য টাকা চাইলে তাকে টাকা লোন দিয়ে মোটা অঙ্কের সুদ নিয়ে থাকেন। এর প্রতিবাদ করায় অনেককে সমিতি থেকে বাদ দিয়ে মামলা করেছেন আবুল মেলেটারি।

পশ্চিমপাড়ার মৎস্যজীবী মহসিন আলীর স্ত্রী হালিমা খাতুন জানান, আবুল মেলেটারি মৎস্যজীবী সমিতিতে যোগদানের পর থেকে নানা অজুহাতে একের পর এক সদস্যদের বাদ দিয়ে নিজের অনুগতদের সদস্য অন্তর্ভূক্ত করেন। এ পর্যন্ত অন্তত ২৪ জন প্রকৃত মৎস্যজীবীকে বাদ দিয়েছেন। তাদের গচ্ছিত টাকা পয়সাও দেননি। এ হিসাব চাওয়ায় দ্বন্দ্বের সৃষ্টি। এরই জের ধরে আবুল মেলেটারি তার ভাতিজা ও ভাগিনাকে দিয়ে মামলা করাচ্ছে। ৩৪ জন মৎস্যজীবীকে ৪টি মামলায় জড়িয়ে দেয়া হয়। তাছাড়াও ভাদু, মুসা ও চঞ্চলসহ কয়েকজন মৎস্যজীবীকে মারধর করে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা করতে গেলে আবুল মেলেটারির লোকজন কয়েকজন মৎস্যজীবীকে ধরে পুলিশে দেয়। আবার গ্রেফতারের ভয়ে আদালতেও যেতে পারছেন না তারা।

গৃহবধূ নারগিছ পারভীন জানান, জমি, নৌকা, জাল ও মাছ সবই আমাদের অথচ কোনো অধিকার নেই । এ অধিকার চাওয়ায় প্রতিপক্ষরা আমাদের সমিতি থেকে বাদ দিয়ে মামলা ও বাড়ি ভাঙচুর করেছে। এমনকি বৈদ্যুতিক মিটার ও টিউবওয়েল ভাঙচুর করেছে। পুরুষ মানুষ বাড়ি না থাকায় বৌ-ঝিদের নিয়ে পালাক্রমে রাত জেগে বাড়ি পাহারা করতে হয়। নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে সবার। পুরুষরা গোপনে দিনে বাড়িতে আসলেও সন্ধ্যার আগেই গ্রাম ছাড়তে হয়। তিনি আরো জানান, শিশুরা মরা নদী থেকে মাছ কুড়িয়ে আনলেও তাদেরকে মারধর করা হয় এবং এর জের ধরে বাড়ি ঘরে হামলার ঘটনাও ঘটে।

হামলা ও মামলার ব্যাপারে আবুল মেলেটারি জানান, কিছু সদস্য খোঁড়া অজুহাতে আমার ও আমাদের লোকজনের বাড়ি ঘরে হামলা ও ভাঙচুর করে। এ কারণে মামলা করা হয়েছে। তবে সব কটি মামলা বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে কেন? এ প্রশ্নের জবাব মেলেনি। তেমনি মেলেনি নীরিহ সদস্যদের কেন সমিতি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে ও সমিতির তহবিলের টাকার হিসাব না দেয়ার সদুত্তর। গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকরাম হোসেন জানান, আদালতের আদেশে আবুল মেলেটারির মামলার আসামিদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।