গাংনীর মাথাভাঙ্গা নদীতে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন ভাঙণের কবলে আবাদি জমি ও বাড়িঘর

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মাথাভাঙ্গা নদীতে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট ভাঙণের কবলে পড়েছে। ভিটেমাটি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা। কাজিপুর ব্রিজ থেকে শুরু করে ছাতিয়ান গ্রাম পর্যন্ত ৬টি স্থানে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বালি তুলে বিক্রি করছেন। এতে প্রতিবাদও করতে সাহস করছেন না ভুক্তভোগীরা।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গেল অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে কাজিপুর ব্রিজের পশ্চিমে প্রায় ৪শ গজ দূরে ড্রেজার দিয়ে বালি তুলছেন কাজিপুর গ্রামের হাজিপাড়ার মাহবুব ইসলাম স্বপন। একই নদীতে ছাতিয়ান গ্রামের পাশে বালি তুলছেন ছাতিয়ান গ্রামের মৃত হুরমত আলীর ছেলে আলামিন হোসেন ও চরগোয়াল গ্রামের আবু হানিফ। এদেরই সহযোগীরা আরো কয়েকটি স্থান থেকে বালি উত্তোলন করছেন। রাস্তা পাকাকরণ, গর্ত ভরাটসহ বিভিন্ন কাজের জন্য বালি বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানালেন বালি উত্তোলনকারীরা। প্রতিদিনই ৪০/৫০ ট্রাক বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। বালি উত্তোলনকারী স্বপনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, নিজের জমির ওপর ড্রেজার স্থাপন করেছি। পার্শ্ববর্তী জমির ক্ষতি হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এখানে ৪০ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান করেছি। আমিও তো মানুষের উপকার করছি। আইনের লঙ্ঘন ও নদীপাড়ের মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে বুঝেও তিনি বালি উত্তোলন করছেন। তার সাথে আলাপ চারিতায় এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়।

মাথাভাঙ্গা নদীর অন্তত ৬টি স্থানে রাত-দিন অবিরাম বালি তোলা হচ্ছে। কাজীপুর গ্রামের ভুক্তভোগী আব্দুল আলিম জানিয়েছেন, নদীপাড়ে তার দু বিঘা জমি ভাঙণের কবলে পড়েছে। আগামী বর্ষায় কাজিপুর ঘাট এলাকার নদীপাড়ের প্রায় দু শতাধিক বিঘা জমি বিলীন হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন তিনি। একই কথা জানান ছাতিয়ান গ্রামের আব্বাস আলী। নদী ভাঙণের আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করছেন পীরতলা গ্রামের ২৫/৩০টি পরিবারের লোকজন। একই সাথে ভাঙণে পড়তে পারে কাজিপুর-পীরতলা মাঠের রাস্তা ও নওদাপাড়া-পীরতলা প্রধান সড়কের বেশ কিছু অংশ। স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্প ম্যানেজ করে অবৈধ এ বালির ব্যবসা চলছে। বিধায় কোনো অভিযোগেই কাজ হচ্ছে না বলে জানান কয়েকজন ভুক্তভোগী। কাজিপুর ব্রিজ থেকে ছাতিয়ান গ্রাম পর্যন্ত প্রায় এক হাজার বিঘা জমি ভাঙণের কবলে পড়েছে বলে স্থানীয় চাষিদের অভিযোগ। প্রতি বছরই নদী ভাঙণে নতুন নতুন জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। দৌলতপুরের সাথে গাংনীর যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম কাজিপুর ব্রিজ নদী ভাঙণের কবলে পড়তে পারে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলাঙ্গি নামক স্থান থেকে পদ্মা নদীর শাখা নদী হিসেবে মাথাভাঙ্গা নদীর জন্ম। মাথাভাঙ্গা কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ধর্মদহ গ্রাম দিয়ে এদেশে প্রবেশ করে গাংনী উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা উপজেলার পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। চুয়াঙ্গার শহরের বুক চিরে দামুড়হুদা উপজেলার বাস্তপুরে গিয়ে ভৈরব নদীর সাথে মিশেছে মাথাভাঙ্গা নদী। এটি এ অঞ্চলের প্রধান নদী হিসেবে পরিচিত। এক সময় কোলকাতা যাওয়া-আসার প্রধান মাধ্যম ছিলো এটি। বর্তমানে সেচ ও মাছের প্রধান উৎস এই মাথাভাঙ্গা। তবে উৎস থেকে পানি কম আসায় শুষ্ক মরসুমে প্রায় শুকিয়ে যায়। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এলাকায় বালিদুস্য হিসেবে পরিচিত কিছু মানুষ বালি ব্যবসায় মেতে ওঠে।

মাটি ও বালি রক্ষা আইন-২০১০ অনুযায়ী অবৈধভাবে ড্রেজিং দিয়ে বালি উত্তোলন করলে দু বছরের জেল ও পঞ্চাশ হাজার থেকে দু লাখ টাকা অর্থ জরিমানার বিধান রয়েছে। এ আইনে চলতি বছরের ২৩ মে পীরতলা গ্রামে মাথাভাঙ্গা নদীতে বালু উত্তোলনের ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালান। বালি উত্তোলনকারী পীরতলা গ্রামের কাফিরুল ইসলামের কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা আদায় ও ড্রেজার জব্দ করেছিলেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী র্কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুস সালাম। তখন থেকেই কাফিরুল বালি উত্তোলন বন্ধ করলেও স্বপনসহ কয়েকজন বালু উত্তোলন শুরু করেছেন। দ্রুত এসব বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুস সালাম।