গাংনীর মাথাভাঙ্গা নদীতে ডুবে পিতা-পুত্রের করুণ মৃত্যু

 

 

ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ দিলেন দিনমজুর পিতা ইয়ার আলী

গাংনী প্রতিনিধি: পিতা-মাতা যে সন্তানকে সারাজীবন আগলে রাখেন তা জীবন দিয়ে আবারো প্রমাণ রেখে গেলেন ইয়ার আলী (৫০) নামের এক হতভাগা পিতা। মাথাভাঙ্গা নদীতে পড়ে যাওয়া ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে ঘটে ওই বিপত্তি। পিতা-ছেলের মৃত্যুতে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে মেহেরপুর গাংনী উপজেলার মহাম্মদপুর গ্রামে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মহাম্মদপুর গ্রামের বাগানপাড়ার দিনমজুর ইয়ার আলীর ছেলে মানোয়ার হোসেন (১৮) মানসিক প্রতিবন্ধী। গতকাল সন্ধ্যার আগে মানোয়ার হোসেন গ্রামের পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়ার সরিষাডুলি গ্রামে ফুঁফুর বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়। গ্রামের উত্তর দিকে মাথাভাঙ্গা নদী পেরুলেই ফুঁফুর বাড়ি। গ্রামের কয়েকজনের সাথে হেঁটে সে নদী পার হচ্ছিলো। এসময় পা ফসকে নদীর ভেতরের গভীর পানিতে পড়ে যায়। সে ঠিকঠাক নদী পার হতে পেরেছে কি-না তা নিশ্চিত হতেই পিতা ইয়ার আলী নদী তীরে যান। ছেলেকে পানিতে হাবুডুবু খেতে দেখে তিনিও নদীতে ঝাঁপ দিয়ে তাকে ওপরে তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু সম্ভব হয়নি। পিতা-ছেলে দুজনেই গভীর পানিতে ডুবে যায়।

এদিকে খবর পেয়ে গ্রামের লোকজন তাদের উদ্ধারের চেষ্টা শুরু করেন। নদীতে জাল টেনে রাত পৌনে ৮টার দিকে ছেলে মানোয়ার হোসেনের লাশ উদ্ধার করেন গ্রামবাসী। কিন্তু পিতার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছিলো না। পরে আবারে নদীতে জাল ফেলে সন্ধান শুরু হয়। রাত পৌনে ১০টার দিকে পিতা ইয়ার আলীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

পিতা-ছেলের মৃত্যুর খবরে দরিদ্র পরিবারটিতে শোকের মাতম শুরু হয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি স্বামী ও একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে ইয়ার আলীর স্ত্রী এখন নির্বাক। শুধু পরিবার নয় প্রতিবেশীসহ গোটা এলাকায় বিরাজ করছে শোকের ছায়া।

এদিকে মাথাভাঙ্গা নদীর যেস্থানটিতে তাদের মৃত্যু হয়েছে সেই স্থানটি নিয়ে স্থানীয় মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। মহাম্মদপুর গ্রামের এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে সেখানে ড্রেজিং করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করেছেন। এতে নদীর অন্যান্য স্থানে পানি না থাকলেও ড্রেজিংস্থলে গভীর পানি রয়েছে। কিন্তু গভীরতার বিষয়টি গ্রামের কেউই বুঝতে পারেনি। তাই অসাবধনতা বশত মানোয়ার হোসেন ড্রেজিং স্থলে পড়ে যায়।

স্থানীয়সূত্রে আরো জানা গেছে, ইয়ার আলীর একমাত্র ছেলে মানোয়ার হোসেন বছর চারেক আগে অষ্টম শ্রেণিতে লেখাপড়া করা অবস্থায় মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এতে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। দিনমজুর পিতা বোঝা মনে না করে ছেলের চিকিৎসার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। কিন্তু সে সুস্থ হয়নি। ইয়ার আলীর দু মেয়ে বিবাহিত।