গাংনীর মহব্বতপুরে চোর সন্দেহে পাহারাদারদের গণপিটুনিতে একজন নিহত

স্ত্রীর দাবি পূর্বশত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষরা

 

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার মহাব্বতপুর গ্রামে গণপিটুনিতে নাজিম উদ্দীন (৪৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন তার শাশুড়ি রহিমা খাতুন (৬২)। গতকাল বুধবার মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে। তবে গণপিটুনি নিয়ে স্থানীয় একটি পক্ষ ও নিহতের পরিবার ভিন্ন ভিন্ন অভিযোগ করছেন। নিহত নাজিম উদ্দীন সদর উপজেলার ইসলামপুরের জমির উদ্দীনের ছেলে এবং বাদিয়াপাড়া গ্রামের মৃত মহাসিন আলীর জামাই।

গাংনী থানার ওসি আকরাম হোসেন জানান, গত কয়েকদিন আগে শশুরবাড়ি যায় নাজিম উদ্দীন। রাতের শেষের দিকে পার্শ্ববর্তী মহব্বতপুর গ্রামের পাহারাদাররা গ্রামের মোড়ে তাকে চোর সন্দেহে গণপিটুনি দেয়। তাকে বাঁচাতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হন শাশুড়ি রহিমা খাতুন। পরে পুলিশ আহত জামাই শাশুড়িকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করে। রহিমাকে গাংনী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যু হয় নাজিমের।

এদিকে নিহতের স্ত্রী শাহিনা খাতুনের অভিযোগ, তার মানসিক প্রতিবন্ধী ভাই জুয়েল বুধবার রাতে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। পরে তাকে খুঁজতে বাড়ি থেকে বের হন তার মা রহিমা খাতুন। শাশুড়ির ফিরতে বিলম্ব দেখে নামিজ উদ্দীন তাদের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। মহাব্বতপুর গ্রামে পৌঁছুলে রোহিত, বিল্লাল হোসেন, সামাদ, মাসাদ, আব্দুল্লাহ, সালা উদ্দীন ও সালামসহ কয়েকজন তার স্বামী ও মাকে মারধর শুরু করে। বেধড়ক মারপিটের কারণে নাজিম উদ্দীনের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে শাহীনা সেখানে গেলে তাকেও মারধর করা হয়। গ্রামের বিল্লাল হোসেন ও ইলিয়াছ হোসেনের সঙ্গে পুর্ব বিরোধের জের ধরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে ঘটনা ভিন্নখাতে চালানোর অপচেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেন নিহতের স্ত্রী শাহীনা খাতুন।

গণপিটুনি দেয়া পক্ষের লোকজন দাবি করেছেন, জামাই-শাশুড়ি মিলে বিল্লাল হোসেনের বাড়ির গোয়ালঘর থেকে গরু চুরির প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। এসময় গ্রামের লোকজন তাদের আটক করে গণপিটুনি দেয়। এ ঘটনায় বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে নিহত নাজিম উদ্দীন ও শাশুড়ি রহিমা খাতুনের নামে গতকাল গাংনী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। রহিমাকে ওই মামলায় গ্রেফতার করে গতকালই মেহেরপুর আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বিকেলে প্রথম স্ত্রী জুলেখা খাতুন গ্রহণ করেন। পরে নিজ গ্রামে দাফন সম্পন্ন হয়। রহিমা ও নাজিম উদ্দীনসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করেন গণপিটুনির সাথে জড়িরা।

স্থানীয় সূত্রে আরো জানা গেছে, রহিমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা রয়েছে। রহিমা খাতুনের দ্বিতীয় স্বামী মহসিন আলীর মৃত্যুর পর বছর পাঁচেক আগে। পরে গ্রামের ইলিয়াছ হোসেনের সাথে প্রেমসম্পর্ক করে বিয়ে করেন রহিমা। সম্প্রতি কিছু টাকায় মীমাংসা হলে উভয়পক্ষ তালাক দেয়। ওই ঘটনায় ইলিয়াছ হোসেন ও বিল্লাল হোসেনসহ কিছু মানুষের সাথে রহিমার পরিবারের দ্বন্দ্ব চলছিলো। এর জের ধরেই তারা ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা নাটক সাজিয়ে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেন নিহতের স্ত্রী ও শাশুড়ি।

এদিকে নিহতের প্রথম স্ত্রী জুলেখা খাতুন ও ছেলে মেয়ে খবর পেয়ে গতকাল সকালে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে আসেন। তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। জুলেখা খাতুন জানান, তার সাথে দীর্ঘ সংসার করার পর বছর ৪-৫ বছর আগে প্রেম করে বাদিয়াপাড়া গ্রামের শাহীনার সাথে তার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তার খোঁজ খবর না নিয়ে শাহীনার সাথে বিভিন্ন স্থানে বাসা ভাড়া নিয়ে সংসার করছিলো। মাসখানেক আগে নাজিম উদ্দীন প্রথম স্ত্রীর কাছে যায়। দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে মাঝে মাঝে যাবে এবং তার সংসারে বেশি সময় দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। এরই জেরে ৪-৫ দিন আগে সে বাদিয়াপাড়া গ্রামে যায়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিনি শোক ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

গাংনী থানার ওসি আকরাম হোসেন আরো জানান, নিহতের পরিবার কোনো মামলা দেয়নি। পক্ষান্তরে বিল্লাল গরু চুরির মামলা দায়ের করেছেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা অধিকতর তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।