গাংনীর নওপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপিড়নের অভিযোগ ॥ বিদ্যালয় ছাড়ছে ছাত্রীরা

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার নওপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপিড়নের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি অন্যান্য শিক্ষক ও অভিভাবকরা অবগত হলেও সম্মানের ভয়ে কেউ তেমনভাবে প্রতিবাদ করেননি। সম্প্রতি দুই ছাত্রী বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিলে বিষয়টি স্থানীয়দের নজরে আসে। প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের প্রাথমিক তদন্তেও অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। গ্রামজুড়ে চলছে ক্ষোভ।
অভিযোগে জানা গেছে, গত ৪দিন আগে ৫ম শ্রেণির এক ছাত্রী আকস্মিক বিদ্যালয় ছেড়ে অন্য একটি প্রাইভেট বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। ৪র্থ শ্রেণির এক ছাত্রী ক্লাস বাদ দিয়ে নানার বাড়িতে পাড়ি জমায়। এ ঘটনায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের মনে সন্দেহের দানা বাধে। এক পর্যায়ে যৌন নিপিড়নের বিষয়টি উঠে আসে।
স্থানীয় ও ভূক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, ক্লাসের পরেই বিদ্যালয়ে কোচিং করান প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান বকুল। ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির ছাত্রীদের মধ্য থেকে কয়েকজন তার লালসার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। কোচিং শেষের দিকে নির্দিষ্ট একজন ছাত্রীকে বিদ্যালয়ের কম্পিউটার কক্ষে (নির্জন কক্ষে) নিয়ে বিভিন্ন প্রলোভনে যৌন নিড়িপন চালান। এ বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রামজুড়ে শুরু হয় প্রতিবাদের ঝড়। প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত করার দাবি ওঠে কারও কারও পক্ষ থেকে। বিষয়টি আচ করতে পেরে কৌশলে তিনদিনের ছুটি নিয়েছে প্রধান শিক্ষক। বিষয়টি পৌঁছায় উপজেলা প্রশাসনের কর্তাদের কানে। এর প্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ফয়সাল বিন হাসান ও তাজমিরা খাতুন এবং কাথুলী ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান রানা সরেজমিন পরিদর্শন করেন ওই বিদ্যালয়। অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ভূক্তভোগী ছাত্রীদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
এ বিষয়ে গাংনী উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ফয়সাল বিন হাসান বলেন, অভিযোগকারী কয়েকজনের সাথে কথা বলেছি। একজন ছাত্রীর মা ও বাবার সাথে কথা হয়েছে। অপর আরেকজন ছাত্রীর সাথে কথা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান বকুল ছাত্রীদের শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়েছেন। ছাত্রীদের চরম আপত্তির পরেও তিনি স্পর্শকতার স্থানে হাত দিতেন বলে তারা আমাদের জানিয়েছে। তদন্তের বিষয়টি ইউএনও এবং শিক্ষা অফিসারকে অবগত করা হবে। তবে অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে বলে জানিয়েছেন অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান বকুল।
কাথুলী ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরেই শিক্ষকের বিকৃত যৌন লালসার শিকার ছাত্রীরা নিরবে সহ্য করে অন্যত্র চলে গেছে। পিতৃতুল্য শিক্ষকের কাছ থেকে এমন আচরণের বিষয়ে লজ্জায় তারা মুখ খুলতে পারেনি। বিষয়টি নিয়ে আমরাও খুব বিব্রত। এ ধরনের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক সাজা না হলে আস্থা বলে কিছুই থাকবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অভিভাবক বলেন, আমরা তো মেয়েদের বিদ্যালয়ে যেতে দিতেও ভয় পাচ্ছি। ভূক্তভোগীরা ছাড়াও সকল ছাত্রীর পরিবারই লজ্জিত। এ ঘটনার বিচার দাবি করেন তারা।
জানতে চাইলে নওপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পর্যদ সভাপতি আব্দুস সাত্তার বলেন, এখন অনেকেই অভিযোগ দিচ্ছে। এর আগে কেউ এমন অভিযোগ করেননি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আজ বুধবার কমিটির সভা ডাকা হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের ছুটির বিষয়ে তিনি বলেন, ভারতীয় ভিসা করার কথা বলে প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান বকুল তিন দিনের ছুটি নিয়েছেন। যৌন নির্যাতনের ঘটনায় গা ঢাকা দিতে ছুটি নিয়েছেন কি-না তা আমার কাছে পরিস্কার নয়।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষ্ণুপদ পাল বলেন, আমি বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি জানার পর খোঁজ নিতে শিক্ষা অফিসারকে বলেছি। সতত্যা নিশ্চিত করে অইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।