গাংনীর জুগিন্দা গ্রামে ৭ বাড়িতে ডাকাতি : ডাকাতের বোমায় কৃষক নিহত

মাজেদুল হক মানিক: মেহেরপুর সদরের হিজুলী গ্রামে এক কৃষককে বোমা হামলায় হত্যার ৫ দিনের মাথায় আবারও নৃশংসতা চালিয়েছে ডাকাতদলের সদস্যরা। গতরাত দেড়টার দিকে একইভাবে গাংনী উপজেলার জুগিন্দা গ্রামে আরেক কৃষককে হত্যা করেছে। নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার এ কৃষকের নাম স্বপন হোসেন (৩০)। সেই ওই গ্রামের ইসলাম আলীর ছেলে। এক সময় এলাকার স্বনামধন্য ফুটবলার ছিলেন স্বপন হোসেন।

স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, রাত দেড়টার দিকে জুগিন্দা গ্রামের খ্রিস্টানপাড়ার পার্শ্ববর্তী পাড়ায় ৩০/৪০ জনের সশস্ত্র ডাকাতদল হানা দেয়। এ সময় মৃত উপেন শাহের ছেলে বৃদ্ধি শাহ, দলিল শেখের ছেলে ছারু মিয়া, পাথার শেখের ছেলে রফিকুল ইসলাম, সামসুল হোসেনের ছেলে আসাদুল ইসলাম ও কোরবান আলী এবং জামাই হানু মিয়া এবং আক্কাছ আলীর ছেলে মশিউর রহমানের বাড়ি থেকে নগদ টাকাসহ বেশ কিছু মালামাল লুটে নেয়। বাড়ির লোকজনসহ প্রতিবেশীরা চিৎকার শুরু করেন। এক পর্যায়ে একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে খ্রিস্টানপাড়ার মোড় থেকে আমঝুপি মাঠের রাস্তা দিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে ডাকাতদলের সদস্যরা। ডাকাতি ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রামের প্রতিবেশীদের মতোই স্বপন ও তার ভাগ্নে জুয়েল রানা বাড়ির সামনে অবস্থান নেয়। ডাকাতদলের সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে নিজেরাই ‘চোর গেলো, ‘ডাকাত ধর’ এমন ভাষায় গ্রামবাসী সাজার অপচেষ্টা করে। স্বপন ও তার ভাগ্নে গ্রামবাসী ভেবে ডাকাত দলের সদস্যদের দিকে এগিয়ে এসে টর্চ লাইট মারে। এসময় ডাকাতরা তাকে লক্ষ্য করে একটি শক্তিশালী বোমা নিক্ষেপ করে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন জুগিন্দা গ্রামের ইউপি সদস্য জাফর আলী। নিহতের পরিবারের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি আরো জানিয়েছেন, স্বপন ভেবেছিলো গ্রামের লোকজন ডাকাতদলের সদস্যদের প্রতিরোধ করছে। বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তার ওপরে আসতেই তার ওপরে বোমা হামলা চালিয়ে পালিয়ে যায় ডাকাতরা। বোমাঘাতে জুয়েল রানা (২০) সামান্য আহত হয়েছে। তাকে স্থানীভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

স্থানীয়সূত্রে আরো জানা গেছে, খ্রিস্টানপাড়ার মোড় থেকে শুরু করে খাঁপাড়ার আগ পর্যন্ত ৭টি বাড়িতে একই সময়ে লুটপাট চালায় ডাকাতদলের সদস্যরা। তাদের হাতে ব্যাগ, অগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় ধারালো অস্ত্র ছিলো। সংখ্যা নিরুপন না করা গেলেও গ্রামবাসীর ধারণা তাদের সংখ্যা ৩০-৪০ জন হবে। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তারা লুটপাট চালায়। এতে গ্রামের মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও তারা প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। খ্রিস্টানপাড়া থেকে যে কাঁচা রাস্তাটি বের হয়েছে তা আমঝুপি গোরস্থানের পাশে গিয়ে মিশেছে। জুগিন্দা গ্রাম থেকে একটি বড় মাঠ পাড়ি দিয়ে আমঝুপি, খোকসা ও গাড়াডোব যাওয়া যায়। ডাকাতরা নিরাপদে স্থান ত্যাগ করার জন্য এ রাস্তাটি বেছে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসী। ফলে স্বপনকে হত্যা করে ওই রাস্তা দিয়ে ডাকাত দল পালিয়ে গেলেও গ্রামের মানুষের পক্ষে কিছুই করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে ঘুমন্ত মানুষের ওপর ডাকাত দলের হামলায় গ্রামবাসী যেমনি বিষ্মিত তেমনি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গভীর শোকের ছায়া বিরাজ করছে। পরিবার থেকে স্বজন পেরিয়ে এ শোক এখন গোটা গ্রামের মানুষকে কুরে কুরে খাচ্ছে। অনেকেই আক্ষেপ করে জানালেন, গ্রামের সব মানুষ একসাথে প্রতিরোধ করতে পারলে হয়তো স্বপনের এ পরিণতি হতো না। ডাকাতদের ধরা যেতো বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন অনেকেই।

এদিকে খবর পেয়ে গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাছুদুল আলমসহ পুলিশের একাধিক দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। শক্তিশালী বোমায় স্বপনের মাথা, বুক ও চোখে গুরুতর ক্ষত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি মাছুদুল আলম। লাশ উদ্ধারের পাশাপাশি ডাকাতদলের সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযানে চলছে বলেও জানালেন তিনি।

নিহতের পারিবারিক পরিচয়: নিহত স্বপন পেশায় কৃষক হলেও এক সময়ে এলাকার স্বমানধন্য ফুটবলার ছিলেন। বর্তমানে তিনি একজন সফল কৃষক হিসেবে সংসার করছেন। দাম্পত্য জীবনে তার দু মেয়ে রয়েছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তিকে হারিয়ে স্ত্রী, পিতা-মাতা ও সন্তান দুটি অসহায় হয়ে পড়েছেন। তাদের চোখে এখন শুধুই অন্ধকার।

এর আগে গত শুক্রবার দিবাগত রাতে সদর উপজেলার হিজুলি গ্রামে ডাকাতদল হানা দেয়। প্রতিরোধকালে ডাকাতদলের সদস্যরা ধরালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে বোমাঘাতে হত্যা করে কৃষক টিক্কা মিয়াকে (৩৫)। আহত হন আরেক প্রতিরোধকারী হাশমত উল্লাহ। এর আগে গাংনী উপজেলার গরিবপুর গ্রামে একই ভাবে ডাকাতদলের বোমা হামলায় নিহত হন ভ্যানচালক বাচ্চু মিয়া (৩৫)। এসব ঘটনায় এলাকায় যেমনি বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক তেমনি ডাকাতদলের সদস্যরা গ্রেফতার না হওয়ায় প্রতিনিয়তই ঘটছে ডাকাতির ঘটনা। হিজুলী গ্রাম থেকে জুগিন্দা গ্রামের দুরত্ব বেশি নয়। তাই দুটি ঘটনায় একই চক্র জড়িত কি-না তা খতিয়ে দেখে অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতারপূর্বক মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন এলাকার অনেকেই।