গাংনীর কাজলা নদী বেদখল!

মাজেদুল হক মানিক: মেহেরপুর গাংনীর এককালের ঐতিহ্যবাহী ও খরস্রোতা কাজলা নদী এখন পরিণত হয়েছে আবাদি জমিতে। স্থানীয় মানুষ নদী দখল করে চাষাবাদ শুরু করায় এটি সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়েছে। আর পুনর্খনন না করায় নদীর বুকে পলি জমে হারিয়েছে নাব্যতা। দখলদারদের উচ্ছেদ না করলে কাজলা নদী এক সময় বেদখল হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

গাংনীর কাজিপুর ইউনিয়নের মাথাভাঙ্গা নদী থেকে কাজলা নদীর উৎপত্তি। এরপর নওয়াপাড়া, ভাটপাড়া, গাড়াডোব এবং সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রাম হয়ে ভৈরব নদীতে গিয়ে মিশেছে। যেহেতু মাথাভাঙ্গা নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতের জলাঙ্গি নদী থেকে। তাই বর্ষা মরসুমে এখনো নদীতে পানির দেখা মেলে। এতে এ অঞ্চলের মৎসজীবীদের জীবিকা নির্বাহ হয়ে থাকে। কিন্তু বিভিন্ন স্থানে অবৈধ বাধ ও শুস্ক মরসুমে নদীর পাড় কেটে সমতল ভূমি তৈরি করায় নদীর নাব্যতা হারাচ্ছে। ফলে বর্ষাকালে বেশিরভাগ এলাকার আবাদি জমি পানিতে ডুবে যায়। উৎপত্তিস্থল থেকে ভৈরবের সংযোগ পর্যন্ত এখন ধান আবাদ করা হচ্ছে।

কাথুলী ইউপি চেয়ারম্যান কাবুল হোসেন জানান, কাজলার অববাহিকায় ধলাবিলসহ কয়েকটি মাঠে হাজার হাজার একর চাষের জমি রয়েছে। কাজলা নদী ভরাট হওয়ায় বর্ষাকালে ফসল হানি হচ্ছে। শুস্ক মরসুমে কিছু কিছু জায়গায় সামান্য পানি থাকলেও দখলদারদের দৌরাত্মে তা সাধারণ চাষিদের কাজে আসছে না। তাই দ্রুত পুনর্খনের মধ্যদিয়ে কাজলা নদী পুনরুদ্ধারের দাবি জানান এ জনপ্রতিনিধি।

স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, ব্রিটিশ শাসনামলে কাজলা নদী দিয়ে মালামাল কোলকাতাসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হতো। নদীর গভীরতা ও নাব্যতা থাকায় বন্যার সৃষ্টি হতো না। কাজলা নদীকে ঘিরেই গাংনী উপজেলার ভাটপাড়ায় ইংরেজরা কুঠিবাড়ি স্থাপন করে। সে সময় এলাকার মানুষের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিলো এ কাজলা নদী। দেশ বিভাগের পর থেকে খনন না করায় নদীর বুকে পলি জমে ক্রমশ সরু হয়ে পড়ে। সুযোগ বুঝে স্থানীয় দখলদাররা পর্যায়ক্রমে নদী দখল করে শুরু করে চাষাবাদ। শুস্ক মরসুমে নদীর বুকে এখন আর কোনো পানির দেখা মেলে না। শুধু দেখা যায় সবুজের সমারোহ। এ কারণে বর্ষা মরসুমে নদীর পানি প্রবাহ আপন গতিতে চলতে পারে না। ফলে আশপাশের মাঠের কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসলহানি হয়।

কাজলা নদীতে ধান আবাদকারী নওপাড়া গ্রামের ওয়াদুল ইসলাম, শাহিনুল ইসলাম ও শুক চাঁদ জানান, নদী পাড়ে তাদের আবাদি জমি রয়েছে। নিজস্ব জমির নীচে নদীর জমিতে তারা দীর্ঘদিন ধরে চাষাবাদ করে আসছেন। তাদের দাবি, যেহেতু শুস্ক মরসুমে জমি পড়ে থাকে তাই আবাদ করা হয়। এতে নদী ভরাট হচ্ছে এবং বর্ষাকালে পার্শ্ববর্তী মাঠের ফসলহানি এমন প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, সবাই করছে তাই আমরাও করছি। ৪ শতাধিক মানুষ নদী দখল করে চাষাবাদ করছেন। আবার অনেকে নদী জবর দখল করে অন্যের কাছে লিজ দিয়েছেন। নদীর দু পাড়ের প্রায় সব জমি দখলদারদের কবলে।

স্থানীয়সূত্রে আরো জানা গেছে, বেদখল হয়ে যাওয়া নদী উদ্ধারে সরকারি কোনো পদক্ষেপ নেই। অন্যদিকে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ইন্ধনে কতিপয় লোকজন ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে নিজেরা ভোগ দখল করা ছাড়াও অন্যের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। নদী খননের ব্যবস্থা করলে শুষ্ক মরসুমে কৃষকদের সেচের উৎস সৃষ্টি হবে।

সরজমিন তদন্ত করে দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুস সালাম। সেইসাথে নদী পুনর্খননের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে পত্র প্রেরণ করার কথা বললেন তিনি। মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন জানান, আগামী সংসদ অধিবেশনে কাজলা নদীসহ এ উপজেলার সব নদ-নদী পুনর্খননের দাবি জানানো হবে।