গাংনীর আকুবপুরে সড়কে গাছ ফেলে ঘণ্টাব্যাপী দুঃসাহসিক ডাকাতি

 

গরু ব্যবসায়ীদের পুঁজি লুটে নিল ডাকাতরা 

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর-কুষ্টিয়া প্রধান সড়কের গাংনী উপজেলার আকুবপুর চটকাতলা নামক স্থানে গতরাতে দুঃসাহসিক সড়ক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। রাস্তায় গাছ ফেলে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী ডাকাতির ঘটনায় ব্যবসার সর্বস্ব হারিয়েছেন কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী। ভুক্তভোগী পরিবারে এখন শুধুই কান্নার রোল। এ তথ্য জানিয়ে ভুক্তভোগীরা বলেছেন, ডাকাতরা গরু ব্যবসায়ীদের কয়েকজনের ক্ষুদ্র পুঁজির সবই কেড়ে নিয়েছে।

স্থানীয় ও ভুক্তভোগীসূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার কামারখালী ও শিমুলতলা গ্রামের কয়েকজন গরুব্যবসায়ী দুটি ট্রাকযোগে রংপুরের বড়বাড়িয়া গো-হাটের উদ্দেশে রওনা দেন। নিজ গ্রাম পার হয়ে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের গাংনী উপজেলার শেষ সীমান্ত খলিশাকুণ্ডি ব্রিজের কাছাকাছি পৌঁছুলে ডাকাতির কবলে পড়েন তারা। কয়েকজন ডাকাত সদস্য আগে থেকেই সেখানে সড়কে গাছ ফেলে দু পাশে কয়েকটি যানবাহন আটকে রাখে। গরুব্যবসায়ীদের বহন করা দুটি ট্রাকের চালক গাছ ফেলা দেখে ট্রাক ঘুরিয়ে পেছনের দিকে আসার চেষ্টা করেন। এ সময় দেশীয় অস্ত্র হাতে কয়েকজন ডাকাত সদস্য ট্রাক দুটিতে আক্রমণ করে। ট্রাকের ভেতর থাকা গরুব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে তারা। কিন্তু টাকা দিতে না চাইলে তাদেরকে মারধর করে ডাকাতরা। এ সময় কামারখালী গ্রামের গরুব্যবসায়ী আব্দুল মান্নানের ২ লাখ ৩০ হাজার, পানু মিয়ার ৫০ হাজার ও মহির উদ্দীনের কাছ থেকে ৯৫ হাজার টাকাসহ আরো কয়েক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা।

এদিকে শুধু গরুব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নয়, ঢাকাগামী একটি পরিবহনের যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা ও মালামাল লুটে নেয় ডাকাতরা। দীর্ঘ সময় ধরে সড়কে ডাকাতদের তাণ্ডবে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে বামন্দী, কুমারীডাঙ্গা ক্যাম্প পুলিশ ও গাংনী থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে চারদিক ঘিরে ফেলে। কিন্তু তার আগেই ডাকাতি করে সটকে পড়ে ডাকাতরা।

এদিকে ডাকাতির কবলে পড়ে ব্যবসার সব পুঁজি হারিয়ে ভুক্তভোগী গরুব্যবসায়ীদের কয়েকজন মূর্ছা যাচ্ছিলেন। তাদের পরিবারে এখন শুধুই কান্নার রোল। এ অবস্থায় কিভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাবেন তা ভেবে কোনো কূল কিনারা পাচ্ছেন না তারা। ডাকাত দলের সদস্যদের গ্রেফতার ও ডাকাতি হওয়া টাকা উদ্ধারে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।

গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল থেকে জানান, পুলিশের তৎপরতায় রাস্তার গাছ সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে। ঘটনার সাথে কারা জড়িত তা বের করে গ্রেফতার করার প্রক্রিয়া চলছে। ঘটনার পর থেকেই ক্যাম্পগুলোকে সতর্ক করে ডাকাতদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তবে গতরাত ২টার দিকে এ সংবাদ লেখার সময় পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।

টাকা বহনসহ ঝুঁকিপূর্ণ চলাচলে পুলিশের সহযোগিতা না চাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ওসি আরও বলেন, রাতে কোনো সড়ক কেউ ঝুঁকি মনে করলে অবশ্যই পুলিশের সহযোগিতা চাওয়া উচিত। প্রতি রাতে অনেকেই পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন। কিন্তু এতো টাকা বহন করেও গরুব্যবসায়ীরা কোনো নিরাপত্তা নেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি।

স্থানীয়সূত্রে আরও জানা গেছে, গতকাল আলমডাঙ্গা পশুহাট থেকে গরু কেনাবেচা করে এলাকার ব্যবসায়ীরা বাড়ি ফেরার কারণে সন্ধ্যা থেকে ছাতিয়ান-বামন্দী সড়কে কুমারীডাঙ্গা পুলিশের টহল ছিলো। পুলিশ যখন একেকটি করে গরুর গাড়ি পার করছিলো তখন ডাকাতিস্থলে পুলিশের টহল ছিলো না। আর এ সুযোগ কাজে লাগায় ডাকাতরা। তবে এ উপজেলার ডাকাতির ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের মধ্যে ওই চটকাতলা অন্যতম। তাই সেখানে নিয়মিত পুলিশি টহলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি করেছেন এলাকাবাসী।

উল্লেখ্য, গত ২২ জুন আমতৈল-ভোলাডাঙ্গা মাঠের মধ্যে ছিনতাইকারীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কয়েকজন গরুব্যবসায়ী আহত হন। আলমডাঙ্গা গোহাট থেকে ফেরার পথে আমতৈল-ভোলাডাঙ্গা গ্রামের মাঠে এ ঘটনা ঘটে। এর কয়েকদিন পরে একই সড়কের সিন্দুরকোটা-শিমুলতলা মাঠে কয়েকজন মাছ ব্যবসায়ীকে মারধর করে টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। দীর্ঘদিন পরে ওই সড়কে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এলাকার ব্যবসায়ীসহ পথচারীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।