গাংনীতে তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে ধারালো অস্ত্রের কোপ ॥ ভুড়ি-কিডনি বেরিয়ে গেলো মুরগী ব্যবসায়ীর

গাংনী প্রতিনিধি: প্রতিবেশীদের নগ্ন হামলায় মেহেরপুর গাংনী উপজেলার ধর্মচাকী গ্রামের একই পরিবারের চারজন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে আব্দুর রহিমের (৩৭) ভুড়ি-কিডনি বেরিয়ে গেছে। তার পেটে ধারালো অস্ত্র হেঁসো দিয়ে কোপানো হয়েছে। হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল শনিবার রাত ৮টার দিকে রহিমের বাড়িতে। ঘটনার পর থেকেই আত্মগোপন করেছে হামলাকারী।
আহতদের মধ্যে ধর্মচাকী গ্রামের রাহাতুল্লাহর ছেলে মুরগি ব্যবসায়ী আব্দুর রহিমকে কুষ্টিয়া মেডিকেল থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। রহিমের স্ত্রী জেসমিন আক্তার (৩২) ও মেয়ে রিমা খাতুন (১১) এবং ভাতিজা মিম মাসাদকে (১৪) গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
আহতসূত্রে জানা গেছে, রহিমের বাড়ির ভেতরের একটি মেহগনি গাছে গতকাল কবুতরের ঘর স্থাপন করেন তার বড় ভাই আয়ুব আলীর ছেলে মিম মাছাদ। এতে বাধা দেয় প্রতিবেশী পল্লি চিকিৎসক ঠা-ুু মিয়ার পরিবারের লোকজন। এ নিয়ে রাতে উভয় পক্ষের মধ্যে মৃদ উত্তেজনা দেখা দেয়। তখন আব্দুর রহিম নিজ বাড়িতে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন। এ সময় ঠা-ুু ও তার ভাই রিপন হোসেন, ফুফাতো ভাই খাইরুল ইসলাম এবং চাচা আব্দুল হান্নান ও মৃন্নাল হোসেনসহ কয়েকজন রহিমের পরিবারের ওপর হামলা চালান। লাঠিসোঁটা দিয়ে পেটানোর এক পর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে রহিমের পেটে কোপ দেয়। রহিমকে বাঁচাতে গিয়ে তার স্ত্রী, মেয়ে ও ভাতিজা আহত হয়।
রহিমের স্ত্রী জেসমিন খাতুন জানান, ধারালো অস্ত্রের কোপে তার স্বামীর পেটের ভুড়ি ও কিডনি বেরিয়ে যায়। প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। অজ্ঞান হয়ে পড়েন তিনি। তাকে মৃত ভেবে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। পরে গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় আহতরা গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছায়। তবে রহিমের চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হয়ে চিকিৎসকরা দ্রুত কুষ্টিয়া মেডিকেলে পাঠিয়ে দেন।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার সামসুল আরেফিন বলেন, রহিমের পেটের ডান দিকে ধারালো অস্ত্রের গুরুতর কোপের চিহ্ন রয়েছে। এতে ভুড়ি ও কিডনির কিছু অংশ বেরিয়ে গেছে। রক্তক্ষরণ বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। প্রাথমিকভাবে ব্যান্ডেজ দিয়ে বেঁধে রেফার করা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
অপরদিকে রহিমের স্ত্রীর মাথায় গুরুতর জখম ও আঘাতের চিহ্নি রয়েছে। রিমা ও মাছাদের শরীরে তেমন জখমের চিহ্ন না থাকলেও আঘাতের ফোলা চিহ্ন রয়েছে। ওই তিনজন আশঙ্কামুক্ত বলে জানান তিনি।
এদিকে রহিমকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর থেকেই তার মেয়ে ও স্ত্রী অঝোরে কান্নাকাটি করছে। যেকোনো সময় মৃত্যুর আশঙ্কায় ভেঙ্গে পড়েছেন তারা। কুষ্টিয়া হাসপাতালে রহিমের সাথে রয়েছেন তার বড় ভাই। রাত ১টার দিকে এ সংবাদ লেখার সময় পর্যন্ত তিনি বলেন, কুষ্টিয়াতে তার চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে না। রাজশাহী রেফার করেছে। সেখানে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি। নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত তাই পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া দরিদ্র রহিমের পরিবারের পক্ষে চিকিৎসা খরচ কতোটা জোগান দেয়া সম্ভব তা বড় চিন্তার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।
গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, খবর পেয়ে হামলাকারীদের গ্রেফতারে মাঠে নেমেছে পুলিশ। দ্রুত তাদের গ্রেফতার করা হবে।