গভীর শ্রদ্ধা ও বিনম্র ভালোবাসায় জাতীয় কবির জন্মদিন উদযাপন

চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরসহ সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক বর্ণাঢ্য আয়োজন

 

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: যথাযোগ্য মর্যাদা, গভীর শ্রদ্ধা ও বিনম্র ভালোবাসায় গণমানুষের প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন উদযাপন করলো জাতি। নজরুলের বৈচিত্র্যময় সুর-ঐশ্বর্যের সম্মোহন আর অসামপ্রদায়িক মানবতার বাণী উচ্চারণে মুখরিত ছিলো প্রতিটি অনুষ্ঠান মঞ্চ। অনুষ্ঠান মালার মধ্যে ছিলো গান, নৃত্য পরিবেশনা, আবৃত্তি, নৃত্যনাট্য মঞ্চায়ন, নজরুল বিষয়ক আলোচনা প্রভৃতি। চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরসহ সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক বর্ণাঢ্য আয়োজন ছিলো।

কার্পাসডাঙ্গা/কুড়ুলগাছি প্রতিনিধি জানিয়েছে, বিদ্রোহী কবি, সাম্যের কবি, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজারুল ইসলাম আমাদের অহংকার। কবি সৈনিক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের সর্বক্ষেত্রে কম বেশি চেতনায় উজ্জীবিত ছিলেন ‘জাতীয় কবি নজরুল আমাদের দেশের সম্পদ ছিলেন।’ গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত জাতীয় নজরুল সম্মেলনে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন, জাতীয় সংসদের হুইপ চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি। তিনি আরও বলেন, এই কার্পাসডাঙ্গাতে নজরুল চর্চা, নজরুল গবেষণা ও নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় হয় তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ইতোমধ্যে সরকার আমলে নিয়েছে। এটি অত্যন্ত গৌরবের বিষয় যে আমাদের জাতীয় কবি চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গায় সপরিবারে কিছু দিন অবস্থান করেছিলেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯২৬ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে স্ত্রী প্রমীলা, বড় ছেলে বুলবুল ও শাশুড়ি গিরিবালাকে নিয়ে কার্পাসডাঙ্গায় প্রায় দু মাস অবস্থান করেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানায় কার্পাসডাঙ্গা নজরুল স্মৃতি সংসদ। জাতীয় নজরুল সম্মেলনের প্রথম দিনে কার্পাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে এ সম্মেলনের আয়োজন করে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন ও জেলা শিল্পকলা একাডেমি। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার মো. নিজাম উদ্দীন, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রফিকুল হাসান, দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমগীর হান্নান, কার্পাসডাঙ্গা নজরুল স্মৃতি সংসদের সভাপতি আব্দুল গফুর, কার্পাসডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি রবিউল হোসেন শুকলাল, মূখ্য আলোচক অগ্নিবীনার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এইচ অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আনজুমান আরা, কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান ভুট্ট, আওয়ামী লীগ নেতা নজির আহমেদ, শওকত আলী, আব্দুস সালাম, আব্দুল হামিদ। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুন্সি আবু সাইফ অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন। অনুষ্ঠানটির সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন দামুড়হুদা উপজেলা নাজির হমিদুল ইসলাম। আলোচনা সভা শেষে সন্ধ্যা ৭টায় চুয়াডাঙ্গা জেলা শিল্পকলা একাডেমির পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠিত হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন হিরণ উর রশিদ শান্ত।

এদিকে, চুয়াডাঙ্গা সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের উদ্যোগে রবীন্দ্র-নজরুলজয়ন্তী ২০১৭ পালিত হয়েছে। কলেজ মিলনায়তনে সকাল ১০টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত এ আয়োজন চলে। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। কলেজ অধ্যক্ষ নওরোজ মোহাম্মদ সাঈদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মকবুলার রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন, রবীন্দ্র অনুরাগী কবি বনওয়ারী লাল বাগলা। কলেজের পক্ষ থেকে এই দুই গুণিজনকে সম্মাননা দেয়া হয়। সম্মাননাপ্রাপ্ত গুণিজনদেরকে উত্তরীয় পরানোর পাশাপাশি ক্রেস্ট দেয়া হয়।

প্রধান অতিথি মকবুলার রহমান বলেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জন্য সাহিত্যের অমূল্য ভাণ্ডার রেখে গেছেন। যা কখনই ফুরাবার নয়। ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক সুলতানা জান্নাতুল ফেরদৌসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক বাংলা বিভাগের প্রধান ড. আব্দুর রশিদ। আলোচনায় অংশ নেন, কলেজের উপাধ্যক্ষ ড. জাহাঙ্গীর আলম ও শিক্ষক পরিষদের সহসস্পাদক মহসীন কবীর। আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক পর্বে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান ও কবিতা পরিবেশিত হয়। এতে অংশ নেন কলেজের শিক্ষক মাসুদ পারভেজ, রাসেল আহমেদ ও নাঈমা ফারহানা এবং ছাত্রী সুরাইয়া রহমান চন্দ্রিমা, তৃষা দত্ত, আসমাউল হুসনা, বর্ষা সেন, উম্মে খাদিজা আখি ও নওশীন আক্তার ঐশি। তালযন্ত্রে সহযোগিতা করেন, আতিয়ার রহমান ও শ্রীদাম রায়।

আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, বেশ ঘটা করেই আলমডাঙ্গায় জাতীয় কবি কাজী নজরুলের ১১৮ তম জন্মজয়ন্তি উৎসব পালন করা হয়েছে। রবীন্দ্র-নজরুল জন্মজয়ন্তি উৎযাপন পরিষদের উদ্যোগে গতকাল সন্ধ্যায় এরশাদমঞ্চে এ জন্মজয়ন্তি উৎসব পালিত হয়। উদযাপন কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শেখ নূর মোহাম্মদ জকুর সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কথা সাহিত্যিক রফিকুর রশিদ।

বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আলমডাঙ্গা পৌর মেয়র হাসান কাদির গনু, আলমডাঙ্গার সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আফিল উদ্দীন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল ইমরান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী খালিদুর রহমান অরুণ, গাংনী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম, আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহ আলম মন্টু, সাধারণ সম্পাদক হামিদুল ইসলাম আজম।

হারদী এমএস জোহা ডিগ্রি কলেজ প্রভাষক একেএম ফারুক ও উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শামীম রেজার উপস্থাপনায় বক্তব্য রাখেন যোদ্ধা আবুল কাশেম, অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন মঞ্জু, সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অফম সিরাজ সামজী, কবি আসিফ জাহান, হাবিবুর রহমান, কলেজিয়েট স্কুলের অধ্যক্ষ জামসিদুল হক মুনি। সাংবাদিক রহমান মুকুল লিখিত ‘রবীন্দ্র-নজরুল, গুরু-শিষ্য সম্পর্কের সঘন রসায়ন’ শীর্ষক নিবন্ধ পাঠ করেন আতিক বিশ্বাস। প্রধান আলোচক জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সম্পের্কে বলেতে গিয়ে বলেন। দ্রোহ-প্রেম- সাম্য-মানবতা, শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির বার্তা নিয়ে ১৩০৬ বঙ্গাব্দে আজকের এই দিনে ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব হয়েছিলো। হটাৎ করেই বাংলা সাহিত্য আবির্ভূত হয়ে সমস্ত আকাশকে রাঙ্গিয়ে বিস্ময়কর আলো হয়ে পথ দেখিয়ে চলেছেন বাঙালি জাতিকে। ‘৭১–এ মুক্তিযুদ্ধে জাতীয় কবির কবিতা ও গান বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করেছিলো। তিনি আরও বলেন, তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রথিকৃত। তার ক্ষুরধার লেখনি যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মানুষকে মুক্তির পথ দেখিয়েছে।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৮তম জন্মদিবস উপলক্ষে মেহেরপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে আলোচনাসভা, সঙ্গীতানুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণীর আয়োজন করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহসভাপতি নূরুল আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক খায়রুল হাসান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রশিদুল মান্নাফ কবীর। আবুল হাসনাত দিপু ও ফাতেমা ফারজানা নির্জনা’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান মফিজ। অনুষ্ঠানের আলোচক ছিলেন জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক হাসানুজ্জামান মালেক, জেলা জজ আদালতের পিপি অ্যাড. পল্লব ভট্টাচার্য প্রমুখ। পরে সেখানে জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের সমন্বয়ে নজরুল সঙ্গীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসময় সেখানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত) সাইদুর রহমান, বর্তমান সহসভাপতি মোমিনুল হক, উদীচীর সাবেক সভাপতি অ্যাড. ইব্রাহীম শাহীন, জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার তানবীর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক অ্যাড. আব্দুল্লাহ আল মামুন রাসেল, শাফিনাজ আরা ইরানী, এখলেচুর রহমান টাবলু, অরণী থিয়েটারের সভাপতি নিশান সাবের প্রমুখ।