গণতন্ত্রের মৃত্যু হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশে গণতন্ত্রের মৃত্যু হয়েছে। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন চাই। এসব কথা বলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি সম্প্রতি লন্ডনের ফিনান্সিয়াল টাইমস পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। গতকাল তা প্রকাশিত হয় ওই পত্রিকায়। ফিনান্সিয়াল টাইমসের পক্ষে তার সাক্ষাৎকার নেন ভিক্টর ম্যালেট ও জোসেফ অলচিন। খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, দেশে গণতন্ত্র ধ্বংস করে দিচ্ছে সরকার। শেখ হাসিনা অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। তিনি একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত করছেন দেশকে। অন্য দিকে নিউইয়র্ক টাইমসকে দেয়া আলাদা এক সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়া বলেছেন, জামায়াতের সাথে তাদের চিরস্থায়ী সম্পর্ক নয়। তবে এখনই জামায়াতের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করছেন না। সময় হলেই এ বিষয়টি তিনি বিবেচনা করবেন। সমপ্রতি নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক ইলেন বেরি গুলশানে খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎকার নিতে গেলে তাকে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি কর্তৃপক্ষ। ওই সময় খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দী করে রাখা হয় বলে অভিযোগ তার দলের ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার। পরে ইলেন বেরি অনুমতি পান। তার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে শেষ পর্যন্ত। খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎকার নেন ফিনান্সিয়াল টাইমস পত্রিকার দু সাংবাদিক। ওই পত্রিকা লিখেছে, বিরোধীদলের নির্বাচন বর্জনের মধ্যদিয়ে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছেন শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ। খালেদা জিয়ার মতে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট পড়েছে শতকরা মাত্র ৫ ভাগ। ঢাকাভিত্তিক কূটনীতিকরা বলছেন, এ হার শতকরা ১০ থেকে ২০ ভাগ। তবে ঢাকায় নির্বাচন কমিশনের মতে, ভোটের এ হার প্রায় শতকরা ৪০ ভাগ। এমন অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি নেতা খালেদা জিয়ার মধ্যে তিক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও তীব্র হয়েছে বলে মনে করছে বিদেশি সরকারগুলো ও অনেক বাংলাদেশি। একদিকে আওয়ামী লীগ হয়ে উঠছে ক্রমশ স্বৈরশাসক, অন্যদিকে খালেদা জিয়ার সমর্থক ও তার মিত্ররা ভয়াবহ সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছেন। সরকারের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে বারবার হরতাল দেয়ার পক্ষে কথা বলেছেন খালেদা জিয়া। তিনি গৃহবন্দী হওয়ার পর তার দলের সামনে দৃশ্যমান কর্মকাণ্ড ছিলো অবরোধ ও হরতাল। পুলিশ এ সময় তার দলের অফিস বন্ধ করে রাখে। নেতাদের জেলে পাঠানো হয় অথবা তাদেরকে আত্মগোপনে যেতে হয়। এসব বিষয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা অন্য কোনো কর্মসূচিই পালন করতে পারছি না। আমরা যেসব কর্মসূচি (অবরোধ, হরতাল) দিয়েছি তা অত্যন্ত ভালো ও কার্যকর। কারণ, আমাদের সাথে যোগ দিয়েছে জনগণ। তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে সরকার বিএনপির ৪০০০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। অপহরণ ও গুম করেছে প্রায় ২০০ নেতাকর্মীকে। এর ফলে আমাদের হাতে এমন কর্মসূচি দেয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিলো না। নিখোঁজদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা কোনো জেলে নেই। এমনকি তারা আত্মগোপন করেও নেই। পুলিশ গিয়ে তাদেরকে তুলে নিয়ে গেছে। তারপর থেকে ওইসব নেতাকর্মীর কোনো হদিস মিলছে না। আওয়ামী লীগ বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা এখন একদলীয় ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী হিসেবে অভিহিত করেন। তবে বিশেষ করে শেখ হাসিনার ওপর তার ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, যতদিন তিনি ক্ষমতায় থাকবেন তা হবে অবৈধ। তারা দেশটাকে ধ্বংস করে দেয়ার চেষ্টা করছে। হাসিনা দেশকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, বাংলাদেশে উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনীতির ইতি ঘটার সময় কি এখন এসেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, লন্ডনে থাকা তার ছেলে তারেক রহমান বিএনপির নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান। খালেদা জিয়াকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে রাজনীতিতে নিয়ে আসা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজনীতিতে আমার কোনো আগ্রহ ছিলো না। দলীয় নেতাকর্মীরা আমাকে রাজনীতিতে নিয়ে এসেছেন। আমি অনেক জটিলতা মোকাবিলা করেছি। জনগণ ও নেতাকর্মীরা আমাকে পছন্দ করেন।