খুনিদের ফাঁসি চেয়ে কাঁন্নায় ভেঙে পড়লেন বোন সোনিয়া

দামুড়হুদায় স্কুলছাত্র সজিব হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত

 

বখতিয়ার হোসেন বকুল: চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র সজিব হত্যার বিচার এবং খুনিদের অভিলম্বে গ্রেফতারসহ ফাঁসির দাবিতে দামুড়হুদায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত দামুড়হুদা উপজেলা শহরের প্রধান সড়কের দু ধারে (দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ড থেকে মাথাভাঙ্গা ব্রিজ পর্যন্ত) এলাকার যুবসমাজের উদ্যোগে ওই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। সকাল ১০টা দিকে কর্মসূচির পূর্ব নির্ধারিত সময় দেয়া থাকলেও সকাল ৯টা থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবকদের চৌরাস্তার মোড়ে জড়ো হতে দেখা যায়। সজিব হত্যার বিচার চাই, সজিবের হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই, লেখা ব্যানার, ফেস্টুন, প্লাকার্ড হাতে দামুড়হুদা পাইলট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পাইলট মডেল হাই স্কুল, ডিএস দাখিল মাদরাসার শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দামুড়হুদায় স্মরণকালের ওই মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে। মানববন্ধন চলাকালিন চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষার্থী চুয়াডাঙ্গা থেকে দামুড়হুদায় এসে কর্মসূচিতে অংশ নেয়। ‘ফাঁসি চাই-ফাঁসি চাই সজিব হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই, বিচার চাই-বিচার চাই সজিব হত্যার বিচার চাই’ স্লোগানে গোটা এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।

ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে চৌরাস্তার মোড়ে দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টুর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি ডা. মাসুম আলী খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক নতিপোতা ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল হক আজিজ, দামুড়হুদা সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, যুগ্মসম্পাদক ইমতিয়াজ হোসেন, দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ড বাজার কমিটির সভাপতি আশরাফুল আলম, ডিএস দাখিল মাদরাসার সভাপতি যুবলীগ নেতা সেলিম উদ্দীন বগা, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নুরুননবী, দামুড়হুদা বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম, যুবলীগ নেতা হযরত আলী, ছোট হযরত, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাজু আহম্মেদ রিংকু এবং নিহত সজিবের একমাত্র বোন সোনিয়া। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দামুড়হুদা পাইলট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নূর জাহান খাতুন, ডিএস দাখিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার জয়নাল আবেদীন, শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক, প্যানেল চেয়ারম্যান আবু সাঈদ, দশমী স্টার ক্লাবের সভাপতি আব্দুল হালিম ভুট্টু, সজিবের মামা আব্দুল হালিম, হায়দার আলী, সন্টু, রকিবুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম রশিদ, জুয়েল, সাগর, আমিরুল ইসলাম প্রমুখ। বক্তারা সজিব হত্যা ঘটনার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানিয়ে কাঁন্নায় ভেঙে পড়েন নিহত স্কুলছাত্র সজিবের বোন সোনিয়া। এ সময় উপস্থিত সকলের দু চোখ অশ্রুতে ভিজে আসে। সমাবেশ শেষে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিলসহ উপজেলা পরিষদ চত্বরে হাজির হলে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদুর রহমান নিজ কার্যালয় থেকে নিচে নেমে আসেন এবং কর্মসূচির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে বক্তব্য রাখেন।

উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলা চত্বরে অনুষ্ঠিত বৃক্ষমেলা প্রাঙ্গণ থেকে চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র দামুড়হুদা ব্রিজপাড়ার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে সজিব নিখোঁজ হয়। এ সংক্রান্তে নিহত সজিবের নানা আব্দুল হামিদ পর দিন দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি সাধারণ ডাইরি করেন। নিখোঁজের ৩২ দিনের মাথায় চুয়াডাঙ্গা শহরের সিঅ্যান্ডবি পাড়ার মৎস্য ভবনের পাশের একটি লাইট ফ্যাক্টরির সেফটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে ৩১ আগস্ট বুধবার সকালে স্কুলছাত্র সজিবের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার হয়। মোবাইলফোন ট্রাকিঙের মাধ্যমে হত্যা ঘটনার সাথে জড়িত কয়েকজনকে আটকের পর তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক ওই লাইট তৈরীর ফ্যাক্টারীতে অভিযান চালায় ৱ্যাবের একটি বিশেষ টিম। তারা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সহযোগিতায় প্রায় ২৫ ফুট গভীর সেফটিক ট্যাংকের মধ্য থেকে সজিবের লাশ উদ্ধার করে। বিকেলে নিহত সজিবের মামা আব্দুল হালিম বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫/৬ জনকে আসামি করে দামুড়হুদা মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার সাথে জড়িত বাড়ির মালিক কুরবান আলী ও তার স্ত্রী-ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন তাদের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়।