খাসকররা সরকারি প্রাথমিক বালক বিদ্যালয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পরিত্যক্ত কক্ষে খুদে শিক্ষার্থীদের পাঠদান

স্টাফ রিপোর্টার: পরিত্যক্ত একতলা ভবনের স্যাঁতসেঁতে একটি কক্ষ। যার দেয়াল ও ছাদের পলেস্তারার অনেকাংশই খসে পড়েছে। পলেস্তারামুক্ত ছাদ ও বিমের ভেতরে মরিচাধরা রডগুলো বেরিয়ে পেড়েছে। এমনই ঝুঁকিপূর্ণ কক্ষে প্রাক-প্রাথমিকে (শিশু) পড়ুয়া খুদে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে আলমডাঙ্গার খাসকররা সরকারি প্রাথমিক বালক বিদ্যালয়ে। অথচ শিশুদের বিদ্যালয়মুখী করতে সবচেয়ে পরিপাটি কক্ষে পাঠদান করানোর জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা রয়েছে। বিষয়টি নিয়মিত তদারকির জন্য শিক্ষা কর্মকর্তাদের ক্লাস্টারভিত্তিক দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে এই বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে কোনোটাই মানা হচ্ছে না। ১৬ এপ্রিল সকাল ১০টায় সরেজমিন দেখা গেছে, পরিত্যক্ত কক্ষের মেঝেতে চটের ওপর বসা ১০ খুদে শিক্ষার্থীকে প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান আলী পাঠদান করাচ্ছেন। পাশেই রয়েছে একতলা পাকা বিদ্যালয় ভবন। চার কক্ষের ভবনটির একটিতে শিক্ষকদের কার্যালয়। অন্য তিনটিতে প্রথম, দ্বিতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। পরিত্যক্ত ভবনে শিশুদের পাঠদানের প্রসঙ্গ তুলতেই কর্মরত শিক্ষকেরা খুব সহজেই জানালেন, কক্ষ-সঙ্কটের কারণে প্রাক-প্রাথমিক (শিশু) শ্রেণির শিক্ষার্থীর ঠাঁই হয়েছে বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনের ওই কক্ষে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, ১৯৩২ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬২ সালে সেখানে চার কক্ষের একটি ভবন তৈরি হয়। এ ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হলে ২০১৩ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এর আগেই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০০৩ সালে চার কক্ষের একটি একতলা ভবন তৈরি করে। বিদ্যালয়ে বর্তমানে ২০৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। যার মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকে ৩৩, প্রথম শ্রেণিতে ৩৭, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ২৫, তৃতীয় শ্রেণিতে ৪২, চতুর্থ শ্রেণিতে ৩৭ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৩৪ জন রয়েছে। আছেন প্রধান শিক্ষকসহ মোট ছয়জন শিক্ষক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই পালায় পরিচালিত বিদ্যালয়টিতে প্রথম পালায় প্রাক্-প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির এবং দ্বিতীয় পালায় তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান করানো হয়। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া সব শিক্ষার্থী নতুন ভবনে পড়ার সুযোগ পেলেও প্রাক্-প্রাথমিকের খুদে শিক্ষার্থীদের সেখানে ঠাঁই হয়নি।
১৬ এপ্রিল প্রাক-প্রাথমিকের ৩৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১০ জন উপস্থিত ছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক বলেন, পরিত্যক্ত কক্ষে পাঠদান করায় তাদের সন্তানেরা বিদ্যালয়ের প্রতি নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছে। তারা নিজেরাও জোর করে বিদ্যালয়ে পাঠাতে আগ্রহী নন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান আলী বলেন, শ্রেণিকক্ষের স্বল্পতার কারণে নিরুপায় হয়েই পরিত্যক্ত কক্ষে পাঠদান করানো হয়ে থাকে। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং কার্যবিবরণীসহ উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ে লিখিত জানানো হয়েছে।
খাসকররা ক্লাস্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহজাহান রেজা বলেন, বিদ্যালয়টির কক্ষের সমস্যার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বলা হয়েছে প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে পরিপাটি ঘরে পাঠদান করাতে হবে। শ্রেণিকক্ষের অভাব থাকলে অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গাছতলায় পাঠদান করা যাবে। কখনোই পরিত্যক্ত কক্ষে পড়ানো যাবে না।