খালেদা দেশদ্রোহী : হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার: যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানানোয় খালেদা জিয়াকে সব থেকে বড় দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়েছেন শেখ হাসিনা। গতকাল শনিবার হবিগঞ্জে এক জনসভায় বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনকে এ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানি করায় জনগণের আদালতে তার বিচার হবে। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় দেশের সর্ববৃহৎ গ্যাস ক্ষেত্র বিবিয়ানায় কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধন ও কয়েকটির ভিত্তিস্থাপনের পর জেলা শহরের নিউ ফিল্ডে জনসভায় আসেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় ছিলো জামায়াতকে নিয়ে। যুদ্ধাপরাধীদের হাতে লাখো শহীদের রক্ত ও নির্যাতনের পতাকা; সেই পতাকা তুলে দিয়েছিলো খালেদা জিয়া। তাদেরকে বানিয়েছিলো মন্ত্রী। কাদের? যারা একাত্তর সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে এক হয়ে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়েছে, মানুষ হত্যা করেছে, মা-বোনদের নির্যাতন করেছে, লুটপাট করেছে। তারা যুদ্ধাপরাধী।

শেখ হাসিনা বলেন, আজ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। অনেকের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। লাখো শহীদের রক্তের পতাকা তাদের হাতে তুলে দিয়ে সব থেকে বড় দেশদ্রোহিতা ওই খালেদা জিয়া করেছে এই দেশের মানুষের সাথে; লাখো শহীদের রক্তের সাথে বেঈমানি করেছিলো। আজকে যেমন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে; ওই লাখো শহীদের রক্তের সাথে বেঈমানি করার জন্য একদিন জনগণের আদালতে তারও বিচার হবে। সে দেশের শত্রু, জনগণের শত্রু, জনগণের কল্যাণ চায় না। বিএনপির ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, এক অর্থে ভালোই হয়েছে। পার্লামেন্টে এখন খিস্তি-খেউড় শোনা যায় না। সংসদ ভদ্রভাবে চলছে। সংসদের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরে এসেছে। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রয়েছে। নির্বাচনের আগে গাড়ি পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, নির্বাচন কর্মকর্তাদের ওপর হামলার চিত্র তুলে ধরেন তিনি। বক্তব্যের শুরুতেই হবিগঞ্জে গ্রেনেড হামলায় নিহত সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াকে স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ করে দোষীদের শাস্তি দেয়া হবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মানুষ শান্তিতে থাকে। বিএনপি-জামায়াত এলে অশান্তিতে থাকে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় এখানেও সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। খালেদার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির দু গুণ। সন্ত্রাস আর মানুষ খুন। বিএনপির নেত্রী বক্তৃতা দিয়ে বেড়ায়, তার সময়ে নাকি দেশে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে ছিলো। তিনি জোয়ার দেখাতে পারেন আর না পারেন, ভাটার টান দেখিয়েছেন। জোয়ারের ঠেলায় বিদ্যুত উৎপাদন কমিয়ে দিলেন। জোয়ার না ভাটা, তা বোঝার বোধশক্তি উনার নেই। উনি গ্যাসের উৎপাদন কমালেন, বিদ্যুত উৎপাদন কমালেন। একটা জিনিসের উৎপাদন বাড়ালেন, সেটা কী? বোমাবাজি, গ্রেনেড, হামলা সন্ত্রাস। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, গ্রেনেড হামলার জন্য বিদেশে দেশের নষ্ট হওয়া ভাবমূর্তি আওয়ামী লীগ সরকার পুনরুদ্ধার করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নের রোল মডেল।

১৯৯৬ সালে এসে আমরা যেসব কাজ শুরু করেছিলাম, একটা কাজ বিএনপি শেষ করেনি। বন্ধ করে দিয়েছে না হয় ফেলে রেখেছে। আমরা আবার ক্ষমতায় এসে একে একে সেই কাজগুলো শেষ করেছি। অর্থনীতির পরিবর্তনের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির সময় দিনমজুররা তাদের দৈনিক উপার্জন দিয়ে একবেলার খাবার কিনতে পারতে না। আল্লাহর রহমতে আজকে একজন দিনমজুর বা রিকশাওয়ালা দিনশেষে যে টাকা জমা করে, তা দিয়ে খাবার কিনেও অনেক টাকা হাতে থাকে। প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার গড়ে তোলা এবং এর মাধ্যমে দেশ ও বিদেশ থেকে অর্থ উপার্জনের চিত্রও তুলে ধরেন তিনি। বিদ্যুত, জ্বালানি ও অবকাঠামো, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি এবং শিক্ষাখাতে বিভিন্ন ধরনের বৃত্তি, বিনামূল্যে আগামী বছর প্রায় ৩২ কোটি পাঠ্যবই সরবরাহসহ বিভিন্ন খাতের অগ্রগতিও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে হবিগঞ্জে ছিলো সাজসাজ রব। পুরো শহর ছেয়ে ছিলো প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে অসংখ্য তোরণ ও ব্যানার-ফেস্টুনে। জনসভাস্থল নিউ ফিল্ড ছিলো কানায় কানায় পূর্ণ। সকালে বিবিয়ানা বিদ্যুত কেন্দ্রে পৌঁছে সেখানে চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন, চারটি প্রকল্পের ভিত্তিস্থাপন এবং একটি প্রকল্প পরিদর্শন শেষে দুপুরে হবিগঞ্জ আসেন প্রধানমন্ত্রী। নিউ ফিল্ডে জনসভার আগে প্রায় একডজন উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিস্থাপন ও উদ্বোধন করেন তিনি।