খালেদা জিয়ার ফর্মুলা সংবিধানের ভেতরেই

স্টাফ রিপোর্টার: নির্বাচনকালীন সরকার গঠন প্রশ্নে তিন দিনের ব্যবধানে দুটি প্রস্তাব আসার ঘটনাটিই একটি অসামান্য ঘটনা। বাংলাদেশের দ্বন্দ্বপূর্ণ রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি একটি নতুন  মাইলফলক। শেখ হাসিনা বিএনপির সমন্বয়ে একটি সর্বদলীয় সরকার এবং বেগম খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগের সমন্বয়ে একটি নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা দিলেন। বিরোধীদলীয় নেতার প্রস্তাবের অন্তত চারটি বৈশিষ্ট্য বিশেষভাবে তাৎপর্যমণ্ডিত। ১. বিএনপি সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব হতাশাজনক উল্লেখ করলেও সেটি সরাসরি নাকচ করে দেয়নি। ২. বিরোধীদলীয় নেতা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে তার প্রস্তাবিত সরকারটি গঠনের ইচ্ছা ব্যক্ত করলেও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের কথা বলেননি। ৩. বিরোধী দলের নেতা বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে সমঝোতার একটি সূত্র দিয়েছেন। তাত্ত্বিকভাবে খালেদা জিয়ার নির্বাচনকালীন সরকার সংবিধান সংশোধন ছাড়াই গঠন করা যেতে পারে। তবে সে জন্য একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন আইন সংসদকে পাস করতে হবে। ৪. ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের ফল বিএনপি নাকচ করেছিলো। ১০ উপদেষ্টাকে তারা নিরপেক্ষ মনে করেনি। ২০০১ সালের নির্বাচনের ফল আওয়ামী লীগ নাকচ করেছিলো। উপদেষ্টাদের তারা নিরপেক্ষ মনে করেনি।  বাংলাদেশ রাজনীতির টেবিলে দুটি নির্দিষ্ট প্রস্তাব আছে। আপাতত বাংলাদেশের রাজনীতির শূন্যতা কিছুটা হলেও ঘুচলো। কোথা থেকে কে, কীভাবে আলোচনা শুরু করবে সে বিষয়ে আমাদের কোনো ধারণা ছিলো না। এখনকার অবস্থা আর তা নয়। উভয় প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে আলাপ-আলোচনার বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি ও বিরোধী দল উভয়ের প্রস্তাবেই ছাড় দেয়ার একটি নীতিগত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। বিশেষ করে শেখ হাসিনার ভাষণে যে সর্বদলীয় সরকারের প্রধান কে হবেন তা যে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি, সেটা বেগম খালেদা জিয়াও উল্লেখ করেছেন। এর আগে দুয়েকজন সরকারদলীয় নেতা বলেছেনও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান যে শেখ হাসিনাই থাকবেন তা তিনি বলেননি। আপাতত আমি আমার স্বস্তি এতোটুকুতেই সীমাবদ্ধ রাখবো যে বিরোধীদলীয় নেতা একটি প্রাক-নির্বাচনী ভাষণ দিয়েছেন। নির্বাচনকালীন সরকারের ফর্মুলার অংশটুকু ছাড়া বাদবাকিটা আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রচারণায় ব্যয় করেছেন। জাতীয় ঐক্যের সরকারের কথা বলেছেন। খালেদা জিয়া কার্যত স্বীকার করেছেন যে নির্দলীয় সরকার সবচেয়ে কাম্য নয়। সবচেয়ে কাম্য একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন। দু দলের কোনোটিকে বাদ দিয়ে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হতে পারে না।