খাবার চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় ফাহি আটক : পুলিশে সোপর্দ

এবার সামান্যের জন্য ফঁসকে গেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের রাঁধুনি সুফিয়া

 

স্টাফ রিপোর্টার: এবার সামান্যের জন্য ফঁসকে গেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের রাঁধুনি সুফিয়া। তবে রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত খাবার চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় ধরা পড়েছেন রাঁধুনি সুফিয়ার সহকারী মাহফুজা খাতুন ফাহি। ফাহি বলেছেন ওই খাবার সুফিয়ার কথা মতো সুফিয়ার বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। আটকের পর ফাহিকে পুলিশ সোপর্দ করা হয়েছে। আজ ফাহিকে আদালতে সোপর্দ করা হতে পারে।

DSC05112

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের রাঁধুনি সুফিয়া বেগমের বিরুদ্ধে রোগীদের খাবার চুরির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তিনি কয়েকবার চোরাই খাবারসহ হাতেনাতে ধরাও পড়েছেন। তবে তার চতুরতার কাছে সবাই হার মেনে যায়। শোনা যায় সুফিয়ার হাত খুব লম্বা। তিনি পয়সা-কড়ি দিয়ে যেভাবেই হোক সব ম্যানেজ করে ফেলেন। এরই প্রমাণ মেলে সম্প্রতি রোগীর খাবার চুরি করে ধরা পড়ার পর। তাকে জীবননগরে বদলি করা হলেও তিনি সেখানে যোগদান করেননি। আবারও চুয়াডাঙ্গায় থাকার জন্য নেতা ধরে বেড়াচ্ছেন। আর তার এ মন্ত্র কাজেও লাগে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই।

গতকাল রোববার বেলা ২টা। ততক্ষণে হাসপাতালের রোগীদের জন্য দুপুরের খাবার বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। রাঁধুনি সুফিয়া কৌশলে তার সহকারী ফাহির হাতে একটি ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে চলে যান। বলেন তার বাড়িতে পৌঁছে দিতে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে বেরুতেই বিপত্তি। এলাকার কিছু যুবক হাতেনাতে ধরে ফাহিকে সিভিল সার্জন ডা. আজিজুল ইসলামের কাছি নিয়ে যায়। এ সময় বিএমএ সভাপতি মার্টিন হীরক চৌধুরী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এদের বিরুদ্ধে অনেক কিছুই করা হলো। এবার আর ছাড় দেয়া হবে না। সরাসরি আইনে সোপর্দ করা হবে।’ অবশেষে সন্ধ্যায় ফাহিকে (৩৫) চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় সোপর্দ করা হয়। তার বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন হাসপাতালের প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক আবিদ উদ্দিন।

জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার পদ্মবিলা ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামের আজিজের স্ত্রী মাহফুজা খাতুন ফাহি মাস দেড়েক আগে ১ হাজার টাকা মাসিক বেতনের চুক্তিতে রাঁধুনি সুফিয়ার সহকারী হিসেবে রান্নাবাড়ার কাজ করেন। গতকাল দুপুরে রোগীদের খাবার দেয়া শেষে একটি ব্যাগে খাবার ভরেন সুফিয়া। খাবারগুলো তার বাড়িতে পৌঁছে দিতে বলেন ফাহিকে। তারপর সুফিয়ার স্বামীর সাথে সুফিয়া চলে যান। কিছুক্ষণ পরে ব্যাগ হাতে নিয়ে জরুরি বিভাগের সামনে দিয়ে বেরুতে গিয়ে ধরা পড়েন ফাহি। সিভিল সার্জন অফিসে নিয়ে তার কাছে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে পাওয়া যায়, রান্না করা মাংস ৬শ গ্রাম, চাল ১ কেজি ৭শ গ্রাম, কাঁচা মাছ ১ কেজি, আলু, ঝাল, রসুন, পেয়াজ, পাউরুটি বড় এক প্যাকেট ও দেড় কেজি ওজনের ভাত। এ সময় ফাহি সিভিল সার্জনের কাছে অকপটে স্বীকার করেন ‘আমি এই ব্যাগের বহনকারী মাত্র।’ ব্যাগটি সুফিয়া বেগম তার বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার জন্য বলেছিলো। এ ব্যাপারে সুফিয়া বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি মোবাইলফোনে বলেছেন, ‘ও রান্নার কাজ করে, তাই খাবারগুলো ওকে দিয়েছিলাম। সেগুলো সে নিজের বাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলো।

প্রসঙ্গত, গত ১৬ নভেম্বর হাসপাতালের খাবার চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় আবাসিক মেডিকেল অফিসারের হাতে ধরা পড়েন। এ কারণে পরবর্তীতে গত ১৯ নভেম্বর সুফিয়াকে জীবননগরে বদলি করে দেয়া হয়। কিন্তু সুফিয়া সেখানে যোগদান করেননি। শোনা যায়, পয়সা কড়ি দিয়ে ঠিকই ম্যানেজ করে ফেলেন। সচেতন মহলের অভিযোগ, সেদিন সুফিয়া খাবারসহ হাতেনাতে ধরা পড়লো। সেদিন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অথচ, ব্যাগ বহন করতে গিয়ে দরিদ্র ফাহিকে হাজতে যেতে হচ্ছে।