কয়লা ধুলে ময়লা যায় না!

স্টাফ রিপোর্টার: বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে নিকাহ রেজিস্ট্রারদের বিভাগীয় সমাবেশের সপ্তা না পেরুতেই দুজন নিকাহ রেজিস্ট্রারসহ সাতজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজা পেতে হয়েছে। একজন কাজিকে এক মাসের কারাদণ্ডের বোঝা মাথায় নিয়ে বর্তমানে কারাভোগ করতে হচ্ছে। সকলেরই বাল্যবিয়ের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে এ সাজা দেয়া হয়েছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গা শ্রীমন্ত টাউন হলে খুলনা বিভাগীয় কাজিদের বাল্যবিয়ে বিরোধী বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দেশের মধ্যে বাল্যবিয়ের দ্বিতীয় শীর্ষে চুয়াডাঙ্গা জেলা।

এদিকে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে প্রশাসনকে সাথে নিয়ে যতো কর্মকাণ্ডই করুক না কেন- ভাবখানা এমন যেন তাদের যে স্বভাব তা কখনোই যাবে না। প্রবাদ আছে, কয়লা ধুলে ময়লা যায় না, তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে।

দুটি বাল্যবিয়ে পড়ানোর ঘটনায় চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা সদর ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজি) কুতুব উদ্দিনকে পাটাচোরা গ্রামের এক নাবালিকা মেয়ের বিয়ের সহযোগিতার অভিযোগে ২২ ফেব্রুয়ারি ২০ হাজার টাকা জরিমান এবং বিয়ে পড়ানোর অভিযোগে এক মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ইউএনও মো. ফরিদুর রহমান। এছাড়া বাল্যবিয়ে পড়ানোর অভিযোগে এই কাজিকে এর আগেও কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এছাড়া আলমডাঙ্গার গোবিন্দপুর গ্রামের স্কুলছাত্রীকে বাল্যবিয়ে পড়ানোর অভিযোগে ১৮ ফেব্রুয়ারি ১ নং ওয়ার্ডের কাজি মনিরুজ্জামানসহ ছয়জনকে এক হাজার টাকা করে জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ইউএনও আহমেদ কামরুল হাসান।

বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সুশীলসমাজ, সাংবাদিক ও বেসরকারি সংগঠনসমূহ সমাজে ভূমিকা রেখে চলেছে। অথচ অভিভাবক ও কাজিরা বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে অহরহ বাল্যবিয়ের আয়োজন করে সমাজ তথা রাষ্ট্রকে একের পর এক বিতর্কিত করে তুলছে। এর সাথে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে সমাজের নামধারী রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধিদের একটি অংশ। এরা সমাজকে ভালো কিছু দিয়ে না পারলেও কচি-কচি ছেলেমেয়েদেরকে অন্ধকার জগতে প্রবেশ করতে সাহায্য করছে। ফলে সমাজে গড়ে উঠছে এক প্রকার সামাজিক অস্থিরতা। এ অস্থিরতার কারণে প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষকে নাজেহাল হতে হচ্ছে। কারণ কাজিরা জানেন বাল্যবিয়ে পড়ানোর অভিযোগে হয় জরিমান না হয় কিছুদিনের জেল হবে তার। কিন্তু তারপর জেল থেকে বেড়িয়ে এসে আবারও সেই আগের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। যেহেতু তাদের কাজির লাইসেন্স বাতিলের ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ের। সেজন্য স্থানীয় প্রশাসনকে একেবারেই তোয়াক্কা করছেন না কাজিরা। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করতে হলে লাইসেন্স বাতিলের ক্ষমতা স্থানীয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে। নচেৎ এ সমস্যা সমস্যাই রয়ে যাবে। সমাধান কখনই সম্ভব হবে না। কারণ মন্ত্রণালয় থেকে এ কাজটি সম্পন্ন হওয়া অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। বিষয়টি সমাধানের জন্য সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। যা এখন সময়ের দাবি।