ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের খেলাপি না করার নির্দেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

স্টাফ রিপোর্টার: চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। দেশের বিনিয়োগ ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় অধিকাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীরা সঙ্কটময় পরিস্থিতি উত্তরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা চেয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের খেলাপি না করার নির্দেশ দিয়েছে। একইভাবে ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ সুবিধা দিতেও ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে। গতকাল সোমবার দুদফায় সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈঠক করে।

বৈঠক শেষে ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী জানান, রাজনৈতিক অস্থিরতায় যেসব ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শুধু তারাই এ সুবিধা পাবে। ব্যবসায়ীরা ঢালাওভাবে কোনো সুবিধা পাবেন না। ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ এবং বিলম্বে ঋণ খেলাপিসহ বর্তমান কাঠামো ও নীতিমালায় কোনো পরিবর্তন না এনেই ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো খেলাপি হতে যাচ্ছে এমন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের ঋণ পুনঃতফশিল এবং বিলম্বে ঋণ খেলাপির বিষয়ে ব্যাংকারদের সাথে আলোচনা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা যদি ব্যাংকের মাধ্যমে আসে তবে তা বিবেচনা করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ছাড়া অন্য কেউ এ সুবিধা পাবে না। কতো দিনের জন্য এ ছাড় দেয়া হবে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিন বা ছয় মাস হতে পারে। তবে তা রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।

সভা শেষে এবিবির সভাপতি ও এনসিসি ব্যাংকের চেয়াম্যান নুরুল আমিন বলেন, বৈঠকে চলমান অস্থিরতায় পরিবহন, আবাসন ও পোশাক শিল্পসহ সব ক্ষেত্রেই যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা (ব্যাংকাররা) আমাদের সমস্যা তুলে ধরেছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দু-একদিনের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবে। তিনি আরও বলেন, ঋণ পুনঃশ্রেণীকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক শর্ত শিথিল করার পরামর্শ দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, টানা অবরোধে ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নামায় বিকেএমইএ, বিটিএমএ, সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভারশন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, সিরামিক্স শিল্প মালিক সমিতি, চট্টগ্রাম চেম্বারসহ অধিকাংশ সংগঠন সরকারি সহায়তা চেয়েছে। তারা বলছেন, টানা হরতাল ও অবরোধে ব্যবসা-বাণিজ্য অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে।

উল্লেখ্য, গত সপ্তায় পোশাক খাতের রফতানি উন্নয়ন তহবিলের সুদ হার কমানো হয়েছে। এসএমই খাতের ঋণে ডাউনপেমেন্ট ছাড়া পুনঃতফসিলিকরণ, অশ্রেণিকৃত ঋণ (স্ট্যান্ডার্ড ও এসএমএ) পুনর্গঠনের মেয়াদকাল যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ, প্রয়োজনে ঋণ ব্লক হিসেবে স্থানান্তর এবং সুদ হার নির্ধারণে নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার জারি: এদিকে গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অর্থায়ন নির্বিঘ্ন রাখার নির্দেশনা দিয়ে একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি দেশে বিরাজমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে কৃষি ও শিল্প খাতের উপকরণ ও পণ্যাদির স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্নিত হয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এতে স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে সব খাতের (কৃষি ও এসএমই ছাড়া) প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাদের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখা ও ঋণ আদায় নিশ্চিতকল্পে প্রদত্ত ঋণ সুবিধা চলমান রাখার জন্য ডাউন পেমেন্ট গ্রহণ ও মেয়াদকাল নিরূপণের বিষয়টি ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে বিবেচনা করা এবং ঋণ পুনর্গঠনের মেয়াদকাল যৌক্তি পর্যায়ে নির্ধারণ করা যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি গ্রহণ করতে হবে।
তাছাড়া কৃষি খাতের ক্ষেত্রেও এসএমই খাতের মতো ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতেই ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের জন্য ব্যাংকগুলো নিজেরই ডাউন পেমেন্ট ও পরিশোধের মেয়াদকাল যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করতে পারবে। এ ব্যবস্থা ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।