ক্লিনিকে যাওয়ায় কাল হলো লিপির : রক্ত দিয়েই মৃত্যু

দামুড়হুদা প্রাইভেট ক্লিনিকের ডা. জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অপচিকিৎসার অভিযোগ

 

স্টাফ রিপোর্টার: দামুড়হুদা প্রাইভেট ক্লিনিকে অপচিকিৎসার কারণে লিপি খাতুন (২৫) নামের এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে চিকিৎসা দেয়ার পর সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়। ১৮ দিনের কোলের সন্তান রেখে মারা যাওয়ায় এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে অনেকেই। এ ছাড়া ওই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে সচেতন মহল মনে করে। দামুড়হুদা প্রাইভেট ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারীদেরঅন্যতম অংশীদার ডা. জাহাঙ্গীর আলম (উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার) নিজেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এতেএলাকার মানুষের মনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলার বদনপুর গ্রামের হারুন বিশ্বাসের মেয়ে লিপি খাতুন দর্শনা আকন্দবাড়িয়ার ইন্তাজুলের স্ত্রী। তাদের দাম্পত্য জীবনে রয়েছে রিমা ও রিনি নামের ২ সন্তান। রিমার বয়স ৫ বছর আর রিনির বয়স মাত্র ১৮ দিন। মা লিপি খাতুন গত ৯ জুন সকালে দামুড়হুদা প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি হন। এখানে সিজারিয়ানের মাধ্যমে কন্যা সন্তান প্রসব করেন। সদ্য ভূমিষ্ঠ রিনিকে নিয়ে মা লিপি খাতুন গত ১৪ জুন ওঠেন বাপের বাড়ি বদনপুর গ্রামে। গত কয়েকদিন আগে লিপির দুপা সামান্য ফোলে। গতকাল বিকেল ৩টার দিকে দামুড়হুদা ব্রিজপাড়ার বাসিন্দা খালা সালিমা খাতুনকে সাথে নিয়ে আবার লিপি আসেন দামুড়হুদা প্রাইভেট ক্লিনিকের ডা. জাহাঙ্গীর আলমের কাছে। লিপির শারীরিক অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে রক্ত স্বল্পতা বলে জাহাঙ্গীর নিজের কৌশলে স্থানীয় এক যুবকের কাছে এ পজেটিভ রক্ত সংগ্রহ করে লিপি খাতুনের শরীরে দেন।এ রক্তের চার ভাগের ১ ভাগেরও কম রক্ত লিপির শরীরে প্রবেশ করলে তিনি অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন। অবস্থা বেগতিক বুঝে ডাক্তার জাহাঙ্গীর আলম তার ক্লিনিকের আয়া আয়েশাকে সাথে দিয়ে রোগীকে দ্রুত চুয়াডাঙ্গায় স্থানান্তর করেন। করিমনযোগে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু ঘটে। তার মুত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এলাকার জনগণ উত্তেজিত হয়ে ওই ক্লিনিকের সামনে এসে ডাক্তার জাহাঙ্গীরকে খুঁজতে থাকে লোকজন। দামুড়হুদা থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

অপচিকিৎসায় মারা যাওয়া লিপির নানী অভিযোগ করে বলেন,ওই ডাক্তার আমার নাতিকে মেরে ফেলেছে আমি তা দেখেছি। ওই ডাক্তার আমাদের বললো রক্তের স্বল্পতা, এই রোগীর রক্ত লাগবে এ কারণে আড়াই শ টাকা দাও। আমরা ওনাকে আড়াই শ টাকা দিলাম। উনি আমার নাতির রক্ত নিলো তারপর কার কার কাছে ফোন করে ২৫/২৬ বছর বয়সের এক যুবককে ডেকে আনলো। ওই যুবকের কাছে ১ ব্যাগ রক্ত নিয়ে যেই আমার নাতির শরীরে দিতে লাগলো কিছুক্ষণ পর নাতি হাঁসফাঁস করতে লাগলো। আর বলতে লাগলো তোরা আমার কী দিলি দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লিপির খালা সালিমা খাতুন কড়া অভিযোগ করে বলেন মেয়ে আমার একদম সুস্থ মানুষ। কিন্তু ওই ডাক্তার ওর শরীরে কী রক্ত দিয়ে ওকে এভাবে খুন করলো। ডাক্তার যেই ওর শরীরে রক্ত দিলো আর ছটফট ছটফট করতে লাগলো।তখন ডাক্তার রক্ত দেয়া বন্ধ করে ৬০ টাকা নিয়ে ফের একটি ইনজেকশন দিলো। মেয়ে মরে গেলো বলে আমি চিল্লাতে লাগলাম। তখন আমাদের বললো তাড়াতাড়ি চুয়াডাঙ্গায় নিয়ে যান। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীকে নেয়া হলে কর্তব্য চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ডা. জাহাঙ্গীর আলমের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, তিনি বলেন ওদের অভিযোগ মিথ্যা। কারণ এ রোগী অ্যাজমা রোগে ভুগছিলো। এ জন্য ওর শ্বাস কষ্ট হচ্ছিলো। তিনি আরো বলেন, আমি ওই রোগীর শরীরে রক্ত দিইনি।