ক্লাস পরীক্ষা চালুর দাবিতে ইবি শিক্ষার্থীদের প্রতীকী বিষপান ও গলায় ফাঁস

প্রশাসনের আশ্বাসে আন্দোলন সাময়িক স্থগিত

 

ইবি প্রতিনিধি: ক্লাস পরীক্ষা চালুর দাবিতে আন্দোলনের তৃতীয় দিনে ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। অতিদ্রুত ক্লাস পরীক্ষা চালুসহ ক্যাম্পাসের সব পরিবেশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক অবরোধ করে সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রতীকী বিষপান ও গলায় ফাঁস পরিয়ে দেন। একই সাথে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চলাচলে বাধা দেন। তবে আগামী ৪ এপ্রিলের মধ্যে ক্লাস পরীক্ষা শুরু হবে-বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ আশ্বাসে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসচলাচল স্বাভাবিক করে দেন এবং আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করেন।

IU Pic-2

বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ক্লাস পরীক্ষা চালুর দাবিতে শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক অবরোধ করে শতাধিক শিক্ষার্থী সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। কর্মসূচি চলাকালে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্লোগান ও দেশাত্মবোধক গানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক মুখরিত হয়ে ওঠে। বেলা ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সেখানে অবস্থান করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসের কোনো গাড়ি বের হতে দেননি। এমনকি দুপুর দেড়টার দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তাদের বহনকারী একটি গাড়ি প্রধান ফটকে এসে পৌঁছুলে শিক্ষার্থী গাড়িটি প্রধান ফটক দিয়ে বের হতে দেয়নি। পরে গাড়িটি বিশ্ববিদ্যালয়ের থানা গেট দিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করে। আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে প্রতীকী বিষপান ও গলায় ফাঁস লাগান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. ত.ম লোকমান হাকিম ও ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন কয়েক দফায় শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললেও তারা প্রধান ফটক অবরোধ করে অবস্থান করতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা জানান, কবে থেকে ক্লাস পরীক্ষা শুরু হবে-বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে তারা নির্দিষ্ট তারিখ জানতে পারলে তারপরই কেবল প্রধান ফটক ছেড়ে দেবেন। অন্যথায় তারা সেখানে অবস্থান করতে থাকবেন। দুপুর সোয়া দুইটার দিকে প্রক্টর ড. ত.ম লোকমান হাকিম ও ছাত্র উপদেষ্টা ড. আনোয়ার হোসেন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। এ সময় তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের সাথে তাদের কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির বৈঠকে আগামী ৪ এপ্রিলের মধ্যে ক্লাস পরীক্ষা শুরু করার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অতিদ্রুত সিন্ডিকেট ডেকে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। প্রক্টরের আশ্বাসে দুপুর আড়াইটার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটক ফাঁকা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক করে দেন। ৪ এপ্রিলের মধ্যে ক্লাস পরীক্ষা শুরু না হলে ফের আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দেন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মনজুর হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আগামী ৪ এপ্রিলের মধ্যে ক্লাস পরীক্ষা চালু হবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা ৪ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। এ সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় সচল না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যাবো।

জানা গেছে, ছাত্র নিহতের জের ধরে গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। মাঝে ৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও একদিন পরই আবার বন্ধ করে দেয়া হয়। ক্লাস পরীক্ষা চালুর দাবিতে শিক্ষার্থীরা গত ১৪ মার্চ প্রথম ক্যাম্পাসে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। মানববন্ধন কর্মসূচিতে ক্যাম্পাস সচলের জন্য ১৮ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়। এর আগে শিক্ষার্থীরা ক্লাস পরীক্ষা চালুর দাবিতে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেন। হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগের ছাত্রী সোনিয়া সুলতানা বলেন, আমরা আজকে (শনিবার) প্রতীকী বিষপান ও গলায় ফাঁস লাগিয়েছি। এরপরও কর্তৃপক্ষের বিবেক জাগ্রত না হলে আমাদের আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না।

বাংলা বিভাগের ছাত্র বোরহান উদ্দিন আহমেদ বলেন, ঠিক কি কারণে ক্লাস পরীক্ষা হচ্ছে না এর কারণ আমরা জানি না। এর কোনো যৌক্তিক কারণ আছে বলেও আমরা মনে করি না। ক্লাস পরীক্ষা না হওয়ার কারণে সেশনজট তো বাড়ছেই। আমরা প্রতিযোগিতামূলক চাকরির পরীক্ষাগুলোতে অংশগ্রহণ করতে পারছি না।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার বলেন, ক্যাম্পাসের সব কার্যক্রম যাতে দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে যায় সেজন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। অতিদ্রুত জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডাকা হবে। আশা করি আগামী ৪ এপ্রিলের মধ্যে ক্যাম্পাসের সব কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়ে যাবে।